মিশর
৩০ জুন ২০১২নীল নদের তীরে অবস্থিত সাংবিধানিক আদালতে শপথ গ্রহণের মাধ্যমে মিশরের প্রথম বেসামরিক ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করলেন মোহাম্মেদ মুরসি৷ এছাড়া আরব দুনিয়ার সবচেয়ে জনবহুল দেশের প্রথম নির্বাচিত প্রধান হিসেবেও তিনি আবির্ভূত হলেন৷ শপথ গ্রহণ পরবর্তী বক্তৃতায় ইসলামপন্থী নেতা মোহাম্মেদ মুরসি বলেন, ‘‘আমরা আজ এক অধিকতর ভালো আগামী, এক নতুন মিশর এবং দ্বিতীয় গণপ্রজাতান্ত্রিক দেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করছি৷ আজ মিশরের মানুষ এক নতুন জীবন, নিরঙ্কুশ স্বাধীনতা এবং প্রকৃত গণতন্ত্র ও স্থিতিশীলতার ভিত্তি স্থাপন করল৷''
মুসলিম ব্রাদারহুড দলের সাবেক নেতা মোহাম্মেদ মুরসি প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাঁর দায়িত্ব পালনকালে গত বছরের গণবিক্ষোভের মূল চেতনার প্রতিফলন ঘটাতে চান এবং দেশ পরিচালনায় ও দেশ গঠনে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন৷ তিনি ‘বেসামরিক, সাংবিধানিক এবং মধ্যমপন্থী' মিশর গড়ার ঘোষণা দেন৷ শপথ গ্রহণ করার পর তিনি কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ে যান৷ সেখানে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রী ও বুদ্ধিজীবীদের সামনে প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম বক্তৃতা দেন৷ সেখানে তিনি দৃঢ় কণ্ঠে ফিলিস্তিনিদের সকল ন্যায্য অধিকার আদায় না হওয়া পর্যন্ত তাদের প্রতি মিশরের সমর্থনের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন৷ এছাড়া সিরিয়ায় রক্তপাত ও সংঘাত বন্ধের ডাক দেন মিশরের নতুন প্রেসিডেন্ট মুরসি৷
৬০ বছর বয়সি প্রকৌশলী ও রাজনীতিক মুরসি আনুষ্ঠানিক শপথ গ্রহণের আগে শুক্রবার গণজাগরণের পাদপিঠ তাহরির চত্বরে হাজার হাজার জনতার সামনে নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রতীকী শপথ গ্রহণ করেন৷ সেখানে তিনি প্রেসিডেন্টের দপ্তরকে সামরিক পরিষদের প্রভাবমুক্ত করার ঘোষণা পুনর্ব্যক্ত করেন৷
কিন্তু বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সংসদ ভবনের বদলে সাংবিধানিক আদালতে তাঁর শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান হওয়াটা সামরিক প্রভাবের ইঙ্গিত বহন করে৷ ফলে প্রায় ১৬ মাস আগে গণবিক্ষোভের মুখে প্রেসিডেন্ট পদ থেকে হোসনি মুবারকের অপসারণের পর সামরিক পরিষদ যেভাবে ক্ষমতা কুক্ষিগত করেছে তা পরিবর্তন করতে মুরসি'কে বেগ পেতে হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে৷ এছাড়া প্রেসিডেন্ট হিসেবে মুরসির সামনে সামরিক প্রভাবের পাশাপাশি রয়েছে নানা জাতি-গোষ্ঠীতে বিভক্ত মিশরের সকল মানুষের গ্রহণযোগ্যতা অর্জনের চ্যালেঞ্জ৷
অবশ্য এক্ষেত্রে তিনি বেশ সতর্কতার সাথেই এগুচ্ছেন বলে মনে করা হচ্ছে৷ কারণ তিনি সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একজন যোগ্য প্রধানমন্ত্রী বাছাই করার লক্ষ্যে ইতিমধ্যে সামরিক শাসক ফিল্ড মার্শাল হুসেন তানতাবি, সুন্নি গোষ্ঠী আল-আজহার এবং কপটিক গির্জার প্রতিনিধি দলের সাথে বৈঠক করেছেন৷ এছাড়া দেশটির গণমাধ্যমের সম্পাদকদের সাথে এক বৈঠকে তিনি ‘রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডে ইসলামিকরণ না করার' ব্যাপারেও তাঁর অবস্থান তুলে ধরেন৷
এএইচ / আরআই (এপি, এএফপি)