1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘মুক্তিযুদ্ধের উদ্দেশ্য আজও বাস্তবায়ন হয়নি'

১০ নভেম্বর ২০১১

একাত্তরের মুক্তিসংগ্রামকে ঘিরে তৈরি হয়েছিল একটি গ্রুপ, নাম ছিল ‘স্বাধীন বাংলা নিউক্লিয়াস'৷ সেই গ্রুপের সদস্য ডা. রাজেন্দ্র প্রসাদ চৌধুরী৷ মুক্তিযুদ্ধের এই বীর সেনা স্বাধীনতার চল্লিশ বছর পর শোনালেন হতাশার কথা৷

https://p.dw.com/p/137Zp
national_memorial.jpg These photos are taken by me & i permit to use Maskwaith Ahsan and his associates. With Regards Harun Ur Rashid Swapan
মুক্তিযুদ্ধের উদ্দেশ্য নিয়ে আজও প্রশ্ন রয়ে গেছেছবি: Harun Ur Rashid Swapan

চট্টগ্রামের বোয়ালখালির বাসিন্দা রাজেন্দ্র প্রসাদ চৌধুরী৷ একাত্তরে তাঁর বয়স ছিল মাত্র ২২ বছর৷ স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ অনিবার্য, এই বিশ্বাস যাদের মনে বদ্ধমূল হয়ে গিয়েছিল তিনি ছিলেন তাদেরই একজন৷ তাই মুক্তিযুদ্ধের আনুষ্ঠানিক ঘোষণার বহু আগে থেকেই যুদ্ধের প্রস্তুতি শুরু করেন চৌধুরী৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘মুক্তিযুদ্ধ শুরুর প্রাক্কালে যখন কালুরঘাটে প্রতিরোধ যুদ্ধ শুরু হয়৷ সেই প্রতিরোধ যুদ্ধে যোগদানের মাধ্যমে আমি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করি৷'' 

উত্তর প্রদেশে প্রশিক্ষণ

একাত্তরে পাক হানাদারদের মোকাবিলা করতে মনোবল যথেষ্টই ছিল সাধারণ জনতার৷ তবে ঘাটতি ছিল অস্ত্রের, প্রশিক্ষণের৷ প্রতিবেশী দেশ ভারত অগুনতি মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণের আয়োজন করেছিল সেসময়৷ কোটি কোটি বাংলাদেশি শরণার্থীকে সেসময় সেদেশে আশ্রয় দিয়েছে ইন্দিরা গান্ধী সরকার৷ রাজেন্দ্র প্রসাদ চৌধুরীও যুদ্ধ শুরুর পর গেরিলা প্রশিক্ষণ নিতে ভারতের গিয়েছিলেন৷ তিনি বলেন, ‘‘ভারতের উত্তর প্রদেশ থেকে প্রশিক্ষণ শেষে চট্টগ্রামের বোয়ালখালিতে যুদ্ধ পরিচালনা করি৷''

A Bangladeshi boy places a bouquet before a portrait of country's independence leader Sheikh Mujibur Rahman at Dhanmondi in Dhaka, Bangladesh, Thursday, March 26, 2009. Bangladeshis celebrated 38 years of independence Thursday amid tight security as tens of thousands of people visited a national memorial outside the capital to mark the split from Pakistan in which millions of people died. (AP Photo/Pavel Rahman)
পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্যোগছবি: AP

সম্মুখ যুদ্ধ

মুক্তিযুদ্ধের অনেক স্মৃতি এখনো মনে করতে পারেন রাজেন্দ্রপ্রসাদ৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি জানালেন নভেম্বরের এক যুদ্ধের কথা৷ ফটিকছড়ির সেই লড়াইয়ে অনেক পাক সেনা নিহত হয়৷ তিনি বলেন, ‘‘পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে ফটিকছড়িতে আমাদের সম্মুখ যুদ্ধ হয়৷ যুদ্ধে তারা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়৷ অনেক পাক হানাদার সেখানে মৃত্যুবরণ করে৷''

চৌধুরীর দলের সেনাদের ভাগ্য ভালো বলতে হবে৷ নয় মাসের যুদ্ধে অনেকবার শত্রুর মোকাবিলা করলেও সেদলের কেউ নিহত হননি৷ এই প্রসঙ্গে রাজেন্দ্রপ্রসাদ চৌধুরী বলেন, ‘‘একাত্তরে বিভিন্ন জায়গায় পাক বাহিনী, রাজাকার, আল-বদর, আল-শামসের সঙ্গে আমাদের যুদ্ধ হয়েছে৷ এতে অনেক প্রাণ হারিয়েছে বা পালিয়ে গেছে৷ তবে আমার সঙ্গের কোন সেনা মারা যায়নি৷''

হতাশ চৌধুরী

নয় মাসের স্বাধীনতা যুদ্ধ শেষে শুরু হয় রাজেন্দ্রপ্রসাদের জীবন সংগ্রাম৷ আক্ষেপ করেই তিনি বললেন, সরকারি কোন চাকুরি জোটেনি তাঁর কপালে৷ তাই বলে অবশ্য থেমে যায়নি জীবনের গতি৷ বর্তমানে বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত তিনি৷ স্বাধীনতার চল্লিশ বছর সম্পর্কে জানতে চাইলে চৌধুরী বলেন, ‘‘দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ভেবেছিলাম কোনরকমে ডাল-ভাত খেয়ে জীবন ধারন করব৷ মুক্তিযুদ্ধের যে আদর্শ তা বাস্তবায়িত হবে৷ কিন্তু দুঃখ এবং দুর্ভাগ্যের বিষয় যে, মুক্তিযুদ্ধের উদ্দেশ্য আজও বাস্তবায়ন হয়নি৷''

তিনি বলেন, ‘‘এদেশের মানুষ দু'মুঠো খেয়ে বাস করবে৷ দেশপ্রেম থাকবে৷ এদেশের মানুষ যে স্বাধীন জাতি সেটার গর্ব অনুভব করবে৷ এটাই ছিল আমাদের মূল উদ্দেশ্য৷''

প্রতিবেদন: আরাফাতুল ইসলাম

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক