মিয়ানমারে আফিম চাষ বৃদ্ধি নিয়ে উদ্বেগ
৩১ জানুয়ারি ২০১০বিশ্লেষকরা বলছেন, ‘জাতিসংঘের মাদক এবং অপরাধ বিষয়ক দপ্তর' তথ্যের জন্য মিয়ানমারের সরকারি সূত্রগুলোর ওপর নির্ভর করায় পরিস্থিতির ভয়াবহতা সম্পর্কে তাদের কাছে পর্যাপ্ত তথ্য উপাত্ত নেই৷
মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলীয় শান রাজ্যের পালাউং নারী সংঘে'র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ২০০৫ সালে ওই অঞ্চলটি সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে আসার পর থেকেই সেখানে আফিম চাষ অত্যন্ত দ্রুত বেড়ে চলেছে৷
পালাউং জাতিসত্তার প্রায় ১০ লাখ মানুষের প্রতিনিধিত্বকারী বিচ্ছিন্নতাবাদী সেনারা সরকারি বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধবিরতির পর আত্মসমর্পণ করলে শান রাজ্যের ওই এলাকা পুরোপুরি সেনানিয়ন্ত্রণে চলে যায়৷ স্থানীয় মিলিশিয়াদের সহায়তা নিয়ে তখন থেকেই সেখানে প্রাধান্য বিস্তার করে আসছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী৷
পালাউং নারী সংঘের একজন সমন্বয়কারী আয়ে নাং বলছিলেন, ‘‘আমাদের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে বিগত বছরগুলোতে আফিম চাষে দ্রুত বৃদ্ধি ঘটেছে৷ ২০০৭ থেকে ২০০৯ সালের মধ্যে ‘মান টং' বসতি এলাকায় তা প্রায় ছয়গুণ বেড়ে ৪,০০০ হেক্টর এবং ‘নামখাম' বসতি এলাকায় প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে ৬০০ হেক্টরে উন্নীত হয়েছে৷''
‘মান টং' বসতির একটি গ্রামে জরিপ চালিয়ে দেখা গেছে সেখানকার ১৫ বছরের বেশি বয়সি পুরুষদের প্রায় ৮৫ শতাংশই হয় আফিম না হয় হেরোইনে আসক্ত৷
শানের পালাউং অঞ্চলটি মূলত চা-চাষিদের আবাসস্থল হলেও মিয়ানমারের সরকার চা'য়ের দামের ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে রাখায় দিন দিন চাষিরাও আফিম চাষের দিকে ঝুঁকছে৷ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওই অঞ্চলে অব্যাহত সামরিকায়ন এবং কর বাড়িয়ে সরকারের বিশেষ আঞ্চলিক স্ব-নির্ভরতা নীতির কারণে স্থানীয় সম্প্রদায়ের ওপর চাপ বাড়ছে৷
প্রতিবেদনটির একজন গবেষক লোয়ে দুয়াগ জার বিষয়টি ব্যখ্যা করেন৷ তিনি বলেন, ‘‘সেখানে অবস্থানরত সেনাবাহিনী এবং স্থানীয় মিলিশিয়াদের জীবনযাপনের ব্যয় বহন করতে পালাউং সম্প্রদায়ের মানুষদের৷ লোকজন এখন আর চা চাষে বেশি রোজগার করতে পারছে না৷ তাই পালাউংরা এখন বেশি কর দেওয়ার সামর্থ্য অর্জনের জন্য আফিম চাষ করছে৷ আর তাদের চাষ করা আফিমেই তাদের সন্তান এবং তাদের ভবিষ্যত ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে৷''
সরকারের মাদক নিধন দপ্তরের লোকজন পপি চাষ বন্ধ না করে বিপুল পরিমাণ ঘুষ নিচ্ছে এবং নির্বিঘ্নে আফিম উৎপাদন চালিয়ে যেতে দিচ্ছে৷ প্রতিবেদনটিদে বলা হয়েছে, ৪১টি গ্রামের ‘মান টং' বসতির চাষিরা শুধু ২০০৭-০৮ সালেই কমপক্ষে ৩৭ মিলিয়ন কায়াত বা ২৭ হাজার ইউরো ঘুষ দিয়েছে কর্মকর্তাদের৷
ওদিকে, ‘অল্টারনেটিভ আসিয়ান নেটওয়ার্ক' মুখপাত্র দেব্বি স্টটহার্ট বলছেন, ‘জাতিসংঘের মাদক এবং অপরাধ বিষয়ক দপ্তর' তথ্যের জন্য মিয়ানমারের সরকারি সূত্রগুলোর ওপর নির্ভর করায় পরিস্থিতির ভয়াবহতা সম্পর্কে তাদের কাছে পর্যাপ্ত তথ্য উপাত্ত নেই৷
পালাউং নারী সংঘ মিয়ানমারের সামরিক জান্তার প্রতি আদিবাসী এলাকাগুলো থেকে মিলিশিয়া সংগ্রহ বন্ধ করে আদিবাসী নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে দেশের মাদক সমস্যার মূলোৎপাটনের আহ্বান জানিয়েছে৷
প্রতিবেদক: মুনীর উদ্দিন আহমেদ
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক