1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মামলা দিয়ে শিশু নির্যাতন আর কত?

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২৯ মে ২০১৭

বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় ১০ মাসের একটি শিশুকে মারামারি ও চুরির মামলার চার্জশিটে আসামি করেছেন এক পুলিশ কর্মকর্তা৷ যখন ওই শিশুর বিরুদ্ধে মামলা হয়, তখন তার বয়স ছিল মাত্র ২৮ দিন৷ এই ধরণের ঘটনা বাংলাদেশে এই প্রথম নয়৷

https://p.dw.com/p/2dkwY
Bangladesch Dhaka Durchsuchungen
প্রতীকী ছবিছবি: Bdnews24.com

মিরপুর থানায় গত বছরের ২৬ জুন মারামারি ও চুরির অভিযোগ এনে হাবিবুর রহমান নামে এক ব্যক্তি মামলা করেন৷ মামলা তদন্ত শেষে মিরপুর থানার এসআই মারুফুল ইসলাম গত ২৭ ফেব্রুয়ারি রুবেল, আরিফুর রহমানসহ ২৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেন৷ আর তখন জানা যায়, রুবেল নামের যে আসামির বয়স ৩০ বছর দেখানো হয়েছে, তার বয়স মাত্র ১০ মাস৷ মামলা দায়েরের সময় তার বয়স ছিল মাত্র ২৮ দিন৷ আর আরিফুর রহমান মারা গেছেন চার বছর আগে৷

এই ঘটনা আদালতের নজরে এলে আদালত তদন্তকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত এবং ব্যাবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন৷ এরইমধ্যে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কর্তৃপক্ষ এসআই মারুফুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে৷ নানা অজুহাতে গরহাজির থেকে তিনি রবিবার আদালতে হাজির হয়ে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন৷ তিনি দাবি করেছেন, অনিচ্ছাকৃতভাবে শিশু ও মৃত ব্যক্তির নামে অভিযোগপত্র দিয়েছেন৷ আদালত মঙ্গলবার এ নিয়ে আদেশ দেবেন৷

তিনি মামলার তদন্ত না করেই চার্জশিট দিয়েছেন: ডিএমপি উপ-কমিশনার

ডিএমপির উপ কমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এসআই মারুফুল ইসলামকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করার পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত চলছে৷ প্রাথমিক তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে যে, তিনি মামলার তদন্ত না করেই চার্জশিট দিয়েছেন৷ মামলা নেয়া এবং চার্জশিট দেয়ার ক্ষেত্রে তিনি আসামির বয়স ও ঠিকানা আইন অনুযায়ী যাচাই করেননি৷ তদন্তে অবহেলা স্পষ্ট৷’’

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত শিশু বিবেচেনা করা হয়৷ আর সর্বনিম্ন ৯ বছর বয়সির বিরুদ্ধে মামলা দেয়া যায়৷ তবে সেক্ষেত্রে শিশু আইন, আলাদা অভিযোগপত্র , এজাহার এবং আদালত– এসব বিধান মানতে হবে৷’’

বাংলাদেশে শিশুদের বেআইনিভাবে মামলার আসামি করা এই প্রথম নয়৷ চলতি বছরের ২ মে শেরপুর মূখ্য মহনগর হাকিম আদালতে চাচার কোলে চড়ে হাজির হয়ে জামিন নেয় পাঁচ বছরের শিশু রনি৷ রনিকে মারপিট এবং দাঙ্গা হাঙ্গামা মামলার আসামি করা হয়েছিল৷

জানা যায়, গত ১৩ এপ্রিল শেরপুর সদর উপজেলার বেতমারী উত্তরপাড়া গ্রামের আব্দুল খালেক ও অন্য দু'জন ৫৫ হাজার টাকা নিয়ে গরু কেনার জন্য পাশ্ববর্তী জামালপুর জেলার বারুয়ামারী বাজারে যাচ্ছিলেন৷ পথে বেতমারী পশ্চিমপাড়া গ্রামের সুমন মিয়া তার সহযোগীদের নিয়ে খালেকের ওপর হামলা চালায়৷ লাঠি ও লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে খালেককে গুরুতর আহত করে সব টাকা ছিনিয়ে নেয় তারা৷ এ ঘটনায় পরের দিন খালেকের বড় ভাই ইমান আলী বাদী হয়ে ৮ জনের নামে শেরপুর সদর থানায় একটি মামলা করেন৷ ওই মামলায় বেতমারী পশ্চিমপাড়ার ধানী মিয়ার ছেলে পাঁচ বছর বয়সি রনির বয়স ২৬ বছর দেখিয়ে তাকে আসামি করা হয় এবং পুলিশ মামলাটি গ্রহণ করে৷

আদালত বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন৷

২০১৫ সালের ২৫ এপ্রিল ঝিনাইদহে সাত বছরের শিশু সজীব মিয়াকে ধর্ষণ মামলার আসামি করা হয়৷ পুলিশ তদন্ত করে একই বছরের ৩০ জুন তার বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিটও দেয়৷ বয়স লেখা হয় ১০ বছর৷ গত বছরের ১০ জানুয়ারি সজীব বাবার কোলে চড়ে আদালতে হাজির হয়ে জামিন নেয়৷ সজীব ঘটনার সময় স্থানীয় একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র ছিল৷ জানা গেছে, ধর্ষণ মামলার শিকার এক ছাত্রীকে ধর্ষণ মামলার আসামির কথায় সজীব ডেকে এনেছিল৷ তাই তাকে মামলায় ধর্ষকের সহযোগী আসামি করা হয়৷

সিলেটের কোম্পানিগঞ্জে ২০১৩ সালের ২২ সেপ্টেম্বর আপ্তাব মিয়া নামে ১৪ মাসের এক শিশুর বিরুদ্ধে ভোজ্য তেলে ভেজাল দেয়ার অভিযোগে মামলা হয়েছিল৷ শুধু মামলা নয়, তার বিরুদ্ধে আদালত গ্রেপ্তারি পরওয়ানাও জারি করা হয় তখন৷ আর এই মামলা দায়ের করেছিলেন সিলেটের স্যানিটারি ইন্সপেক্টর মো. শামসুদ্দিন৷ শিশুটিকে তার মা কোলে করে আদালতে হাজির করেছিলেন৷ সেবার স্যানিটারি ইন্সপেক্টরও আদালতে  ক্ষমা চেয়ে রেহাই পান৷ তিনি তখন আদালতে বলেন, ‘‘কোম্পানীগঞ্জের শাহ আরফিন বাজার পরিদর্শনকালে আপ্তাব স্টোরে ভেজাল সরিষার তেল তৈরির প্রমাণ মেলে৷ তাৎক্ষণিক মামলা করায় ভুলক্রমে শিশুকে আসামি করা হয়৷ আসলে দোকানটির মালিক আপ্তাবের বাবা৷’’

কোনো কোনো তদন্ত কর্মকর্তা টাকার বিনিময়ে মনগড়া তদন্ত রিপোর্ট তৈরি করেন: এলিনা খান

মানবাধিকার কর্মী এবং বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী অ্যাডভোকেট এলিনা খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘মামলার আসামিদের বয়স এবং ঠিকানা যাচাই করা বাধ্যতামূলক৷ এটা না করে মামলা এবং অভিযোগপত্র দাখিলের কারণ আর্থিক লেনদেন এবং কখনো কখনো অদক্ষতা ও দায়িত্বে অবহেলা৷ কোনো কোনো তদন্ত কর্মকর্তা টাকার বিনিময়ে অফিসে বসেই মনগড়া তদন্ত রিপোর্ট তৈরি করে আদালতে জমা দেন৷ কিন্তু ঘনটাস্থল পরিদর্শন, আসামি এবং বাদীর ঠিকানা ও বয়স তাদের আবাসস্থলে গিয়ে নিশ্চিত হওয়া তদন্তের প্রথম কাজ৷’’

তিনি আরো বেন, ‘‘মিরপুরের ঘটনায় তদন্ত কর্মকতাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করাই যথেষ্ট নয়৷ তাকে চাকরি থেকে বিদায় করে তার বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনে মামলা করা উচিত৷ তার উচিৎ ছিল বাদী অসৎ তথ্য দেয়ায় বাদীর বিরুদ্ধে মামলা করা৷ তদন্ত কর্মকর্তা তা না করে অর্থের বিনিময়ে বাদীর অসত্য এজাহারকেই তদন্ত রিপোর্ট হিসেবে আদালতে পাঠিয়েছেন৷’’

প্রসঙ্গত, আদালত মিরপুরে ১১ মাসের শিশুকে মামলার আসামি করার ঘটনায় মামলার বাদী হাবিবুর রহমানকেও তলব করেছেন৷

প্রিয় পাঠক, আপনি কিছু বলতে চাইলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে...