মিশরে বিক্ষোভ
২৪ নভেম্বর ২০১২মূলত মুসলিম ব্রাদারহুড তথা মিশরের ইসলামপন্থীদের সমর্থন নিয়ে এবং স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের বুলি আউড়িয়ে নির্বাচনে জয়ী হন মোহাম্মেদ মুরসি৷ কিন্তু দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই তিনি প্রেসিডেন্টের হাতে সকল ক্ষমতা কুক্ষিগত করার চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছেন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা৷ কারণ ইতিমধ্যে নির্বাহী এবং আইন প্রণয়নের ক্ষমতা কুক্ষিগত করেছেন মুরসি৷ আর গত সপ্তাহে নতুন আদেশ জারির মধ্য দিয়ে বিচার বিভাগের উপরেও প্রেসিডেন্টের ক্ষমতাকে স্থান দিয়েছেন তিনি৷
কিন্তু মিশরের জনতা মুরসির এই সর্বশেষ পদক্ষেপকে মানতে নারাজ৷ তাদের আশঙ্কা, এর মধ্য দিয়ে মুরসি যেন নিজেকে আরেক মুবারকে পরিণত করতে যাচ্ছেন৷ তাই এর বিরুদ্ধে দেশটির রাজধানী কায়রোসহ সুয়েজ এবং আলেক্সান্দ্রিয়াতেও বিক্ষোভ শুরু হয়েছে৷ শনিবারও অব্যাহত রয়েছে বিক্ষোভ আন্দোলন৷ শুক্রবার রাতে কায়রোর ঐতিহাসিক তাহরির চত্বরে অন্তত ৩০টি তাবু গেঁড়ে অবস্থান গ্রহণ করে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীরা৷ আর শনিবার সকালে তাদের সাথে যোগ দিতে আরো অনেক নেতা-কর্মী সেখানে তাবু স্থাপনের চেষ্টা করে৷ এসময় পুলিশ তাদের বাধা দেয় এবং ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস ছোঁড়ে৷
এছাড়া বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভকারীরা ইসলামিস্ট ফ্রিডম ও জাস্টিস পার্টির দলীয় কার্যালয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়৷ মুরসির সমর্থকরাও পিছিয়ে নয়৷ তারাও বিভিন্ন শহরে সমবেত হয়ে মুরসির প্রতি তাদের সমর্থন ব্যক্ত করে৷ কায়রোয় প্রেসিডেন্ট ভবনের সামনে সমবেত তাঁর সমর্থকদের উদ্দেশ্যে বক্তৃতায় মুরসি বলেন, ‘‘আমরা চাই রাজনৈতিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং সেজন্যই আমি কাজ করে যাচ্ছি৷''
তবে মুরসির এমন নীতিকথায় সন্তুষ্ট নয় বিরোধী দলগুলো৷ বামপন্থী, উদারপন্থী এবং সমাজবাদী দলগুলো মুরসির এমন একনায়কতন্ত্রসুলভ পদক্ষেপের বিরুদ্ধে আগামী মঙ্গলবার নতুন করে বিক্ষোভ করার ঘোষণা দিয়েছে৷ উদারপন্থী দল দুস্তুর পার্টি তাদের ফেসবুক পাতায় এই কর্মসূচির তথ্য প্রকাশ করে সকলকে তাতে অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে৷
মুরসির এমন পদক্ষেপে এবং মিশরের উত্তাল পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন৷ মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ভিক্টোরিয়া নু্ল্যান্ড বলেছেন, ‘‘২২শে নভেম্বর ঘোষিত সিদ্ধান্ত ও আদেশ মিশরের মানুষের এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মনে উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে৷ সেখানকার সাম্প্রতিক বিপ্লবের অন্যতম দাবি ছিল দেশের সব ক্ষমতা একক ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠানের হাতে কুক্ষিগত না করা৷'' ইইউ এবং মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল পৃথক পৃথক বিবৃতিতে এই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে৷
এএইচ / এসি (এএফপি, রয়টার্স)