এই হামলার বিচার হবে কী করে?
১৯ জুন ২০১৭তবে আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, জড়িতদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেয়া হয়েছে৷ পুলিশ এখনো কাউকে চিহ্নিত করতে পারেনি৷
রবিবার সকালে মির্জা ফখরুল ইসলামসহ বিএনপি নেতারা চট্টগ্রাম থেকে গাড়িতে রাঙ্গামাটি যাচ্ছিলেন৷ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার শান্তিরহাট এলাকায় তাদের গাড়ি বহরে হামলা চালানো হয়৷ হামলায় মির্জা ফখরুল ছাড়াও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও দলের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শামীম আহত হন৷ গাড়ি বহরে থাকা একজনের মাথা ফেটে যায়৷ হামলায় মির্জা ফখরুলের গাড়িরও ক্ষতি হয়৷
হামলার পর বিএনপির চেয়ারপর্সন বেগম খালেদা জিয়া এই হামলার জন্য ‘আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের' দায়ী করেছেন আর আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ও যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘‘মির্জা ফখরুলের ওপর হমলা অন্যায়৷'' তিনি অপরাধীদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেয়ার কথা জানান৷
সোমবার বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এই হামলার মধ্য দিয়ে সরকার দেশে একটা অস্থিরতা তৈরি করতে চায়৷ তারা চায় অস্থির পরিস্থিতির সৃষ্টি করে বিএনপিকে নির্বাচনের বাইরে রাখতে৷ কিন্তু বিএনপিকে নির্বাচনের বাইরে রাখা যাবে না৷'' তিনি বলেন, ‘‘এর আগেও ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের সময় নির্বাচনী প্রচারণায় বের হলে কারওয়ান বাজার ও বাংলা মটরসহ কয়েকটি এলাকায় ম্যাডাম খালেদা জিয়ার ওপর হামলা হয়েছে৷ এটা আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদী চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ৷ মির্জা ফখরুল কোনো রাজনৈতিক কাজে যাচ্ছিলেন না৷ তিনি ত্রাণ বিতরণের মতো মানবিক কাজে যাচ্ছিলেন৷ তারপরও আওয়ামী লীগ তার ওপর হামলা করে৷''
মামলার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘থানা কি বিএনপি'র মামলা নেবে? বিএনপির মামলা থানা নেয়না, বিএনপি'র মামলা কোর্ট নেয় না৷ থানা যেমন আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠন তেমনি কোর্টও আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠন৷ তাই আমরা মামলা করব না৷ জনগণের কাছে বিচার দিচ্ছি৷ জনগণ যাতে এই অপশক্তির বিচার আগামী নির্বাচনে ভোটের মাধ্যমে করে, সেই আহ্বান জানাচ্ছি৷''
বিপরীতে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা এই হামলার নিন্দা জানিয়েছি৷ জড়িতদের গ্রেপ্তার করার নির্দেশনা দিয়েছি৷ তদন্ত করে তাদের আইনের আওতায় এনে বিচারের মুখোমুখি করতে বলেছি৷ আমরা কখনোই এই ধরণের হামলা সমর্থন করি না৷ যদিও অতীতে বিএনপি আওয়ামী লীগের ওপর অনেক হামলা চালিয়েছে৷ আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর ওপর একাধিকবার হামলা করেছে৷''
তিনি আরো বলেন, ‘‘আমরা এরইমধ্যে জেনেছি, বিএনপি নেতাদের যে পথে যাওয়ার কথা ছিল, তারা সে পথে যাননি৷ তারা রুট পরিবর্তন করেছেন৷ এটা পুলিশকে জানালে পুলিশ তাদের নিরাপত্তা দিতে পরতো৷ তারা কেন রুট পরিবর্তন করল, সেটা বিএনপিই ভালো বলতে পারবে৷''
অন্যদিকে রাঙ্গুনিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইমতিয়াজ ভুঁইয়া ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বিএনপি মহাসচিবের ওপর হামলার ঘটনার তদন্ত শুরু হয়ে গেছে৷ আমরা হামলাকারীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করছি৷ বিএনপির পক্ষ থেকে কেউ এখনো মামলা করেননি৷ মামলা করলে আমাদের তদন্তের কাজে সুবিধা হতো৷''
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত ‘হামলাকারী'দের ছবির ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘কিছু ছবি আমরাও দেখেছি৷ তবে তা স্পষ্ট নয়৷ তবুও আমরা চিহ্নিত করা ও নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করছি৷ এখন পর্যন্ত কাউকে চিহ্নিত বা আটক করা যায়নি৷''
এদিকে রাঙ্গামাটির ১৮টি আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় আড়াই হাজার দুর্গত আশ্রয় নিয়েছেন৷ সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ ও রেড ক্রিসেন্টের মধ্যে দায়িত্ব বণ্টন করে তাদের দুই বেলা খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে৷ তবে সোমবার দুপুরের পর আবারো বৃষ্টি শুরু হওয়ায় কিছুটা আতঙ্ক দেখা দেয়৷
কিন্তু যোগাযোগ ব্যবস্থা স্বাভাবিক না হওয়ায় নতুন সঙ্কটের সৃষ্টি হয়েছে৷ রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রাম সড়কসহ বিভিন্ন সড়ক ঠিক না হওয়ায় বিপাকে পড়েছে জেলার কৃষি ও পরিবহন সেক্টরের লক্ষাধিক মানুষ৷ চাষীরা বিভিন্ন উপজেলা থেকে ফল নিয়ে ঘাটে এলেও ক্রেতার অভাবে তা বিক্রি করতে পারছেন না৷ অন্যদিকে পরিবহন সঙ্কটের কারণে বেপারিরা পণ্য ক্রয় করছেন না৷ তাই চাষিরা অনেক টাকা লোকশানের আশঙ্কা করছে৷ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ফল বিক্রি করতে না পারলে তা বাগানেই পচে নষ্ট হবে৷
আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