মাদ্রাসায় জাতীয় সংগীত প্রতিযোগিতা
২৮ মার্চ ২০১৮রিট করেছিলেন নুরুল ইসলাম নামে এক মাদ্রাসা শিক্ষক এবং দুই অভিভাবক৷ কিন্তু হাইকোর্ট ওই রিটটি ‘উত্থাপিত হয়নি' মর্মে খারিজ করে দিয়েছেন৷ ফলে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের জাতীয় সংগীত গাইতে হবে এবং প্রতিযোগিতা আয়োজনের আদেশও তাদের ক্ষেত্রে কার্যকর থাকবে৷
মঙ্গলবার (২৭ মার্চ) হাইকোর্টের বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি মো. আতাউর রহমান খানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈতবেঞ্চে শুনানির সময় রিটকারী আইনজীবীর উদ্দেশে আদালত বলেন, ‘‘আপনি দেখান, পবিত্র কোরআনের কোথায় আছে জাতীয় সংগীত গাওয়া যাবে না? পবিত্র কোরআনের কোথাও নেই যে, জাতীয় সংগীত গাওয়া যাবে না৷ আগে তো মাদ্রাসার সিলেবাসে অংক, ইংরেজি, বিজ্ঞান ছিল না৷ যুগের চাহিদা অনুযায়ী সেগুলো অন্তর্ভুক্ত হয়েছে৷''
আদালত আরো বলেন, ‘‘স্কুলের শিক্ষার্থীরা জাতীয় সংগীত গাইবে আর মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা গাইবে না, এটা তো হতে পারে না৷ মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা দেশের বাইরে গেলে যখন বিদেশিরা জাতীয় সংগীতের বিষয় জানতে চাইবে, তখন তারা কী জবাব দেবে?''
আদালতের মন্তব্য, ‘‘ব্রিটিশ আমলে আমরা ইংরেজি না শিখে পিছিয়ে পড়েছিলাম৷ একইভাবে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের পিছিয়ে দিতে এই ধরনের রিট করা হয়েছে৷''
রিটকারীর পক্ষে শুনানি করেন বিএনপি নেতা এবং আইনজীবী তৈমূর আলম খন্দকার৷ বুধবার ডয়চে ভেলেকে তিনি অবশ্য বলেন, ‘‘জাতীয় সংগীত গাওয়া ইসলামবিরোধী এই বিচেনায় রিটটি করা হয়নি৷ রিটটি করা হয়েছিল আইন ও সংবিধান বিবেচনা করে৷''
তিনি দাবি করেন, ‘‘ন্যাশনাল অ্যানথেম রুলের ৫(২) ধারায় স্কুলের কথা বলা আছে৷ অর্ডিন্যান্স ১৯৮৩ এবং ১৯৭৮-এ স্কুলের ডেফিনেশন দেয়া আছে৷ সেই ডেফিনেশনে বলা হয়েছে এনি এডুকেশন্যাল ইন্সটিটিউশন এক্সক্লুডিং মাদ্রাসা৷ আর মাদ্রাসার ডেফিনেশনে বলা আছে, ইসলামি ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান৷ সংবিধানের আর্টিকেল ৪১-এ বলা আছে যার যার ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান তার তার মতো চলতে পারবে৷ তাই মাদ্রাসায় জাতীয় সংগীত গাওয়া বাধ্যতামূলক করা আইনে কাভার করে না– এটাই আমরা রিটে বলেছি৷ জাতীয় সংগীতের বিরুদ্ধে আমাদের কোনো কথা বা অবস্থান নাই৷ আমরা আইনগত বিষয়টি নিয়ে রিট করেছি৷ আদালত আমাদের রিট লিগ্যাল গ্রাউন্ডে খারিজ করেননি৷ আদালত বলেছেন, এখন মাদ্রাসায় ধর্মীয় বিষয় ছাড়াও বিজ্ঞান, ইরেজি ও বাংলাসহ নানা বিষয় পড়ানো হয়৷ তাই এখন আর আগের অর্ডিন্যান্স ব্যাখ্যা আমলে না নিয়ে ‘উত্থাপিত হয়নি' মর্মে খারিজ করে দিয়েছেন৷''
তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘রিটকারী এখন প্রতিকার পেতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন বরবেন৷ আমিও আইনজীবী হিসেবে তাঁদের সেই পরামর্শ দিয়েছি৷''
রিটকারী কুড়িগ্রামের সুখদেব ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ নুরুল ইসলাম মিয়া ও ঢাকার কদমতলা মাদ্রাসার দুই শিক্ষার্থীর অভিভাবকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের পাওয়া যায়নি৷ তবে ঢাকার কদমতলা দারুল ইসলাম আলিয়া মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা মুহাম্মদ মাহবুবুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমাদের আলিয়া মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা মাদ্রাসায় জাতীয় সংগীত গায়৷ এতে আমরা অসুবিধার কিছু দেখি না৷ তবে কওমি মাদ্রাসার চিত্র ভিন্ন হতে পারে৷ আমরা বাদ্যযন্ত্র ছাড়াই জাতীয় সংগীত গাই৷ আর জাতীয় সংগীতে ইসলামবিরোধী কিছু নাই৷ দেশপ্রেমের কথা আছে৷ বাদ্যযন্ত্রের বিষয় থাকলে হয়তো আপত্তির জায়গা থাকতো৷''
তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘যাঁরা রিট করেছেন, তাঁরাই বলতে পারবেন কেন তাঁরা জাতীয় সংগীতের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলেন৷ আমার কথা হলো, আমরা স্বাধীন হয়েছি, স্বাধীন দেশে বসবাস করি৷ ইসলামের সঙ্গে সাংঘর্ষিক না হলে তার বিরুদ্ধে আমাদের কোনো কথা নাই৷''
কওমী শিক্ষাসনদ বাস্তবান পরিষদের আহ্বায়ক মুফতি আবুল কাসেম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা তো এখন বোর্ডভুক্ত, তাই আমাদের এখন জাতীয় সংগীত গাইতে হবে৷ বোর্ডের যে নির্দেশ আসবে তা মানতে হবে৷ আর জাতীয় সংগীতের শব্দগুলো যদি খারাপ না হয়, তাহলে দোষের কী আছে?''
মুফতি আবুল কাসেশ আরো বলেন, ‘‘কওমি মাদ্রাসায় জাতীয় সংগীত গাওয়া হয় না৷ অনেক আগে থেকেই প্রচলন নাই, তাই আমরাও গাই না৷ কিন্তু এখন বোর্ড নির্দেশ দিলে তো গাইতে হবে৷''