মুজিববর্ষ পালনে সরকারি বরাদ্দ ১০০ কোটি টাকা
১৭ জানুয়ারি ২০২০মুজিব বর্ষের মূল ফোকাস হলো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কর্ম ও জীবন দেশে বিদেশে তুলে ধরা৷
মুজিব বর্ষে ব্যয়ের জন্য ১০০ কোটি টাকা বাজেটের সাধারণ খাতের টাকা৷ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে মুজিব বর্ষ নিয়ে বৈঠকের সারসংক্ষেপ থেকে জানা যায় এই ১০০ কোটি টাকার ৪০ কোটি ৬২ লাখ ৯০ হাজার টাকা এরইমধ্যে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে৷ বাজেটের বাকি ৫৯ কোটি ৩৭ লাখ ১০ হাজার টাকা এখনো ছাড় করা হয়নি৷
যা ছাড় করা হয়েছে তারমধ্যে জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির জন্য ২১ কোটি ১৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা, মিডিয়া সেন্টারের জন্য ৪৩ লাখ ৪০ হাজার৷ ভিডিও, চলচ্চিত্র নির্মাণে ১২ কোটি ৫০ লাখ৷ মোটর সাইকেল মেরামতের জন্য দুই লাখ৷ ৫৩ জেলায় ৫৫টি ক্ষণ গণনা যন্ত্রের জন্য ছয় কোটি ৫২ লাখ৷
১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর শততম জন্মদিনে মুজিব বর্ষ শুরু হবে সবচেয়ে বড় অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে৷ আর শেষ হবে ২০২১ সালের ১৭ মার্চ আরেকটি বড় অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে৷ দু'টি অনুষ্ঠানেই বিদেশী রাষ্ট্রনায়ক ও মেহমানরা থাকবেন৷ এরইমধ্যে ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে মুজিব বর্ষের ক্ষণ গননা শুরু হয়েছে৷
এই এক বছরে সব মাধ্যমেই বঙ্গবন্ধুকে তুলে ধরা হবে৷ বঙ্গববন্ধু কন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার (১৫ জানুয়ারি) সংসদে বলেছেন,‘মুজিববর্ষ পালনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বঙ্গবন্ধুর কর্মময় জীবন আরও ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হবে ৷ এর ফলে বিশ্ববাসী নতুন করে বঙ্গবন্ধুর আত্মত্যাগ ও বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবন সম্পর্কে জানার সুযোগ পাবেন৷'
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০২০-২১ সালের জন্য ইউনেস্কোর গ্রহণ করা ৫৯টি বার্ষিকী উদযাপনের প্রস্তাবের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন৷ বঙ্গবন্ধুকে কেবল একজন রাজনৈতিক নেতা হিসেবে নয়, বরং সাধারণ মানুষের অধিকার আদায়ের প্রতীক হিসেবে এই সিদ্ধান্ত গ্রহনে ইউনেস্কো উদ্যোগী হয়৷ এক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর অবিচল সংগ্রাম ও ত্যাগের বিষয়গুলো ইউনেস্কো বিশেষভাবে বিবেচনা করেছে৷'
মুজিব বর্ষ উদযাপনে মোট দু'টি জাতীয় পর্যায়ের কমিটি কাজ করছে৷ একটি হলো: জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় উদযাপন কমিটি৷ এই কমিটির প্রধান হলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ এই কমিটিতে আছেন স্পিকার, প্রধান বিচারপতি, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, লেখক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, ক্রীড়াবিদ, সাংবাদিকসহ দেশের বিশিষ্ট জনেরা৷ এর মোট সদস্য ১২০৷ এই কমিটির সদস্য সচিব হলেন ড. কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী৷
আরেকটি হলে: জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি৷ এই কমিটির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম৷ এর সদস্য সংখ্যা ৮০ জন৷ ড. কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী এই কমিটির প্রধান সমন্বয়ক৷ তিনি দুই কমিটিতেই প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিব পদমর্যাদায় কাজ করছেন৷
মুজিব বর্ষে মোট ২৯৩টি কর্মসূচির চূড়ান্ত অনুমোদন হয়েছে৷ প্রধান কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- ১৭ মার্চ জাতীয় প্যারেড স্কোয়ারে বঙ্গবন্ধুর শততম জন্মদিনের অনুষ্ঠান৷ ২০২১ সালের ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠান৷ এই অনুষ্ঠান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বা অথবা জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় হতে পারে৷ স্থান এখনো চূড়ান্ত হয়নি৷
বছরব্যাপী ঢাকাসহ সারাদেশে নানা অনুষ্ঠানের কর্মসূচি আছে৷ বিদেশে বাংলাদেশের দূতাবাসগুলোও অনুষ্ঠান করবে৷ এছাড়া বিশ্বের কয়েকটি দেশে বঙ্গবন্ধুর ওপর মিডিয়া কনফারেন্স করা হবে৷ ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন এবং বিশ্বভারতীসহ বিদেশী আরো পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধু চেয়ার স্থাপন৷ইউনিভার্সিটি অব ক্যামব্রিজে বঙ্গবন্ধু সেন্টার, লন্ডনে মাদাম তুসো মিউজিয়ামে ও জাতিসংঘ সদর দপ্তরে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপন৷ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বঙ্গবন্ধুর নামে একাধিক পুরস্কার প্রবর্তন৷ বঙ্গবন্ধুর ওপর ২৪ ঘন্টার ভিডিও চিত্র নির্মাণ৷ সাতটি ওয়েব সিরিজ, ১২টি স্বল্প দৈর্ঘ্য চলচিত্র ও ৬টি শিশুতোষ এনিমেটেড চলচিত্র নির্মাণ করা হবে৷
বঙ্গবন্ধুর নির্বাচিত ভাষণ ইংরেজি ছাড়াও আরো ১২টি হিন্দি, উর্দু, ফরাসি, জার্মান, চাইনিজ, আরবি, ফার্সি, স্প্যানিশ, রুশ, ইটালিয়ান, কোরিয়ান ও জাপানি ভাষায় অনুবাদ করা হবে৷ বঙ্গবন্ধুর জীবনীভিত্তিক ১০০ প্রকাশনা হবে৷
এই সব উদ্যোগ এবং আয়োজন করছে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়৷ আর এর বাইরে সারাদেশে বেসরকারী পর্যায়ে বছরব্যাপী নানা আয়োজন রয়েছে ৷ প্রধানমন্ত্রী সংসদে কলেছেন, বেসরকারী উদ্যোগে অনেক প্রস্তাব আসছে৷ তকে শৃঙ্খলার কথা মাথায় রেখে সব প্রস্তাব গ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছেনা৷
ড. কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী জানান,‘‘মুজিব বর্ষের মূল ফোকাস জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান৷ তাঁকে যতভাবে সম্ভব যত দিক দিয়ে সম্ভব এই মুজিব বর্ষে তুলে ধরা হবে৷ দেশে বিদেশে সব জায়গায়৷ এরইমধ্যে মুজিববর্ষের একটি প্ল্যানবুক বেরিয়েছে৷ এটা কয়েকদিনের মধ্যেই অনলাইনে দেয়া হবে৷ তখন সবাই মুজিব বর্ষের পুরো পরিকল্পনা দেখতে পাবেন৷ আর বঙ্গবন্ধুকে যতগুলো মাধ্যম আছে সব মাধ্যমেই তুলে ধরা হবে৷ বাজেটে যে বরাদ্দ রয়েছে তার বাইরে অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে তাদের উদ্যোগে৷''
এদিকে মুজিব বর্ষে ভুটানের রাজা জিগমে খেশার ন্যামগেল ওয়াংচুক, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি, ভারতের কংগ্রেস দলের সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধি, সংযুক্ত আরব আমিরাতের ক্রাউন প্রিন্স জায়েদ আল নাহিয়ান, জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মাদ, ওআইসি সেক্রেটারি জেনারেল, আরব লীগের সাবেক কর্মকর্তা আমির মূসা, ইউনেস্কোর সাবেক প্রধান নির্বাহী ইরিনা বুকোভাসহ অনেককে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে৷ অনেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এবং অনেকে মৌখিকভাবে আসতে রাজি হয়েছেন বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন৷ তিনি জানিয়েছেন, ‘‘১৭ মার্চের অনুষ্ঠানে কাকে আনা হবে তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি৷ বছরজুড়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠান হবে এবং সেখানে তারা অংশগ্রহণ করবেন৷''
গবেষক আফসান চৌধুরী মনে করেন,‘‘শেখ মুজিবের মত সবলতম চরিত্র আমাদের ইতিহাসে আর হয়নি৷ তার চরিত্রের বহুমাত্রিকতা রয়েছে৷ সেগুলো নিয়ে আলোচনা হওয়া প্রয়োজন৷ নির্মোহ আলোচনা দরকার৷ মুজিব বর্ষের অনুষ্ঠান শুরু হলে বোঝা যাবে সেই আয়োজন আছে কিনা৷ অনুদানের টাকায় অনেক কিছু হবে৷ কিন্তু তা দিয়ে শেখ সাহেব কেন ঐতিহাসিক চরিত্র তা তুলে ধরা সম্ভব হবে বলে মনে করিনা৷ কারণ অনুদানের টাকায় যারা কাজ করেন তারা সব সময় নির্মোহভাবে কাজ করতে পারেন না৷মানসিক নিরাপত্তাহীনতায় ভোগার কোনো দরকার নেই শেখ মুজিবের সমর্থকদের৷ শেখ মুজিব একাই নিজে ইতিহাসে সবল৷ তাকে যারা ছোট করতে চায় তারা নিজেরাই ছোট হয়৷''