1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মাংস নিয়ে তুলকালাম

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা
৩০ এপ্রিল ২০১৮

ভাগাড়ে ফেলে যাওয়া পশুমাংস নাকি চালান যায় শহরের বহু রেস্তোরাঁয়৷ হঠাৎ ধরা পড়া এই কেলেঙ্কারি নিয়ে ব্যতিব্যস্ত কলকাতা৷ কিন্তু সমস্যা সত্যিই কতটা গভীর?‌

https://p.dw.com/p/2wuNV
ছবি: Reuters

গা গুলিয়ে ওঠার মতো খবর৷ ভাগাড়ে ফেলে যাওয়া কুকুর, বেড়াল ও অন্যান্য ‘‌অখাদ্য’ প্রাণির পচা মাংস নাকি রাসায়নিকে শোধন করে চালান যায় শহর-গঞ্জের রেস্তোরাঁয়৷ বলা বাহুল্য যে এই দূষিত মাংস অনেক সস্তা৷ বিভিন্ন মাংসের পদে মেশানো হয় এই ভাগাড়ের মাংস৷ শোনার পর থেকেই ওয়াক তুলছে গোটা পশ্চিমবঙ্গ৷ এবং এই ভাগাড়ের মাংস ব্যবসার যে আয়তন আন্দাজ করা যাচ্ছে, বেআইনি মাংস কারখানায় হানা দিয়ে যে পরিমাণ মজুত মাংসের হদিস পাওয়া গেছে, তা রীতিমত উদ্বেগজনক৷ যে ধরনের ক্ষতিকর রাসায়নিক দিয়ে এই মাংসের প্রক্রিয়াকরণ হয়, তা-ও মানুষের শরীরকে দূষিত করতে পারে, বিভিন্ন রোগ-ব্যাধির কারণ হতে পারে৷ সরকারের তরফ থেকে যদিও আশ্বস্ত করা হয়েছে, যে কলকাতা শহরে এমন কোনো মাংসের হদিস কোনো রেস্তোরাঁ থেকে পাওয়া যায়নি৷ কিন্তু লোকে নিশ্চিন্ত হতে পারছে না৷ অবস্থা এমনই, যে রেস্তোরাঁয় ভিড় কমেছে, বেড়েছে কাঁচা মাছের বাজারে৷

যেসব রেস্তোরাঁর ব্যবসার পরিমাণ বেশি সেখানে এমন মাংস আসার সম্ভাবনা নেই: শিলাদিত্য চৌধুরি

কিন্তু পরিস্থিতি কতটা সঙ্গিন?‌ ভাগাড়ের পচা মাংস হোটেল-রেস্তোরাঁর হেঁসেলে পৌঁছে যাওয়ার সম্ভাবনা কতটা? ডয়চে ভেলের তরফ থেকে প্রশ্ন রাখা হয়েছিল কলকাতার প্রথম সারির সুখাদ্য ব্যবসায়ীদের অন্যতম শিলাদিত্য চৌধুরির কাছে৷ ‘‌চাওম্যান’ এবং ‘‌অওধ ১৫৯০’ নামে দু'টি রেস্তোরাঁ চেন চালান শিলাদিত্য৷ তিনি জানালেন, যেসব রেস্তোরাঁর ব্যবসার পরিমাণ বেশি, বিশেষত তাঁদের মতো চেন রেস্তোরাঁ, একাধিক খাওয়ার জায়গা যার আওতায়, সেখানে এমন মাংস আসার সম্ভাবনা নেই৷ ভারতীয়, বা বাঙালি রান্নার ক্ষেত্রে আরও নেই, কারণ সেখানে নির্দিষ্ট পদের ওপর নির্ভর করে মাংসের টুকরো কেমন হবে৷ অর্থাৎ বিরিয়ানির জন্যে এক রকম, চাঁপের জন্যে আরেক রকম, কাবাব বানাতে যে মাংসের কিমা লাগে, তারও নানা রকম কায়দা৷ কোনো বড় হোটেল বা রেস্তোরাঁ এ জন্য বাজারের কসাইদের ওপর ভরসা করে না, বরং বাজার থেকে জবাই করা, ছাল ছাড়ানো পশুদেহটি আস্ত কিনে এনে, নিজেদের প্রয়োজন মতো কাটিয়ে নেয়৷ কাজেই সেখানে ভাগাড়ের মাংস কেনার প্রশ্নই ওঠে না৷ এমনকি ছোট রেস্তোরাঁ বা রোলের দোকানকেও সন্দেহের বাইরে রাখতে চান শিলাদিত্য৷ তবে তাঁর মনে হয়, প্রসেসড মিট যা বিক্রি হয়, অর্থাৎ প্যাকেটবন্দী, হিমাঙ্কের নীচে সংরক্ষিত সসেজ, সালামি, ইত্যাদি, সেখানে এই ধরনের গোঁজামিলের বরং সুযোগ এবং সম্ভাবনা আছে৷

