মানুষ আর রোবটের মধ্যে পার্থক্য কমিয়ে আনার চেষ্টা
২৩ মে ২০১১রোবট, শুনলেই মনে হয় মানুষের মত দেখতে কিন্তু ধাতব কোন শরীর৷ যাকে কোন কিছু বলা মাত্রই দ্রুত তা করে দেখাচ্ছে৷ কণ্ঠস্বরে যান্ত্রিকতা, দুই চোখের জায়গায় দুটি লাল বাতি এমন আর কি৷ বিভিন্ন ধরণের ও আকারের রোবটও কিন্তু রয়েছে৷ তবে দিন দিন সেই রোবটকে মানুষের কাছাকাছি আনার চেষ্টা করা হচ্ছে৷ এইজন্য রোবটকে কেবল মানুষের মত শারীরিক আকারই নয়, মানুষের সঙ্গে যোগাযোগের সামর্থ্য দেওয়ারও চেষ্টা করছেন বিজ্ঞানীরা৷ তারা চাচ্ছেন রোবটের ভেতর মানুষের মত বুদ্ধিমত্তা প্রবেশ করাতে৷
জার্মানির নামকরা গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিলেফেল্ড কগনিটিভ ইন্টারেকটিভ টেকনোলজি সেন্টার অব এক্সেলেন্স বা সংক্ষেপে সাইটেক৷ আরও একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিসার্চ ইন্সটিটিউট ফর কগনিশন অ্যান্ড রোবোটিক্স বা সংক্ষেপে কোর-ল্যাব৷ এই দুই প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানীরা চেষ্টা করছেন রোবটকে কীভাবে আরও মানুষের কাছাকাছি নিয়ে আসা যায়৷ এজন্য যে জিনিষটি সবার আগে প্রয়োজন তা হলো অনুভূতি৷
আমরা পরস্পরের সঙ্গে যেভাবে যোগাযোগ করে থাকি তার মূল ভিত্তি হলো আমাদের নিজেদের অনুভূতি প্রকাশ এবং অন্যের অনুভূতি বোঝার ক্ষমতা৷ জার্মান বিজ্ঞানী হেলগে রিটারের নেতৃত্বে একদল গবেষক এজন্য নতুন মডেলের রোবট তৈরি করেছেন যার নাম দিয়েছেন ‘ফ্লোবি'৷ রোবট নিয়ে গবেষণার উদ্দেশ্যের ব্যাপারে বিজ্ঞানী হেলগে রিটারের কথা, ‘‘তাদের দরকার নানা ধরণের সক্ষমতা৷ রোবটকে তার আশেপাশের অবস্থা এবং আমি কী চাচ্ছি তা তাকে বুঝতে হবে৷ আমরা এমন এক ধরণের রোবট নিয়ে কাজ করছি যে বুঝতে পারবে যে আমি তাড়াহুড়োর মধ্যে রয়েছি কিনা৷ আসলে আমরা এমন মডেলের রোবট তৈরি করতে চাই যে একজন ভালো বাটলার বা খানসামা হতে পারবে৷''
শেখা
নতুন এই রোবটকে নিয়ে নানা ধরণের পরীক্ষা চালাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা৷ রোবটটি একটি বয়াম ধরতে এবং সেটির মুখ খুলতে পারে কিনা সেটি তারা পরীক্ষা করে দেখছেন৷ খুব ধীরে হলেও শেষ পর্যন্ত রোবটটি তা করতে সক্ষম হলো৷ রোবটের সামর্থ্যের ব্যাপারে বিজ্ঞানী রিটারের পর্যবেক্ষণ, ‘‘আমরা জানি যে একটি শিশু তার হাতটিকে ব্যবহার করা শিখতে কত সময় নেয়৷ কিন্তু এত বছর গবেষণা এবং প্রযুক্তির উন্নতির পরও রোবট এখনও একটি মানব শিশুর তুলনায় অনেক পিছিয়ে রয়েছে৷''
রোবটটিকে কেবল জিনিষপত্র ধরতেই শেখানো হচ্ছে না, বাচ্চাদের মত করে আরও অনেক কিছু শেখানো হচ্ছে৷ এই যেমন দুই হাত পা ছড়িয়ে নড়ানো, কোন বস্তুর নড়াচড়া অনুসরণ করা এবং রংগুলোকে আলাদা করে চিনতে শেখাসহ আরও অনেক কিছু৷ এই ব্যাপারে বিজ্ঞানী রিটার জানালেন, ‘‘আমরা অনেকখানি এগিয়ে গিয়েছি৷ আমরা কেবল কারিগরী দিকেই লক্ষ্য রাখছি না, মনস্তত্ত্ব এবং ভাষাগত দিক নিয়েও কাজ করছি৷ আমরা চাচ্ছি মানুষ এবং রোবটের মধ্যের পার্থক্য কমিয়ে আনতে যাতে দুইয়ের মধ্যে সহযোগিতা আরও বাড়ানো যায়৷''
মানুষের আদল
জার্মান বিজ্ঞানীরা চাচ্ছেন এমন রোবট তৈরি করতে যাকে কেবল সুইচ টিপে কাজ করানো হবে না, বরং সে কথা বুঝতে পারবে এবং একজনের চেহারার দিকে তাকিয়ে তার মানসিক অবস্থা সম্পর্কে ধারণা করতে পারবে৷ বিজ্ঞানীদের মতে, এটি তখনই সম্ভব যখন রোবট তার পারিপার্শ্বিক অবস্থান থেকে নেওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করতে সমর্থ হবে৷
জার্মান বিজ্ঞানীরা তাদের এই গবেষণায় সফলতার জন্য যোগাযোগ করেছেন জাপানের ওসাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের সঙ্গে৷ কারণ বিশ্বে রোবট তৈরিতে এখন পর্যন্ত জাপানি বিজ্ঞানীরা সবচেয়ে বেশি সাফল্য দেখিয়েছেন৷ জাপানি বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, একজন রোবটকে মানুষের কাছাকাছি আনতে হলে তার চেহারাতেও মানুষের আদল আনাটা জরুরি৷ এর সাথে একমত জার্মান বিজ্ঞানীরা৷ আর সেজন্যই বিলেফেল্ড ইন্সটিটিউটের বিজ্ঞানীরা তৈরি করেছেন তাদের নতুন চেহারার রোবট ‘ফ্লোবি'৷ বড় বড় চোখ আর ঠোঁট, আর ছোট নাকের সঙ্গে রয়েছে ছেলে ও মেয়ের জন্য ভিন্ন ধরনের চুলের আদল৷ ফলে ফ্লোবির চেহারায় এসেছে কঠোর যান্ত্রিকতার বদলে এক ধরণের মানবিক অনুভূতি৷
প্রতিবেদন: রিয়াজুল ইসলাম
সম্পাদনা: হোসাইন আব্দুল হাই