1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মার্কিন জেলে প্রয়োজন ভ্যাকসিন

২৫ ডিসেম্বর ২০২০

মার্কিন জেলেও ছড়িয়েছে করোনা। দ্রুত সেখানে টিকা দেয়া প্রয়োজন। কিন্তু প্রশাসন ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

https://p.dw.com/p/3nChr
ভ্যাকসিন
ছবি: Esteban Felix/AP Photo/picture alliance

অ্যামেরিকায় করোনার টিকা চালু হয়ে গিয়েছে। কিন্তু আপাতত জেলবন্দিদের জন্য টিকা দেয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই সরকারের। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, শুরুতেই জেলে টিকা দেওয়া প্রয়োজন। কারণ, জেলে একসঙ্গে অনেক মানুষ একত্রে বাস করেন। এপ্রিল মাস থেকে অ্যামেরিকায় করোনার সংক্রমণ বাড়তে থাকে। সেই সময় থেকে মার্কিন জেলেও ব্যাপক ভাবে করোনা ছড়িয়ে পড়ে।

এখনো পর্যন্ত অ্যামেরিকায় কয়েক লাখ মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে বহু মানুষের। রিপোর্ট বলছে, শুধু জেলেই ২৭ লাখ মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে এক হাজার ৭০০ মানুষের। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, সাধারণ মানুষের চেয়েও জেলবন্দিদের করোনা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তাদের মৃত্যুর হারও বেশি। গোটা দেশে যে ২০টি করোনা হটস্পট তৈরি করা হয়েছে, তার মধ্যে ১৯টি হটস্পট জেল। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, জেলে বন্দিরা অল্প জায়গার মধ্যে অনেকে থাকেন। স্বাস্থ্যবিধিও সব মানা হয় না। 

ভ্যানডেরবিল্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রিভেনটিভ মেডিসিনের অধ্যাপক উইলিয়াম স্কাফনার ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ''জেলবন্দিরা সাধারণ মানুষের মতো সামাজিক দূরত্বের বিধি মানতে পারছেন না। কারণ তাঁরা বন্দি। সে কারণেই তাঁদের করোনা হওয়ার সম্ভাবনা অন্যদের চেয়ে অনেক বেশি। তাদের মধ্যে করোনা ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনাও বেশি।''

বিশেষজ্ঞদের একাংশের বক্তব্য, জেলে করোনা সংক্রমণ দ্রুত আটকাতে না পারলে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হতে পারে। তাঁদের বক্তব্য, প্রথম ধাপেই জেলবন্দিদের ভ্যাকসিন দেয়া উচিত। বয়স্ক বা স্বাস্থ্যকর্মীদের মতোই জেলবন্দিদের ভ্যাকসিন দেয়া গুরুত্বপূর্ণ।

দাবি থাকলেও মার্কিন প্রশাসন এখনই জেলবন্দিদের নিয়ে চিন্তা করতে রাজি নয়। সেন্টার ফর ডিজিস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) ডিসেম্বরে যে নির্দেশ বের করেছে, তাতে জেলবন্দিদের কোনো উল্লেখ নেই। মার্কিন প্রশাসন মূলত রাজ্যগুলির হাতে ভ্যাকসিন সরবরাহের দায়িত্ব দিয়েছে। রাজ্যগুলি নিজেদের মতো করে তা বিলি করবে।

জাস্টিস পলিসি ইনস্টিটিউটের রিসার্চ ডিরেক্টর রায়ান কিং ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, ''ভ্যাকসিন নিয়ে ফেডারেল সরকার যে ব্যবস্থা নিয়েছে, তাতে বহু ভুল রয়েছে। ঠিকমতো পরিকল্পনাই করা হয়নি। প্রশাসন নেতৃত্বহীনতায় ভুগছে।''

জনরোষ

কয়েকটি রাজ্য অবশ্য জেলবন্দিদের টিকা দেওয়ার বিষয়টি মাথায় রেখেছে। তবে প্রায় কোনো রাজ্যই তা প্রথম ধাপের তালিকায় এখনো পর্যন্ত রাখেনি। 

