মানুষের উদ্যোগে ফের সেজে উঠছে কাবুলের জাতীয় জাদুঘর
২৯ সেপ্টেম্বর ২০১১অতীতকে অস্বীকার করে ভবিষ্যতের ভিত নির্মাণ করা যায় না৷ এই চরম সত্যের সামনে এখন আফগানিস্তান৷ তালেবান আমলে যে দেশের সুপ্রাচীন ইতিহাসের সঞ্চয় আর উত্তরাধিকারকে সম্পূর্ণ অনৈতিক, ন্যক্কারজনক কারণে ধ্বংস করা হয়েছিল, সেগুলিকে আবার ফিরিয়ে আনার চেষ্টায় মন দিয়েছেন গুণীজন থেকে সাধারণ মানুষ৷ ফের নতুন করে সেজে উঠতে শুরু করেছে আফগানিস্তানের জাতীয় জাদুঘর৷ প্রতিদিন তাতে নতুন নতুন সংযোজন ঘটছে৷
পৃথিবীর সব জাদুঘর বা সংগ্রহশালাই হয় স্থবির৷ যাতে নতুন সংযোজন হয় বটে, তবে খুব ধীরলয়ে৷ কিন্তু কাবুলের এই প্রাচীন জাদুঘরটি রোজ একটু একটু করে সমৃদ্ধ হয়ে চলেছে৷ মন্তব্যটি করেছেন এক ডাচ প্রত্নতত্ববিদ আনে ফিনস্ট্রা৷ কাবুলের জাতীয় জাদুঘরটির সংস্কার আর পুনর্নির্মাণের কাজে যিনি ব্যস্ত আরও অনেকেরই মত৷ আনে বলছেন, প্রতি সপ্তাহেই এই জাদুঘরে নতুন নতুন প্রত্নবস্তু এসে হাজির হচ্ছে৷ সেগুলিকে সাজিয়ে গুছিয়ে রাখছি আমরা সকলে মিলে৷
কেমন চেহারা ছিল এই জাদুঘরের৷ তার উদাহরণ রয়েছে জাদুঘরের প্রবেশপথে দুটি মস্ত আকারের ছবিতে৷ সে ছবি দেখিয়ে দিচ্ছে ইতিহাসের কী বিপুল সম্ভারে সাজানো ছিল এই জাদুঘরটি৷ তালেবান আমলে এই জাদুঘরের যতদূর সম্ভব ক্ষতি করা যায়, তা করা হয়েছিল৷ দুষ্প্রাপ্য, প্রাচীন সব প্রত্নবস্তু নির্বিচারে লুঠ হয়েছে, চালানো হয়েছে ভাঙচুর৷ ইতিহাসকে, ইতিহাসের সমৃদ্ধিকে যথাসম্ভব মুছে ফেলতে চেয়েছিল তালেবানরা৷ আর দুষ্কৃতকারীরা যে যার মত সুযোগ নিয়েছিল সেইসব প্রত্নবস্তুকে বেচে কিছু পয়সা উপার্জন করার৷
ফলে কাবুলের সমৃদ্ধশালী জাতীয় জাদুঘর, যেখানে হাজার হাজার বছরের প্রাচীন ইতিহাসের দেখা মিলত এককালে, তার চেহারা হয়েছিল বড় করুণ৷ হতশ্রী৷ কিন্তু নতুন এই উদ্যোগ ধীরে ধীরে ফিরিয়ে দিচ্ছে তার অতীত গরিমাকে৷ বিভিন্ন সময়ের অপরূপ সব বুদ্ধমূর্তি, কিংবা পুরুষপুরের শাসক মুন্ডহীন রাজা কণিষ্কের মূর্তি, সেসবের দেখা মিলছে একে একে৷ সাধারণ মানুষ থেকে ধনী সমাজের প্রতিনিধি, যাঁদের কাছে কোন না কোনভাবে গিয়ে পৌঁছেছিল জাদুঘরের সামগ্রী, তাঁরা সেগুলিকে ফিরিয়েও দিচ্ছেন অনেকে৷ আর প্রাচীন জাদুঘর ক্রমশ সেজে উঠছে৷ মূর্ত হয়ে উঠছে আফগানিস্তানের সুপ্রাচীন গৌরবময় অতীত৷ যে অতীতের দিকে তাকিয়ে যে কোন জাতি ভবিষ্যতের সমৃদ্ধির সংকল্প নিতে পারে৷ আর সেই কাজটাই করার চেষ্টা হচ্ছে আফগানিস্তানে৷
যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশের জন্য এর চেয়ে ভালো উৎসাহব্যাঞ্জক উদ্যোগ আর কীই বা হতে পারে!
প্রতিবেদন: সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন