যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান
২১ মার্চ ২০১২পাকিস্তান ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে জটিল সম্পর্কের চরিত্র বিশ্লেষণ করা অত্যন্ত কঠিন৷ নাইন-ইলেভেন থেকে শুরু করে একের পর এক ঘটনার জের ধরে দুই দেশ বাধ্য হয়ে পরস্পরের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে৷ কিন্তু সেই পথও কাঁটায় ভরা৷ আফগান সীমান্তে সন্ত্রাসবাদী ও উগ্রবাদীদের দমন করতে মার্কিন বাহিনী লাগাতার ড্রোন হামলা চালিয়ে আসছে৷ পাকিস্তানের কর্তৃপক্ষের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহায়তা ছাড়া যা সম্ভব হতে পারে না৷ মার্কিন হামলায় নিরীহ মানুষ বা পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যের মৃত্যুর ঘটনা ঘটলেই রাজনীতিকেরা প্রতিবাদে মুখর হয়ে ওঠেন৷ কিন্তু মার্কিন নীতির কোনো পরিবর্তন দেখা যায় না৷
সংসদের বার্তা
মঙ্গলবার পাকিস্তানের সংসদের এক সংসদীয় কমিশন স্পষ্ট ভাষায় মার্কিন নীতিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে৷ তাদের দাবি, পাকিস্তানের ভূখণ্ডে মার্কিন ড্রোন হামলা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে এবং গত নভেম্বর মাসে মার্কিন হামলায় ২৪ জন পাকিস্তানি সৈন্যের মৃত্যুর জন্য ওয়াশিংটন'কে ক্ষমা চাইতে হবে৷ উল্লেখ্য, এই হামলার পরই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক খতিয়ে দেখতে সংসদে এই কমিশন গঠন করা হয়েছিল৷
কমিশনের রিপোর্ট প্রকাশের পর মঙ্গলবারই সংসদের উভয় কক্ষে বিষয়টি নিয়ে বিতর্কের কথা ছিল৷ কিন্তু বিরোধীরা বিষয়টি খতিয়ে দেখতে সময় চেয়েছে৷ এই অবস্থায় বিষয়টির নিষ্পত্তি হতে আরও সময় লেগে যেতে পারে৷
মার্কিন মনোভাব
ঠিক এমনই এক সময়ে মঙ্গলবার পেশোয়ারে সফরে গিয়েছিলেন পাকিস্তানে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ক্যামেরন মান্টার৷ সেখানে ডয়চে ভেলের প্রতিনিধি ফরিদুল্লাহ খানের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি মার্কিন-পাকিস্তান সম্পর্কের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন৷ সন্ত্রাস দমন অভিযানে পাকিস্তানের অবদানের প্রতি সহানুভূতি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘পাকিস্তানের আত্মত্যাগ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ছে৷ আমরা জানি, এই যুদ্ধে হাজার-হাজার পাকিস্তানি নিহত হয়েছে৷ আমরা বুঝতে পারি যে আপনারা অনেক কিছু দিয়েছেন৷ পাকিস্তানের নেতৃত্ব ও দেশের মানুষের এটা বোঝা উচিত যে আমরা অত্যন্ত আন্তরিকভাবে আপনাদের কাজের স্বীকৃতি দিই৷''
গত বছর নভেম্বরের হামলার পর আফগানিস্তানে ন্যাটো বাহিনীর জন্য সড়কপথে রসদ সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছিল পাকিস্তানের সরকার৷ মঙ্গলবার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, এই অবরোধ সত্ত্বেও পাকিস্তানের আকাশ সীমার মধ্যে বিমানপথে রসদ সরবরাহের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল৷ বিশেষ করে খাদ্যের মতো পচনশীল রসদের ক্ষেত্রে এই ব্যতিক্রম করা হয়েছিল৷ সংসদীয় কমিশনের কাজের পর সড়কপথও খুলে দেওয়া হবে বলে অ্যামেরিকা আশা করছে৷ পেশোয়ারে দুই দেশের স্বার্থের মধ্যে মিল সম্পর্কে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মান্টার বলেন, ‘‘যারা পাকিস্তান ও অ্যামেরিকা – দুই দেশকেই হুমকি দিচ্ছে, তারা একই লোক৷ আমরা পরস্পরের সঙ্গে সহযোগিতা করছি, ভবিষ্যতেও করবো৷ আফগানিস্তানের প্রশ্নে কূটনৈতিক স্তরে আমাদের আরও অগ্রগতির প্রয়োজন৷ আঞ্চলিক ক্ষেত্রে আমাদের একটা সামগ্রিক সহায়তার কাঠামো রয়েছে৷''
সেনাবাহিনীর অবস্থান
অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, পাকিস্তানের সৈন্যদের উপর মার্কিন হামলার ফলে আদতে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর কিছুটা সুবিধাই হয়েছে৷ অ্যাবোটাবাদের সেনা ঘাঁটির প্রতিবেশী হিসেবে ওসামা বিন লাদেন'এর উপস্থিতি এবং তাকে ধরতে মার্কিন কমান্ডো অভিযানের ফলে সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তির মারাত্মক ক্ষতি হয়েছিল৷ ২৪ জন পাকিস্তানি সৈন্যের মৃত্যুর পর সেনাবাহিনী আবার অ্যামেরিকার সঙ্গে দর কষাকষির অবস্থায় এসেছে৷
প্রতিবেদন: সঞ্জীব বর্মন
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