মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের ৪০ বছর আজ
১৬ ডিসেম্বর ২০১১১৬ই ডিসেম্বর সকালেই খবর ছড়িয়ে পড়েছিল আত্মসমর্পণ করবে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী৷ তাই ঢাকার রাস্তায় বেরিয়ে আসেন সবশ্রেণির মানুষ৷
পাকিস্তানি সেনারা আত্মসমর্পণ করে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে৷ যা এখন সোহরাওয়ার্দি উদ্যান নামে পরিচিত৷এই উদ্যানেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৭ই মার্চের ভাষণে জাতিকে স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত করেন৷ আবার স্বাধীন দেশে ফিরে বঙ্গবন্ধু এখানেই প্রথম ভাষণ দেন৷ সেই আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানের প্রত্যক্ষদর্শীদের একজন ঢাকা ক্লাবের তখনকার মালি রাম সেবক৷এখন তিনি অবশ্য সোহরাওয়ার্দি উদ্যানেই কাজ করেন পিডব্লিউডি'র কর্মচারী হিসেবে৷ তিনি সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে দাঁড়িয়ে ডয়চে ভেলেকে জানান, পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণ করছিল উত্তর দিকের বটগাছের নীচে৷
ঢাকার সূত্রাপুর এলাকায় ২নম্বর সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম খানের কাছে পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের দিনটি তার জীবনের সবচেয়ে আনন্দের দিন ৷
সেই আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের উপ-প্রধান সেনাপতি এয়ার ভাইস মার্শাল এ কে খন্দকার ৷ তখন তিনি ছিলেন বিমান বাহিনীর গ্রুপ ক্যাপ্টেন৷ তিনি জানান, প্রধান সেনাপতি কর্নেল এম এ জি ওসমানিকে যোগাযোগ করতে না পারায় তাকে নিয়ে ঢাকায় আসেন ভারতীয় মিত্রবাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা৷ তারা কোলাকাতা থেকে প্রথমে বিমানে করে আগরতলা যান৷ সেখান থেকে হেলিকপ্টারে ঢাকার তেজগাঁ বিমান বন্দরে আসেন৷
বিমানন্দর থেকে তারা সোজা চলে যান সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে৷ তখন রাস্তার দু'ধারে বিজয়োল্লাস শুরু হয়ে গেছে৷ এ কে খন্দকার ডয়চে ভেলেকে জানান, কয়েক মিনিটের অনুষ্ঠানে আত্মসমর্পণ দলিলে মুক্তি এবং মিত্র বাহিনীর পক্ষে সই করেন লে. জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা৷ আর পরাজিত পাকিস্তানের পক্ষে সই করেন ইষ্টার্ন কমান্ডের প্রধান লে. জেনারেল আমির আব্দুল্লাহ খান নিয়াজি৷
সেই আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে অস্ত্র সমর্পণ করতে গিয়ে কেঁপে উঠেছিলেন পাকিস্তানি জেনারেল নিয়াজি৷
পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর এই আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে বাঙালির বিজয় সূচিত হয়৷ আর এই স্বাধীনতার জন্য বাঙালিকে দিতে হয়েছে চরম মূল্য৷ ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ বাঙালি প্রাণ দিয়েছে৷ দু'লাখ মা-বোন হারিয়েছেন সম্ভ্রম৷ তাদের ত্যাগেই উড়ছে বিজয় কেতন৷
প্রতিবেদন: হারুন উর রশীদ স্বপন, ঢাকা
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক