মার্কিন আগ্নেয়াস্ত্র সংস্কৃতি
১৫ জানুয়ারি ২০১১মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই সাম্প্রতিক এ্যারিজোনা হত্যাকাণ্ডের ঠিক পরের সোমবার, ১০ই জানুয়ারি এ্যারিজোনা এবং সমগ্র দেশে কি পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্র বিক্রি হয়েছে, তার পরিসংখ্যান নেয়, এবং সেটা এক বছর আগের ঐ তারিখে বিক্রিত আগ্নেয়াস্ত্রের সংখ্যার সঙ্গে তুলনা করে৷
দেখা যায়, এ্যারিজোনায় আগ্নেয়াস্ত্র বিক্রি হয়েছে ৬০ শতাংশ বেশী; সারা দেশে আগ্নেয়াস্ত্র বিক্রি হয়েছে গড়ে পাঁচ শতাংশ বেশী৷ অর্থাৎ ২২-বছর-বয়সী জ্যারেড লফনার টু'সনে কংগ্রেস সদস্যা গ্যাব্রিয়েল গিফোর্ডস'কে মাথায় গুলি করার, সেই সঙ্গে ছ'জন মানুষকে হত্যা করার এবং আরো ১৩ জনকে আহত করার পর পরই লোকজনের মাথায় একমাত্র চিন্তা ছিল: এবার আগ্নেয়াস্ত্র ক্রয় সংক্রান্ত আইন আরো কড়া হবে, কাজেই আগেভাগে কিনে রাখো৷
২০০৭ সালে ভার্জিনিয়া টেকে এক অনুরূপ মানসিক ভারসাম্যবিহীন ছাত্রের এলোপাথাড়ি গুলিতে নিহত হয়েছিল ২২ জন মানুষ৷ সেবারও তার পর পর দেশ জুড়ে আগ্নেয়াস্ত্র কেনার ধুম পড়ে গিয়েছিল৷ ছকটা প্রতিবারেই এক: এলোপাথাড়ি গুলি চালিয়ে হত্যাকাণ্ড; আগ্নেয়াস্ত্র বিক্রয় ও রাখা নিয়ে বিতর্ক; সেই সঙ্গে আগ্নেয়াস্ত্র কেনার ধুম৷
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিবছর ৩১ হাজার মানুষ আগ্নেয়াস্ত্র সংক্রান্ত ঘটনায় মারা যান৷ কিন্তু মজার কথা, আগ্নেয়াস্ত্রের সংখ্যা অথবা মান বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কিন্তু নিহতের সংখ্যা বেড়ে চলে না৷ অর্থাৎ আগ্নেয়াস্ত্র রাখার সংস্কৃতি মানেই হত্যার সংস্কৃতি নয়৷ তাহলে এটা কিসের সংস্কৃতি?
অর্ধেক মার্কিনি মনে করে, মুক্ত কি স্বাধীন সমাজে বন্দুক সংক্রান্ত সহিংসতা ঘটবেই৷ তারা নিজেরাই নিজেদের প্রতিরক্ষার দায়িত্ব নিতে চায়, বন্দুক কেনা ও রাখার মাধ্যমে৷ সবাই দেখুক এবং জানুক যে আমি নখদন্তহীন নই, রাষ্ট্রের উপর আমার আত্মরক্ষার জন্য নির্ভরশীল নই৷ গুন্ডা, চোরডাকাত যে কেউ আমার দিকে গুলি চালালে, আমার সম্পত্তি কেড়ে নেবার চেষ্টা করলে, আমারও অস্ত্র আছে৷
তাই মাথাপিছু আগ্নেয়াস্ত্রের হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বে প্রথম৷ তবে দ্বিতীয় স্থানে কোন দেশ জানেন? ইয়েমেন৷ সেখানকার ১০০ জন মানুষদের হাতে ৬১টা আগ্নেয়াস্ত্র আছে৷ কাজেই স্বাধীনতা ব্যাপারটা আবার নতুন করে চিন্তা করে দেখতে হয় না কি?
প্রতিবেদন: অরুণ শঙ্কর চৌধুরী
সম্পাদনা: সাগর সরওয়ার