গরুর মাংস, শুয়োরের মাংস - এ সব নিয়ে ধর্মীয় ঝগড়া এবার শেষ: ডা. লাহিড়ি

এই প্রসঙ্গে এটাও জানিয়ে রাখা দরকার, যে বাজারে আরও একটা গুজব চালু হয়েছে — কিছু বড় মাংস সংস্থা, যারা প্রসেসড মিটের বহু কোটি টাকার ব্যবসা করে, তারাই এমন ভুয়ো খবর প্রচার করেছে৷ মূলত যাতে স্থানীয় মাংস বিক্রেতাদের ওপর ক্রেতার ভরসা কমে, তাদের ব্যবসা আরও ফুলে ফেঁপে ওঠে৷ কিন্তু এই গুজবের কোনো ভিত্তি নেই, বরং খারাপ মাংস ব্যবহারের সন্দেহটা তাদের ওপর গিয়েই পড়ছে৷ আরও একটি গুজব, যা নিয়ে বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়ায় খুব হইচই হচ্ছে, যে বিজেপি চায় না দেশে আর কেউ আমিষ খাক৷ তাদের হিন্দুত্ববাদী অ্যাজেন্ডা সবাইকে বিশুদ্ধ শাকাহারী করে তোলার৷ ফলে পশ্চিমবাংলায় এই অপপ্রচার৷ তবে এ খবরেরও কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র নেই৷

যদিও এই ভাগাড়ের মাংসের খবরে আতঙ্কিত বেশ কিছু লোককে দেখা যাচ্ছে এর মধ্যেই ফেসবুকে ঘোষণা করতে, যে তাঁরা মাংস খাওয়া ছেড়ে দিচ্ছেন৷ তবে চমৎকার বললেন বিশিষ্ট চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. কৌশিক লাহিড়ি৷ তাঁর প্রাথমিক বক্তব্য, চিকিৎসক হিসেবে তিনি এ প্রসঙ্গে কিছুই বলার অধিকারী নন, যেহেতু এতদিনে একজন লোকও দূষিত মাংস খাওয়ার দরুণ ত্বকের কোনো সমস্যা নিয়ে তাঁর কাছে চিকিৎসা করাতে আসেননি৷ বরং তাঁর অবাকই লাগছে যে এত লোক ভাগাড়ের পচা মাংস খেয়ে হজম করে ফেলল!‌ কারও কিছু হলো না!‌ কিন্তু ডা. লাহিড়ির মতে, তার থেকেও বড় কথা, গরুর মাংস, শুয়োরের মাংস — এ সব নিয়ে ধর্মীয় ঝগড়া এবার শেষ৷ কারণ সবাই সব প্রাণির মাংস অজান্তে খেয়ে ফেলেছে এবং তাদের সবার জাত খোয়া গেছে৷ এটা নিশ্চিত গোটা সমস্যার একটা দারুণ ভালো দিক৷