কলোরাডোয় জেলবন্দিদের টিকাকরণ দ্বিতীয় ধাপে রাখা হয়েছে। কিন্তু এই সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করেছে রিপাবলিকান এবং গণমাধ্যমের একাংশ। জনমতেও তার প্রভাব দেখা যাচ্ছে। বাধ্য হয়েই ডিসেম্বরে কলোরাডোর গভর্নরকে একটি বিবৃতি দিতে হয়। যাতে বলা হয়েছে, নাগরিকদের স্বার্থ উপেক্ষা করে জেলবন্দিদের টিকা দেয়া হবে না।

অধিকাররক্ষা কর্মীদের ধারণা, জনমতের চাপ যত বাড়বে, ততই বিভিন্ন রাজ্যের সরকার তার সামনে নতজানু হতে বাধ্য হবে। কারণ, প্রতিদিন দেশে করোনার সংক্রমণ বাড়ছে। সেই অনুপাতে টিকার সরবরাহ সম্ভব নয়। ফলে সকলেই প্রথমে টিকা পেতে চাইবেন। কিন্তু অধিকাররক্ষা কর্মীদের বক্তব্য, জনমত বা রাজনীতি নয়, কে কখন টিকা পাবেন, সে বিষয়টি বিজ্ঞানের নিয়ম মেনে হোক।

ভয়াবহ জেল

জেলের জীবন ভয়ঙ্কর। অনেক সময়েই কিছু দিন বা কিছু ঘণ্টার জন্য অপরাধীদের জেলে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর ফের তাঁদের ছেড়ে দেয়া হয়। জেল ফেরত অপরাধীরা নিজেদের গোষ্ঠীর মধ্যে চলে যান। সাধারণ মানুষের সঙ্গে তাঁদের যোগাযোগ হয়। ফলে এই ব্যক্তিদের মাধ্যমে দ্রুত করোনা ছড়ানোর সম্ভাবনা তৈরি হয়।

শুধু তাই নয়, অপরাধীরা সাধারণত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলেন না। তাঁরা যে সমস্ত জায়গায় জীবন কাটান, তা যথেষ্ট অস্বাস্থ্যকর। ফলে তাঁদের মধ্যে করোনা সংক্রমণের সম্ভাবনা বেশি। এই ধরনের বন্দিদের এক জেলেই দিনের পর দিন রখা হয় না। জেলের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য বন্দিদের এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় পাঠানো হয়। অথচ এই বদলির সময় তাঁদের কোনো পরীক্ষা হয় না। এক জন আক্রান্তের থেকে শয়ে শয়ে ব্যক্তি আক্রান্ত হতে পারেন। এই বিষয়টি প্রশাসন মাথায় রাখেনি।

গত মে মাসেই এমন ঘটনা ঘটেছে। স্যান ফ্রানসিসকোর জেলে এ ভাবেই করোনা ছড়িয়ে পড়েছিল। বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছিল।

কোনো কোনো রাজ্য জেলের জনসংখ্যা কমিয়েছে। বন্দিদের জন্য আরো বেশি জায়গা নিশ্চিত করা হয়েছে। নিউ জার্সিতে প্রায় দুই হাজার বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাতেও সমস্যার সম্পূর্ণ সমাধান হয়নি।

জেলে দ্রুত ভ্যাকসিন দেওয়ার ব্যবস্থা করলে এই সমস্ত সমস্যার সমাধান সম্ভব ছিল। কিন্তু সরকার এবং প্রশাসন না চাইলে তা করা সম্ভব নয়। অধিকাররক্ষা কর্মীদের বক্তব্য, অপরাধীরা জেলে আসেন শাস্তি ভোগ করতে। কিন্তু তাঁদের মেরে ফেলার অধিকার প্রশাসনের নেই।

সোলান ডেভিড/এসজি