মুম্বইয়ের ম্যানগ্রোভ অরণ্য হুমকির মুখে
৫ ডিসেম্বর ২০১৯ভারতের সবচেয়ে জনবহুল শহর মুম্বইতে সম্ভবত দুঃসময় আসছে৷ জলবায়ু বিজ্ঞানীদের পূর্বাভাষ অনুযায়ী আরব সাগরে পানির উচ্চতা বেড়ে চলায় আগামী কয়েক শতাব্দীর মধ্যে শহরটি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে৷
কোলি সম্প্রদায় মুম্বইয়ের আদি বাসিন্দা৷ জেলেরা বহু প্রজন্ম ধরে সমুদ্র থেকে মাছ ধরে জীবনধারণ করতো৷ বর্তমানে তারা কোণঠাসা হয়ে পড়েছে৷ শহরের তিন দিকে আরব সাগর ক্রমাগত আঘাত হেনে চলেছে৷
উপকূলে ক্ষয়ের কারণে মাত্র ১০ বছরে মুম্বইয়ের কিছু জেলেদের গ্রাম ১৮ মিটার জমি হারিয়েছে৷ তবে আশার কথা, উপকূলের অনেক অংশে ম্যানগ্রোভ অরণ্য এক প্রতিরক্ষা বলয় সৃষ্টি করেছে৷ সমুদ্র ও তটের মাঝের এই গাছপালা ধাবমান ঢেউয়ের জোর কমিয়ে দেয়৷ ফলে তটের জমি রক্ষা পায়৷
ম্যানগ্রোভ বাড়তি পানি শুষে নিয়ে অনেকটা স্পঞ্জের মতোও কাজ করে৷ ফলে বন্যাও হয় না৷ এই অরণ্য বাতাসে ক্ষুদ্র বিন্দু ছেড়ে দিয়ে শহরের তাপমাত্রাও নিয়ন্ত্রণ করে৷ তবে মুম্বইয়ের ম্যানগ্রোভ কঠিন বিপদের মুখে পড়েছে৷
জেলে হিসেবে কমলাকর পাওয়ার নিজের ভিটেমাটির ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভুগছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘নির্বিচারে ম্যানগ্রোভ কাটা হচ্ছে৷ চারদিকে জঞ্জাল ছড়িয়ে রয়েছে৷ পানিতেই জঞ্জাল ফেলা হচ্ছে৷ এমনকি কারখানা থেকেও এখানে রাসায়নিক ছাড়া হচ্ছে৷ একবার তেলবাহী একটি নৌকা ডুবে যাওয়ায় পানি দূষিত হয়েছিল৷ এমন সব কারণে অনেক মাছ মরে গেছে৷ যেগুলি টিকে গেছে, সেগুলিরও যথেষ্ট দ্রুত বংশবৃদ্ধি ঘটছে না৷’’
কমলাকরের জালে মাছ কমে চলেছে৷ ম্যানগ্রোভের অবস্থা যে ভালো নেই, এর ফলে তা স্পষ্ট হয়ে উঠছে৷ নির্বিচার দূষণের কারণে মুম্বইয়ের ম্যানগ্রোভের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে৷ গত কয়েক দশকে প্রায় ৪০ শতাংশ জঙ্গল লুপ্ত হয়েছে৷ এ ছাড়াও অন্য ক্ষতি হয়েছে৷ ‘বনশক্তি’ সংগঠনের স্টালিন দয়ানন্দ বলেন, ‘‘বেআইনি নির্মাণ চলছে৷ মানুষ তার বাড়িঘর মেরামতি করছে৷ প্রাচীর, কাঠামো ভেঙে দিচ্ছে৷ ধ্বংসাবশেষ ম্যানগ্রোভের উপর ফেলা হচ্ছে৷ তাছা়ড়া সরকারই ম্যানগ্রোভের জন্য অন্যতম বড় হুমকি হয়ে উঠেছে, কারণ থানের খাঁড়ির কাছে সরকার তিনটি আবর্জনার স্তূপ সৃষ্টি করেছে৷ অথচ সেখানেই ম্যানগ্রোভের ঘন জঙ্গল ছিল৷ আবর্জনা ম্যানগ্রোভে মিশে গিয়ে গোটা প্রণালী নষ্ট করে দিচ্ছে৷ এককালে তাজা বাতাস নিতে মানুষ সেখানে যেত৷ এখন সেখানে দুর্গন্ধে দাঁড়ানো যায় না৷’’
২০১৮ সালে ম্যনগ্রোভ ধ্বংসের একশোটিরও বেশি ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে৷ সরকারি ও বেসরকারি জমিতে এমন ধ্বংসলীলা চলছে৷ সরকার এখন বাড়তি নিরাপত্তা কর্মী নিয়োগ করে উপকূলবর্তী জঙ্গলে টহলদারির ব্যবস্থা করেছে৷ জবরদখলকারী ও কাঠুরেদের রুখতে কিছু রক্ষীকে এমনকি পেলেট গান দেওয়া হয়েছে৷
ম্যানগ্রোভ ছাড়া মুম্বই যে সমুদ্রের উচ্চতা বাড়ার বিপদ মোকাবিলা করতে পারবে না, তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই৷
কার্মেন মায়ার/এসবি