চাপের মুখে রাশিয়া
২২ জুলাই ২০১৪অবশেষে নেদারল্যান্ডস-এর ৩ সদস্যের এক বিশেষজ্ঞ দল মালয়েশিয়া এয়ারলাইনস-এর ধ্বংসাবশেষ পরীক্ষা করতে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে পৌঁছতে পেরেছেন৷ তাঁদের কাজ বিপর্যয়ের পর মানুষের লাশ শনাক্ত করা৷ রুশপন্থি বিদ্রোহীরা কাছেই এক রেল স্টেশনে ২৪৭টি মৃতদেহ রেফ্রিজারেটেড ওয়াগানে রেখে দিয়েছে৷ তাদের সূত্র অনুযায়ী, সেগুলি অভিশপ্ত বিমানটির ২৯৮ জন যাত্রী ও কর্মীদের একাংশের লাশ৷ উল্লেখ্য, আরোহীদের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশই নেদারল্যান্ডস-এর নাগরিক ছিলেন৷ তদন্তকারী দলের প্রধান জানিয়েছেন, প্রতিকূল পরিবেশ সত্ত্বেও মৃতদেহগুলি ভালোভাবেই রাখা হয়েছে৷ সেগুলিকে দ্রুত শনাক্ত করে সমাধিস্থ করা জরুরি বলে তিনি মনে করেন৷ ইউক্রেনের সরকারি কর্মকর্তাদের সূত্র অনুযায়ী ঘটনাস্থলে মোট ২৭২টি মৃতদেহ ও ৬৬টি শরীরের অংশবিশেষ পাওয়া গেছে৷
ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে যাত্রীবাহী বিমান ধ্বংস করার ঘটনার ফলে ইউক্রেন সংকট নতুন মাত্রা পেয়েছে৷ দেশের পূর্বাঞ্চলে রুশপন্থি বিদ্রোহী ও তাদের মদতকারী রুশ সরকার আন্তর্জাতিক মহলে ক্রমশ কোণঠাসা হয়ে পড়ছে৷ মস্কো এই ঘটনার দায় স্বীকার না করে ইউক্রেনের সেনাবাহিনীকে দায়ী করে চলেছে৷ ঘটনার তদন্ত শুরু না হওয়ায় কোনো দাবির সপক্ষে অকাট্য প্রমাণ এখনো পাওয়া যায় নি৷
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি অবশ্য বলেছেন, এই ঘটনায় রাশিয়ার জড়িত থাকার অনেক প্রমাণ পাওয়া গেছে৷ গত মাসেই রাশিয়া থেকে ১৫০টি সামরিক যানের এক বহর বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত এলাকায় প্রবেশ করেছে বলে তিনি দাবি করেন৷ তার মধ্যে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের জন্য ট্যাংক ও রকেট লঞ্চারও ছিল৷ ঘটনাস্থলে মালয়েশীয় বিমানের আরোহীদের মৃতদেহের প্রতি যে অসম্মান দেখানো হয়েছে, তার ফলেও তিনি চরম বিরক্তি প্রকাশ করেন৷ উল্লেখ্য, রুশপন্থি বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত এলাকায় বিমানের ধ্বংসাবশেষ ও আরোহীদের মৃতদেহ সুরক্ষার কোনো উদ্যোগ প্রথমে চোখে পড়েনি৷ আন্তর্জাতিক তদন্ত দলগুলিকেও সেখানে ঘেঁষতে দেয়নি তারা৷ নেদারল্যান্ডস ও অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন-কে টেলিফোনে অনেক কড়া কথা শুনিয়েছেন৷ সবার দাবি এক – পুটিন তাঁর প্রভাব খাটিয়ে বিদ্রোহীদের সম্পূর্ণ সহযোগিতা করতে বাধ্য করুন৷
মালয়েশীয় বিমান ধ্বংস করার ঘটনার জের ধরে রাশিয়ার উপর আরও নিষেধাজ্ঞা চাপানোর দাবিও বাড়ছে৷ মঙ্গলবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা এ বিষয়ে আলোচনা করবেন৷ বিশেষ করে ব্রিটেন কড়া মনোভাব দেখানোর পক্ষে সওয়াল করছে৷ তবে এ ক্ষেত্রে নেদারল্যান্ডস সরকারের অবস্থানকে সবচেয়ে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে৷ জাতীয় শোকের আবহ সামলে উঠে সে দেশের প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুটে স্পষ্ট অবস্থান নেবেন, এমনটাই আশা করা হচ্ছে৷ জার্মানি ও ফ্রান্স এতকাল রাশিয়ার উপর আরও কড়া নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে তেমন উদ্যোগ দেখায়নি৷ তবে মালয়েশীয় বিমান ধ্বংসের পর রাশিয়া সম্পর্কে তাদের অবস্থানেও পরিবর্তন ঘটতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে৷
এসবি / জেডএইচ (রয়টার্স, এপি, এএফপি)