মুক্তিযোদ্ধা গীতা ও ইরা করকে স্বীকৃতি প্রদানের আশ্বাস
১৯ জানুয়ারি ২০১২তবে গণমাধ্যমে তাঁদের কাজের বিবরণ প্রকাশের পর এখন শীঘ্রই তাঁদের নাম মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার আশ্বাস দিয়েছেন রাজবাড়ী মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার আবুল হোসেন৷
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে প্রথম যখন নারীদের অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়, তখন প্রথম পাঁচ জন সাহসী নারীকে নিয়ে গোবরা শিবিরে শুরু হয় যুদ্ধের প্রশিক্ষণ৷ সেই প্রথম পাঁচ জনের মধ্যে ছিলেন রাজবাড়ীর দুই বোন গীতা ও ইরা কর৷ অথচ তাঁরা বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের ৪০ বছর পরেও নিজেদের কাজের স্বীকৃতি পাননি৷ এ ব্যাপারে গীতা কর বলেন, ‘‘বিভিন্ন সময় এবং বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরে ঘুরেও কোন কাজ হয়নি৷ বরং স্থানীয় দপ্তর থেকে বলা হয় মন্ত্রণালয়ে যেতে হবে৷ আর মন্ত্রণালয় বলে স্থানীয় পর্যায়ে যোগাযোগ করতে৷’’
স্বাধীনতা যুদ্ধে সাহসী ও ত্যাগী ভূমিকা রাখার পরেও কেন বঞ্চিত গীতা ও ইরা কর - এ সম্পর্কে তাঁদের ভগ্নিপতি মতিলাল অধিকারী বলেন, ‘‘উনাদের পরিবারের অবস্থা স্বচ্ছল ছিল না৷ মুক্তিযুদ্ধের পর গীতা ও ইরা কর দেশে ফিরে সংসারের হাল ধরেন৷ তারপরেও তাঁরা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল এবং মুক্তিযোদ্ধা সংসদসহ বেশ কিছু দপ্তরে দৌড়ঝাঁপ করেছেন৷ তাঁদেরকে আশ্বাসও দেওয়া হয়েছিল যে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় তাঁদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হবে৷ কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন ফল হয়নি৷ এর পেছনে কারণ হিসেবে আমার কাছে মনে হয়েছে যে, মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নারীদের নাম তালিকাভুক্ত করার ক্ষেত্রে বিশেষ অবহেলা রয়েছে৷ এছাড়া এই তালিকা যারা তৈরি করেন তাঁদের ব্যাপারে আমার সংশয় রয়েছে৷ ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান খুন হওয়ার পর যারা ক্ষমতায় এসেছে তারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তি৷ ফলে পঁচাত্তরের পর থেকে যখনই মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে, তখনই দেখা গেছে নিজেদের পছন্দমতো কিছু মানুষকে এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে বিশেষ সুবিধা প্রদান করা হয়েছে৷ ফলে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা যারা তাদের খুঁজে বের করে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি৷ এমনকি রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় পরিবর্তন ঘটে - এটা খুবই আশ্চর্যজনক ব্যাপার৷''
রাজবাড়ীর সাহসী নারী গীতা ও ইরা করের স্বীকৃতি প্রসঙ্গে রাজবাড়ী থেকে প্রকাশিত দৈনিক মাতৃকণ্ঠ পত্রিকার সম্পাদক খোন্দকার আব্দুল মতিন ডয়চে ভেলে'কে বলেন, ‘‘এটা আসলেই দুঃখজনক৷ দুই বোন গীতা কর ও ইরা কর ছাড়াও রাজবাড়ীতে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হওয়া সত্ত্বেও স্বীকৃতি পায়নি এরকম আরও অনেকে আছে৷ আসলে যারা মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা রেখেছে তাঁরা যদি আজও স্বীকৃতি না পান তা আমাদের বিজয়ের প্রকৃত অর্থই ম্লান করে দেয়৷ এমনকি রাজবাড়ীর মুক্তিযোদ্ধাদের যে তালিকা রয়েছে সেখানে প্রায় ২০ থেকে ৩০ শতাংশ ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা রয়েছে৷ অথচ যারা প্রকৃতপক্ষেই মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন তারা এখনও স্বীকৃতি পাননি৷ তবে গীতা ও ইরা করের ব্যাপারে আমরা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি৷ তারা বলেছে যে, উনারা তালিকায় অন্তর্ভুক্তির জন্য আবেদন করেননি৷ আবেদন করলে তাঁদের রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতির ব্যাপারে জেলা কমান্ডার চেষ্টা করবেন বলে জানিয়েছেন৷ অবশ্য মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা নিয়ে অসাধুতার কারণে অনেক প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা নিজেদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে পরিচয় দিতেও চান না৷ তাই আমি মনে করি সরকারের উচিত আদমশুমারি কিংবা শিক্ষার্থী জরিপের মতো ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে এবং পাড়ায় পাড়ায় জরিপ চালিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা হালনাগাদ করা উচিত৷''
মুক্তিযোদ্ধা সংসদের রাজবাড়ী জেলা ইউনিট কমান্ডার আবুল হোসেন ডয়চে ভেলের সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘‘মূল বিষয় হচ্ছে ১৯৭৫ সালের পর থেকে স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি ক্ষমতায় এসে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় রদবদল করেছে এবং অমুক্তিযোদ্ধাদেরকেও তালিকায় স্থান দিয়েছে৷ এমনকি রাজবাড়ী জেলার তালিকায় ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার নাম রয়ে গেছে৷ এমনকি অনেক রাজাকারও কিন্তু আমাদের তালিকায় রয়ে গেছে৷ ফলে আমার সাথে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছে, যুদ্ধ করেছে এমন অনেকেই পরে তালিকায় নিজেদের নাম লেখাতে অনীহা প্রকাশ করেছেন৷ তবে এখন নতুন করে এই তালিকা যাচাই-বাছাই করে দেখা হচ্ছে৷ গীতা ও ইরা কর মুক্তিযুদ্ধের সময় যে ভূমিকা রেখেছে, তা আমি শুনেছি এবং তাঁরা এই তালিকায় স্থান পাওয়ার যোগ্য৷ তাই আমি মনে করি, তাঁরা এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হবেন ইনশাআল্লাহ৷''
প্রতিবেদন: হোসাইন আব্দুল হাই
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক