প্রথমে ধর্ষণ, পরে ধর্মান্তর
৭ আগস্ট ২০১৪সমাজবাদী পার্টি শাসিত উত্তর প্রদেশের মিরাট জেলায় গত ২৩শে জুলাই ২০ বছরের এক তরুণীকে অপহরণ করে প্রথমে হাপুর মাদ্রাসায় আটকে গণধর্ষণ করা হয়৷ তারপর ঐ তরুণীকে নিয়ে যাওয়া হয় মুজফ্ফরনগরের অন্য একটি মাদ্রাসায়৷ সেখানেও মেয়েটিকে আটকে রেখে গণধর্ষণ করা হয় এবং পরে জোর করে ধর্মান্তরিত করা হয় তরুণীটিকে৷
মেয়েটি স্বেচ্ছায় ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছে – এই মর্মে এক হলফনামায় জোর করে সই করিয়ে নেয়া হয়, এমনটাই অভিযোগ৷ গত ৩রা আগস্ট মেয়েটি অপহরণকারীদের খপ্পর থেকে পালিয়ে বাড়িতে ফিরে তাঁর পরিবারকে সব কথা জানায়৷ এও জানায় যে, ঐ মাদ্রাসায় আরো হিন্দু মেয়েদের আটকে রাখা হয়েছে৷ তরুণীটির কথা অনুযায়ী, ধর্মান্তরিত করার পর তাঁদের নাকি দুবাই নিয়ে গিয়ে শেখদের সঙ্গে বিয়ে দেবার চক্রান্ত হচ্ছিল৷
বলাবাহুল্য, এ ঘটনার পর তরুণীর পরিবার পুলিশের কাছে সেইমতো অভিযোগ দায়ের করে৷ আর দাবি জানায় ঘটনাটির তদন্ত করা হোক কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো সিবিআই-এর আওতায়৷ ধর্ষিতা মহিলার পরিবার মনে করে, একমাত্র তবেই ঘটনার প্রকৃত সত্যতা জানা যাবে এবং অপরাধীরা শাস্তি পাবে৷ তাঁরা এও জানান, তাঁদের মেয়ে ঐ মাদ্রাসায় কিছুদিন ইংরেজি এবং হিন্দি শিক্ষক হিসেবে কাজ করেছিলেন, যা পরে তিনি ছেড়ে দেয়৷
উত্তর প্রদেশের পশ্চিমাঞ্চল সাম্প্রদায়িক সংবেদনশীল এলাকা বলে দ্রুত সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা দেখা দেয় সেখানে৷ দুই সম্প্রদায়ের মানুষ একে-অপরকে লক্ষ্য করে ইট-পাথর ছুড়তে থাকে৷ উত্তেজনার পারদ বাড়তে থাকলে পাঠানো হয় দাঙ্গা দমন পুলিশ বাহিনী৷ উল্লেখ্য, কেন্দ্রে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর গত আড়াই মাসে ঐ এলাকায় ছোট-বড় ৬০০টি সাম্প্রদায়িক অসহনশীলতার ঘটনা ঘটে৷ মজার ব্যাপার হলো, এর বেশিরভাগ অবাঞ্ছনীয় ঘটনার সূত্রপাতই মন্দির ও মসজিদে ‘লাউডস্পিকার' বাজানোকে ঘিরে৷ সন্ধ্যায় মসজিদে আজানের সময় লাউডস্পিকার বাজানো হয় আর ঠিক তখনই হিন্দু মন্দিরে সন্ধ্যারতির সময়৷ কাজেই সেখানেও বাজে লাউডস্পিকার৷ মুসলিমদের অভিযোগ, মন্দিরে এত জোরে লাউডস্পিকার বাজে যে নামাজ পড়ায় বিঘ্ন ঘটে৷ একই অভিযোগ হিন্দুদেরও৷ তাই এ নিয়ে ঝগড়া-বিবাদ লেগেই আছে, কখনো কখনো যা সহিংস চেহারা নেয়৷ এর জন্য অবশ্য রাজ্য সরকারকেই সবাই দায়ী করছে৷
এহেন ঘটনায় প্রথমদিকে পুলিশ এতটা গা করেনি৷ পরে অবশ্য পুলিশ চারজনকে গ্রেপ্তার করে৷ এঁদের একজন গ্রাম প্রধান নবাব খান, অন্যজন মাদ্রাসার মৌলবি হাফিজ সানাউল্লা, তাঁর স্ত্রী সামার জাঁহা এবং মেয়ে নিশাত৷ তবে পুলিশ ঐ মাদ্রাসায় তল্লাসি চালিয়ে অন্য কোনো হিন্দু মেয়ের খোঁজ পায়নি৷ মিরাট মেডিকেল কলেজে ডাক্তারি পরীক্ষায় তরুণীকে ধর্ষণ করার চিহ্ন ধরা পড়েছে৷ শুধু তাই নয়, তরুণীর তলপেটে অপারেশনের দাগ দেখে আলট্রাসাউন্ড এবং এক্সরে করার পর দেখা যায় যে, তরুণীর একটি ফেলোপিয়ান টিউব বাদ দেয়া হয়েছে৷ ফলে তরুণী কোনোদিনই সন্তান ধারণে সক্ষম হবেন না৷
পরিস্থিতির ফায়দা তুলতে রাজ্যের বিজেপি আসরে নেমে পড়ে৷ মিরাটের বিজেপি সাংসদ এই ধর্ষণকাণ্ডের ইস্যুটি সংসদে তুলে পুলিশের নিস্ক্রীয়তার অভিযোগ তোলেন৷ ধর্ষিতা তরুণীর জবানবন্দি রেকর্ড করার জন্য তাঁকে মিরাট আদালতে নিয়ে যাওয়া হলে আদালতের বাইরে মৌলবাদী হিন্দু শিবসেনা এবং বজরংগ দলের সমর্থকরা বিক্ষোভ দেখায়৷ হিন্দু জাগরণ মঞ্চের নেতা কপিল ত্যাগী ক্ষোভ উগরে দিয়ে বলেন, হিন্দু মেয়ে বোনেদের সম্মান রক্ষায় তাঁরা যে-কোনো পর্যায়ে যেতে রাজি৷