মিয়ানমারে সহিংসতায় নিহত ৮৯
২৫ আগস্ট ২০১৭শুক্রবার গভীর রাতে শুরু হওয়া সংঘর্ষ এখনও বিভিন্ন স্থানে থেমে থেমে চলার খবর জানিয়েছে দেশটির সংবাদমাধ্যম৷ মিয়ানমারের উত্তর-পশ্চিমের এই রাজ্যে গত বছরের অক্টোবর থেকে চলা সহিংসতায় নতুন মাত্রা যোগ করলো এই হামলা৷ অক্টোবরে একই ধরনের হামলার পর সেনাবাহিনী বড় ধরনের অভিযান চালায়৷ এই অভিযানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছিল সেনা সদস্যদের বিরুদ্ধে৷
অক্টোবর হামলায় জড়িত আরাকান রোহিঙ্গা সেলভেশন আর্মি (এআরএসএ) শুক্রবারের হামলারও দায় স্বীকার করেছে৷ এ ধরনের আরো হামলা হবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছে সশস্ত্র এ সংগঠনটি৷
নিহত ৩২ জনের মধ্যে ২১ জন বিদ্রোহী এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ১১ জন সদস্য রয়েছেন বলে জানিয়েছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী৷
‘‘রাত একটার দিকে বাঙালি সন্ত্রাসীরা উত্তর রাখাইনের মংডুতে একটি পুলিশ স্টেশনে হাতে তৈরি বোমা নিয়ে হামলা চালায়৷ এরপর একই সাথে হামলা চালানো হয় আরো কয়েকটি পুলিশ চেকপোস্টে'', এক বিবৃতিতে জানিয়েছে দেশটির জাতীয় নেতা অং সান সুচির প্রেস দল৷
রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয় না৷ দেশটির সেনাবাহিনী এবং রাজনৈতিক দলগুলো মনে করে রোহিঙ্গা কোনো স্বতন্ত্র জাতিসত্তা নয়, বরং বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে যাওয়া বাঙালি৷ দেশটির নিয়ন্ত্রিত সংবাদমাধ্যমেও অধিকাংশক্ষেত্রে রোহিঙ্গাদের ‘বাঙালি' বলে সম্বোধন করা হয়৷ তবে বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নাগরিক বলেই মনে করে৷
কয়েক দশকের সেনাশাসন থেকে গণতন্ত্রের পথে হাঁটলেও এখনও বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশটিতে ১১ লাখেরও বেশি মুসলিম রোহিঙ্গা নিপীড়ন থামেনি৷ বছরের পর বছর ধরে সাম্প্রদায়িক নির্যাতন, ধরপাকড় ও হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়ে বিপুল সংখ্যায় দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন রোহিঙ্গারা৷ সীমান্তবর্তী বাংলাদেশের বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে বৈধ-অবৈধভাবে মানবেতর জীবনযাপন করছেন অন্তত ৫ লাখ রোহিঙ্গা৷ ভারতেও বিপুল সংখ্যায় রোহিঙ্গাদের বসবাস৷
বাংলাদেশ ও ভারতের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে একাধিকবার উদ্যোগ নেয়া হলেও, তাতে কার্যকর কোনো ফল আসেনি৷
রাখাইন রাজ্যে অস্থিরতা ও সহিংসতা থেকে বাঁচতে শুক্রবার রাত থেকেই দলে দলে রোহিঙ্গা জীবনের ঝুঁকিয়ে নিয়ে নাফ নদী পেরিয়ে বাংলাদেশ সীমান্তে প্রবেশের চেষ্টা করেন৷ তবে প্রতিবারের মতোই বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বা বিজিবি সদস্যরা সীমান্ত থেকে আবার মিয়ানমারে ফেরত পাঠিয়েছেন রোহিঙ্গাদের৷
কয়েকটি নৌকায় আসা মোট ১৪৬ জন রোহিঙ্গাকে খাবার, পানি ও প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়ার পর ফেরত পাঠানো হয় বলে জানিয়েছেন বিজিবি কর্মকর্তারা৷ তবে রাখাইনে সহিংসতা চলতে থাকলে আরো রোহিঙ্গা সীমানা পাড়ি দিতে পারেন বলে আশংকা করছে বাংলাদেশ৷
এদিকে, আগস্টের শুরু দিকে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিভিন্ন রাজ্য সরকারের কাছে ‘অবৈধ অভিবাসীদের চিহ্নিত' করার নির্দেশ দিয়ে চিঠি পাঠিয়েছে৷ এদের মধ্যে প্রায় এক লাখ রোহিঙ্গাও রয়েছে৷ চিঠিতে শরণার্থীদের ‘সম্ভাব্য নিরাপত্তা হুমকি' এবং দেশটির সম্পদের ওপর 'বোঝা' বলে উল্লেখ করা হয়েছে৷ তবে দেশে নির্যাতিত হয়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের জোর করে আবার ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা জানিয়েছে বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন৷
ওদিকে, রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতি তদন্তে জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কোফি আনানকে প্রধান করে গঠিত তদন্ত কমিটি মিয়ানমার সরকারের কাছে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছে৷ এতে রোহিঙ্গাদের বিশ্বের সর্ববৃহৎ ‘স্টেটলেস পিপল' বা ‘দেশহীন জনগোষ্ঠী' হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে৷
রোহিঙ্গাদের ওপর সব ধরনের বিধিনিষেধ প্রত্যাহার, অবাধ চলাচলের স্বাধীনতা ও নাগরিকত্ব দেয়ার ব্যবস্থা করতে সরকারকে আহ্বানও জানিয়েছে কোফি আনান কমিশন৷ তবে এ নিয়ে এখনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি মিয়ানমার সরকার৷
মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী অং সান সু চি গত বছর জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কোফি আনানকে প্রধান করে এই পরামর্শক কমিটি গঠন করেন৷
এডিকে/ডিজি (রয়টার্স)