‘মুক্তিযুদ্ধের উদ্দেশ্য আজও বাস্তবায়ন হয়নি'
১০ নভেম্বর ২০১১চট্টগ্রামের বোয়ালখালির বাসিন্দা রাজেন্দ্র প্রসাদ চৌধুরী৷ একাত্তরে তাঁর বয়স ছিল মাত্র ২২ বছর৷ স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ অনিবার্য, এই বিশ্বাস যাদের মনে বদ্ধমূল হয়ে গিয়েছিল তিনি ছিলেন তাদেরই একজন৷ তাই মুক্তিযুদ্ধের আনুষ্ঠানিক ঘোষণার বহু আগে থেকেই যুদ্ধের প্রস্তুতি শুরু করেন চৌধুরী৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘মুক্তিযুদ্ধ শুরুর প্রাক্কালে যখন কালুরঘাটে প্রতিরোধ যুদ্ধ শুরু হয়৷ সেই প্রতিরোধ যুদ্ধে যোগদানের মাধ্যমে আমি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করি৷''
উত্তর প্রদেশে প্রশিক্ষণ
একাত্তরে পাক হানাদারদের মোকাবিলা করতে মনোবল যথেষ্টই ছিল সাধারণ জনতার৷ তবে ঘাটতি ছিল অস্ত্রের, প্রশিক্ষণের৷ প্রতিবেশী দেশ ভারত অগুনতি মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণের আয়োজন করেছিল সেসময়৷ কোটি কোটি বাংলাদেশি শরণার্থীকে সেসময় সেদেশে আশ্রয় দিয়েছে ইন্দিরা গান্ধী সরকার৷ রাজেন্দ্র প্রসাদ চৌধুরীও যুদ্ধ শুরুর পর গেরিলা প্রশিক্ষণ নিতে ভারতের গিয়েছিলেন৷ তিনি বলেন, ‘‘ভারতের উত্তর প্রদেশ থেকে প্রশিক্ষণ শেষে চট্টগ্রামের বোয়ালখালিতে যুদ্ধ পরিচালনা করি৷''
সম্মুখ যুদ্ধ
মুক্তিযুদ্ধের অনেক স্মৃতি এখনো মনে করতে পারেন রাজেন্দ্রপ্রসাদ৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি জানালেন নভেম্বরের এক যুদ্ধের কথা৷ ফটিকছড়ির সেই লড়াইয়ে অনেক পাক সেনা নিহত হয়৷ তিনি বলেন, ‘‘পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে ফটিকছড়িতে আমাদের সম্মুখ যুদ্ধ হয়৷ যুদ্ধে তারা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়৷ অনেক পাক হানাদার সেখানে মৃত্যুবরণ করে৷''
চৌধুরীর দলের সেনাদের ভাগ্য ভালো বলতে হবে৷ নয় মাসের যুদ্ধে অনেকবার শত্রুর মোকাবিলা করলেও সেদলের কেউ নিহত হননি৷ এই প্রসঙ্গে রাজেন্দ্রপ্রসাদ চৌধুরী বলেন, ‘‘একাত্তরে বিভিন্ন জায়গায় পাক বাহিনী, রাজাকার, আল-বদর, আল-শামসের সঙ্গে আমাদের যুদ্ধ হয়েছে৷ এতে অনেক প্রাণ হারিয়েছে বা পালিয়ে গেছে৷ তবে আমার সঙ্গের কোন সেনা মারা যায়নি৷''
হতাশ চৌধুরী
নয় মাসের স্বাধীনতা যুদ্ধ শেষে শুরু হয় রাজেন্দ্রপ্রসাদের জীবন সংগ্রাম৷ আক্ষেপ করেই তিনি বললেন, সরকারি কোন চাকুরি জোটেনি তাঁর কপালে৷ তাই বলে অবশ্য থেমে যায়নি জীবনের গতি৷ বর্তমানে বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত তিনি৷ স্বাধীনতার চল্লিশ বছর সম্পর্কে জানতে চাইলে চৌধুরী বলেন, ‘‘দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ভেবেছিলাম কোনরকমে ডাল-ভাত খেয়ে জীবন ধারন করব৷ মুক্তিযুদ্ধের যে আদর্শ তা বাস্তবায়িত হবে৷ কিন্তু দুঃখ এবং দুর্ভাগ্যের বিষয় যে, মুক্তিযুদ্ধের উদ্দেশ্য আজও বাস্তবায়ন হয়নি৷''
তিনি বলেন, ‘‘এদেশের মানুষ দু'মুঠো খেয়ে বাস করবে৷ দেশপ্রেম থাকবে৷ এদেশের মানুষ যে স্বাধীন জাতি সেটার গর্ব অনুভব করবে৷ এটাই ছিল আমাদের মূল উদ্দেশ্য৷''
প্রতিবেদন: আরাফাতুল ইসলাম
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক