1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মিয়ানমারে দুই সাংবাদিকের কারাদণ্ড, বাংলাদেশের তীব্র নিন্দা

৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮

মিয়ানমারে আটক রয়টার্সের দুই সাংবাদিককে সাত বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে সেদেশের আদালত৷ রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে করা মামলার এই রায়ে তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়৷

https://p.dw.com/p/34CXY
Myanmar verurteilte Journalisten
ছবি: Reuters/A. Wang

রয়টার্সের দুই সাংবাদিক ওয়া লন ও কিঁয় সোয়ে ও-কে গত ১২ই ডিসেম্বর ইয়াঙ্গুনের কাছের একটি এলাকা থেকে  গ্রেপ্তার করা হয়৷ তাঁরা দু'জন রাখাইনেমুসলমানদের উপর মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর অভিযান সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করছিলেন৷

২৭শে ডিসেম্বর তাঁদের দু'জনকে আদালতে হাজির করার পর ইয়াঙ্গুনের ইনসেইন কারাগারে পাঠানো হয়৷ পুরো বিশ্বে নিন্দার ঝড় ওঠে৷ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম এবং অধিকার সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে তাঁদের অবিলম্বে মুক্তির দাবি জানানো হয়৷ কিন্তু তাঁদের সব দাবি উপেক্ষা করে এই দুই সাংবাদিককে কারাদণ্ড দিলো আদালত৷

রয়টার্সের ঐ দুই সাংবাদিক বরাবরই তাঁদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, তাঁরা কেবল তাঁদের পেশাগত দায়িত্ব পালন  করছিলেন৷ তাঁরা রাখাইনের একটি গ্রামে গত বছরের সেপ্টেম্বরে ১০ জন রোহিঙ্গা মুসলমানকে হত্যার ঘটনা অনুসন্ধান করছিলেন৷ আর তাঁরা সেখানে গিয়েছিলেন পুলিশের আমন্ত্রণে এবং নৈশভোজের সময় তাঁদের হাতে কিছু নথিপত্র তুলে দিয়েছিল পুলিশ৷ সেই রেস্তোরাঁ ত্যাগ করার পরই ঐ নথিসমেত তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়৷

কিন্তু বিচারক তাঁদের কথায় কোনো আমল দেননি৷ তিনি রায় ঘোষণার সময় বলেন, ‘‘এটা প্রমাণিত যে, আসামিরা রাষ্ট্রের ক্ষতি করতে চেয়েছিল এবং তাই রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা আইন লঙ্ঘন আইনে তাদের দোষী সাব্যস্ত করা হলো৷ তাদের প্রত্যেককে সাত বছর করে কারাভোগ করতে হবে৷ ''  এখন দু'টি পথ খোলা আছে৷ এই দুই সাংবাদিক সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করতে পারেন, অথবা মিয়ানমার সরকার তাঁদের ক্ষমা করে দিতে পারে৷

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গণমাধ্যম বিষয়ক উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেছেন, ‘‘এই ঘটনার দ্বারা আবারও প্রমাণ হলো যে, মিয়ানমার সরকার বাক-স্বাধীনতা এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে দমন করছে৷ এটা এখন একেবারেই পরিষ্কার যে, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে মুখ খুললে সেই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে কঠোর শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে৷ আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই এবং এই দুই সাংবাদিকের অবিলম্বে মুক্তি দাবি করছি৷''

রায়ের পর ইয়াঙ্গুনের মার্কিন দূতাবাস এক বিবৃতিতে তাদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে৷ সেখানে বলা হয়েছে, ‘‘মিয়ানমার যে গণতন্ত্রের পথ থেকে সরে এসেছে এবং বাক-স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে এ ঘটনা সেটাই প্রমাণ করে৷'' পাশাপাশি দুই সাংবাদিকের অবিলম্বে মুক্তিও দাবি করেছে তারা৷

মিয়ানমারে নিযুক্ত ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত রায়ে হতাশা জানিয়ে বলেছেন, ‘‘ব্রিটিশ সরকার এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষ থেকে বলছি, একটি দেশের গণতন্ত্র বজায় রাখতে আইনের শাসন এবং বাক-স্বাধীনতা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়৷ কিন্তু এই রায়ে তার কোনো প্রতিফলনই হয়নি৷''

জাতিসংঘও হতাশা প্রকাশ করে বলেছে, ‘‘কোনো দেশের গণমাধ্যমের স্বাধীনতাই বলে দেয় দেশটি কতটা শান্তিপূর্ণ, সেখানকার বিচার ব্যবস্থা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি কতটা ভালো৷ কিন্তু মিয়ানমারে আদালতের এই রায়ে এগুলোর কোনো প্রতিফলন হয়নি৷'' অস্ট্রেলিয়া, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূতরাও রায়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন৷ 

রয়টার্সের প্রধান সম্পাদক স্টিফেন জে. অ্যাডলার বলেছেন, ‘‘কেবল রয়টার্সের দুই সাংবাদিকের জন্য নয়, বিশ্বের গণমাধ্যমের জন্য আজ একটি দুঃখের দিন৷ মিয়ানমার পুলিশের ষড়যন্ত্রের শিকার তাঁরা৷ মিথ্যা অভিযোগে এই দুই সাংবাদিক ইতোমধ্যে ৯ মাস কারাভোগ করেছেন৷ এই রায় প্রকাশের মাধ্যমে মিয়ানমার গণতন্ত্রের পথ থেকে অনেকটা পিছিয়ে গেল৷ তবে আমরা এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ অব্যাহত রাখবো৷ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই ঘটনায় চুপ করে বসে থাকবে না৷''

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল অবিলম্বে দুই সাংবাদিকের মুক্তির দাবি জানিয়ে বলেছে, ‘‘এই রায় রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত দ্বারা প্রভাবিত৷ এই রায়ের ফলে মিয়ানমারের অন্য সাংবাদিকদের মত প্রকাশের বিষয়ে সতর্ক করে দেয়া হলো৷ অর্থাৎ, সেনাবাহিনীর নিপীড়নের বিরুদ্ধে কোনো কিছু বলা বা লেখা হলে তাদের পরিণতি ভয়াবহ হতে পারে৷''

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া ডিরেক্টর ব্র্যাড অ্যাডামস বলেছেন, ‘‘এই রায়ে এ ধারণা স্পষ্ট হলো যে, মিয়ানমারের বিচারবিভাগ সেনাবাহিনী দ্বারা নিয়ন্ত্রিত৷''

এপিবি/এসিবি (এপি, এএফপি, রয়টার্স)

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য