মাহমুদুল্লাহর আকস্মিক বিদায়ী টেস্টে বাংলাদেশের জয়
১১ জুলাই ২০২১গুঞ্জনটা শোনা যাচ্ছিল প্রথম ইনিংসে তার ঝলমলে সেঞ্চুরির পরই৷ তবে সংবাদ মাধ্যমে মাহমুদুল্লাহ বা দলের কেউই পরিস্কার কিছু বলেননি৷ বিসিবি প্রধানও এই গুঞ্জনে বিষ্ময় প্রকাশ করে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন স্থানীয় কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে৷
তবে জল্পনা কল্পনার অবসান হয় পঞ্চম দিনে বাংলাদেশ দল মাঠে নামলে৷ টিমমেটরা দুই ভাগ হয়ে বিদায়ের ‘গার্ড অব অনার' দেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের ‘মিস্টার কুলকে'৷
ইএসপিএন ক্রিকইনফো তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে টেস্টের তৃতীয় দিন শেষেই মাহমুদুল্লাহ সতীর্থদের তার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দেন বলে জানা যায়৷ এর আগে ১৫০ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে তাসকিনকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশকে ব্যাটিং বিপর্যয় থেকে উদ্ধার করেন তিনি৷ সেদিন বিসিবির অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে প্রকাশিত এক ভিডিওতে খেলা নিয়ে কথা বললেও অবসরের বিষয়ে মুখ খোলেননি৷
বিসিবি প্রধান নাজমুল হাসান অবসরের এই গুঞ্জনের বিষয়ে সংবাদ মাধ্যমে মাহমুদুল্লাহর সমালোচনা করে বলেন, ম্যাচের মাঝপথে এমন সিদ্ধান্তে নিলে তাতে দলের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে৷ দৈনিক প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘‘আমাকে আনুষ্ঠানিকভাবে কেউ কিছু বলেননি৷ তবে একজন ফোন করে জানিয়েছে, এই টেস্টের পর আর সে (মাহমুদউল্লাহ) টেস্ট খেলতে চায় না৷ ড্রেসিংরুমে নাকি সবাইকে সে এটা বলেছে৷ কিন্তু আমার কাছে এটা খুবই অস্বাভাবিক লেগেছে৷ খেলা তো এখনো শেষ হয়নি!’’ টেস্ট খেলার বিষয়ে মাহমুদুল্লাহ লিখিত দিয়েছিলেন উল্লেখ করে তিনি বলেন সেজন্যই তাকে দলে নেয়া হয়েছিল৷
তবে বাংলাদেশের অন্যতম নির্ভরযোগ্য এই ব্যাটসম্যান সাম্প্রতিক সময়ে টেস্ট ক্রিকেটে অনিয়মিত হয়ে পড়েন৷ ইনজুরির কারণে তামিম ইকবালের অনুপস্থিতিতে ১৮ মাস পর তাকে বেছে নিতে বাধ্য হন নির্বাচকরা৷ সুযোগ পেয়েই ব্যাট হাতে এই অবহেলার জবাব দেন তিনি৷ ২৭৮ বলে ১৭ চার ও এক ছয়ে তুলে নেন ১৫০ রান ও ক্যারিয়ারের পঞ্চম সেঞ্চুরি৷ তবে এই ইনিংসের মাহাত্ম্য তার চেয়েও বেশি৷ ২৭০ রানে আট উইকেট হারানোর পর টেল এন্ডার তাসকিনকে সাথে নিয়ে গড়েন ১৯০ রানের জুটি, যা নবম উইকেটে টেস্ট ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ৷ এই দুইজনের বদৌলতে ৪৬৮ রানের বড় সংগ্রহ নিয়ে জিম্বাবোয়েকে চাপে ফেলে টাইগাররা৷ জবাবে প্রথম ইনিংসে ২৭৬ রানেই গুটিয়ে যায় স্বাগতিকরা৷ মেহেদি হাসান মিরাজ পাঁচ ও সাকিব আল হাসান তুলে নেন চার উইকেট৷
নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশের টপ অর্ডার৷ সাদমান (১১৫) ও শান্তর (১১৭) সেঞ্চুরিতে এক উইকেট হারিয়ে ২৮৪ রানে ইনিংস ঘোষণা করে মুমিনুল বাহিনী৷ ৪৭৭ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে তাসকিন ও মিরাজের আঘাতে জিম্বাবোয়ের প্রতিরোধ থামে ২৫৬ রানে৷ দুইজনই নিয়েছেন চারটি করে উইকেট৷
বাংলাদেশের এই বিজয়ের খবর ছাপিয়ে দর্শকদের কাছে মাহমুদুল্লাহর বিদায়ই অবশ্য বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে৷ এই সিদ্ধান্তকে অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটারের প্রতি নির্বাচকদের আচরণের প্রতিবাদ হিসেবে দেখছেন অনেকে৷ ২০০৯ সালে টেস্টে ডেব্যু হওয়া মাহমুদুল্লাহ বাংলাদেশ দলে নিয়মিত খেলেছেন ২০১৭ পর্যন্ত৷ এরপর থেকে মাঝেমধ্যেই দলে জায়গা হারাতে শুরু করেন৷ সিদ্ধান্তে অনড় থাকলে এই ক্রিকেটারকে আর দেখা যাবে না লাল বল ও সাদা জার্সিতে ক্রিকেটের দীর্ঘ সংস্করণে৷
এফএস/এডিকে