1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

প্রকৃতি থেকে শিক্ষা

২১ জুন ২০১৩

‘স্পাইডার ওয়েব' প্রকৃতির অভিনব এক সৃষ্টি৷ কৃত্রিম উপায়ে সেই জাল তৈরি করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে তার প্রয়োগ করতে চান জার্মান বিজ্ঞানীরা৷ উদ্দেশ্য সফল হলে বায়োনিক্সের জগতে নতুন বিপ্লব আসতে পারে৷

https://p.dw.com/p/18uD0
ছবি: picture-alliance/dpa

মাকড়সার জাল ইস্পাতের চেয়েও মজবুত, অথচ রবারের থেকেও নমনীয়৷ কিন্তু মাকড়সা কীভাবে এমন অসাধারণ জাল বোনে? সেই আশির দশক থেকেই বিজ্ঞানীরা এই রহস্য ভেদ করার চেষ্টা চালাচ্ছেন৷ কৃত্রিম উপায়ে এমন জাল বোনার স্বপ্নও দেখছেন তাঁরা৷ বায়োকেমিস্ট টোমাস শাইবেল ও তাঁর সহকর্মীরা একই প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন৷ তিনি বললেন, ‘‘ব্যাকটেরিয়ার সাহায্যে মাকড়সার জাল তৈরি করতে অনেকে এই চেষ্টা চালিয়েছে, অনেক বড় কোম্পানি প্রচুর টাকা ঢেলেছে৷ কিন্তু দেখা গাছে, এতে মোটেই কাজ হয় না৷ ব্যাকটেরিয়ার ‘প্রোগ্রাম' বদলে তাকে দিয়ে বিশাল পরিমাণ রেশম তৈরি করানো যায় না৷''

কিন্তু টোমাস শাইবেল সেই অসাধ্য সাধন করেছেন৷ মাকড়সার জিন রয়েছে – এমন ব্যাকটেরিয়াকে তিনি বিশেষভাবে পরিবর্তন করেছেন, যাতে তারা মাকড়সার জালের প্রোটিন তৈরি করতে পারে৷ কৃত্রিম মাকড়সার জাল তৈরির উপাদান সেটি৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা ব্যাকটেরিয়াগুলিকে রেশম মলিকিউল তৈরির নির্দেশ দিয়েছি৷ রাসায়নিক এক প্রক্রিয়ার সাহায্যে এটা করা যাচ্ছে, শর্করার এক দ্রবণের মাধ্যমে যা শুরু করা হচ্ছে৷ ইঞ্জেকশন দিয়ে আমি তা ঢুকিয়ে দিচ্ছি৷''

Spinnennetz Spinne
মাকড়সার জাল থেকে অনেক কিছু শেখার আছেছবি: Fotilia/Alexander Maier

তরল এই ব্যাকটেরিয়া প্রথম পদক্ষেপ মাত্র৷ মাকড়সার জাল তৈরি হতে আরও কয়েক ঘণ্টা বাকি৷ শাইবেল-এর গবেষণাগারে আপাতত তলতলে এক পদার্থ সৃষ্টি হয়েছে৷ তিনি বললেন, ‘‘ব্যাকটেরিয়াগুলি রেশমের মলিকিউল তৈরি করেছে৷ আমরা তাতে লবণ মিশিয়েছি৷ মাকড়সাও ঠিক তাই করে৷ জালের সুতা তৈরির পথে এটাই প্রথম গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ৷''

আনিয়েলা হাইডেব্রেশট বিশেষ যন্ত্রের মধ্যে রেশমের প্রোটিন ঢুকিয়ে দেন৷ এই যন্ত্র মাকড়সার জালের উপাদান বিশেষ তরল ভরা পাত্রে সমানভাবে পাম্প করে৷ সামান্য কয়েক মিলিলিটার তরল প্রোটিন দিয়েই গবেষকরা ২০ মিটার পর্যন্ত মাকড়সার জাল তৈরি করতে পারেন৷

এই হলো মানুষের হাতে তৈরি মাকড়সার জাল৷ প্রকৃতি থেকে নকল করে তৈরি৷ বায়োনিক্সের ক্ষেত্রে এটা একটা বিশাল সাফল্য৷ শাইবেল বললেন, ‘‘আসলে নিখুঁত জাল বলে কিছু হয় না৷ যেমন বিশেষ কাজের জন্য এই সুতা তৈরি করা হয়েছে৷ মাকড়সাও ঠিক তাই করে৷ গোটা জালের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের সুতা থাকে, যার গুণাগুণ আলাদা৷ আমরাও সেটা চাই৷ বিশেষ কাজের জন্য বিশেষ সুতা৷''

তবে বিজ্ঞানীরা শুধু সুতা নিয়ে কাজ করছেন না৷ তাঁরা সম্প্রতি কসমেটিকস-ও তৈরি করছেন৷ মাকড়সার জালের প্রোটিন ক্রিমের ঘনত্ব বদলে দেয়, যাতে তা আরও হাল্কা হয় ও তাতে কম ফ্যাট থাকে৷ মাকড়সার কৃত্রিম জাল মাথার চুলকেও আরও চকচকে করে তোলে৷

ওষুধের মধ্যেও এমন জাল ব্যবহারের প্রস্তুতি চলছে৷ যেমন এই সিলিকন ইমপ্লান্ট-এর উপর চিকন স্তর রয়েছে, যা মাকড়সার জাল দিয়ে তৈরি৷ মানুষের শরীর এই রেশমের জালকে সহজেই মেনে নেয়৷ ফলে ইমপ্লান্ট সহ্য না করতে পারার ঝুঁকি কমে যায়৷ 

মাকড়সা তার কাজ করে দেখিয়ে দিয়েছে৷ বিজ্ঞানীরা সেই রহস্যের সমাধান করেছেন৷ তাঁরা এমন এক কৃত্রিম পদার্থ তৈরি করেছেন, যা শিগগির অন্যান্য ফাইবার বা তন্তুর সাথে প্রতিযোগিতায় নামতে পারে৷

এসবি/ডিজি