পোর্টেবল বাড়ি
১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫আকার ও গুণাগুণ এক রেখে আয়তন কমিয়ে আনাই ‘টাইনি হাউস' ধারণার মূলমন্ত্র৷ ছোট আকারের এই মিনি-বাড়ি প্রায় যে কোনো জায়গায় বসানো চলে – এমনকি জলের উপরেও৷
অস্ট্রিয়ার স্টাইয়ারমার্ক অঞ্চলে শোভা পাচ্ছে এমনই এক বাড়ি৷ গ্রাৎস শহর ছেড়ে সপ্তাহান্তে মজবুত কাঠের তৈরি এই বাড়িতে চলে আসেন স্থপতি মার্টিনা ফাব্রিৎসিউস ও পরিবেশ প্রযুক্তিবিদ পেটার নিস৷ ২২ বর্গ মিটারের মধ্যেই বসার ও শোবার ঘর৷ রয়েছে ছোট্ট রান্নার জায়গা ও বাথরুম৷ এই দম্পতি জেনেশুনেই এমন ছোট বাড়িতে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন৷ পেটার নিস বলেন, ‘‘গোছগাছ করা, ঘর সাজানোর মতো বিষয়ের বদলে মূল বিষয়ের প্রতি নজর দেওয়াই আসল কথা৷'' মার্টিনা ফাব্রিৎসিউস মনে করেন, ‘‘কাজ কম, হাঁটাহাঁটিও কম করতে হয়, দ্রুত বাইরে যাওয়া যায়, পরিষ্কারও কম করতে হয়৷''
‘দ্য নিউ নোম্যাডস' নামের ছবির বইয়ে তাঁদের বাড়িটিও বিষয় হিসেবে স্থান পেয়েছে৷ ‘মিনিয়েচার হাউস' সম্পর্কে তাতে প্রাথমিক ধারণা পাওয়া যায়৷ প্রকাশক স্ভেন এমান গোটা বিশ্ব থেকে এমন দৃষ্টান্ত সংগ্রহ করেছেন৷ যেমন ছোট্ট এক টাওয়ার-বাড়ি, ডিমের মতো দেখতে ক্যাপসুল-বাড়ি, গাছের উপর বাড়ি অথবা এক ডিজাইনার যাযাবর তাঁবু৷ অভাবের তাড়নায় নয়, ঠান্ডা মাথায় এমন ছোট থাকার জায়গা তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ স্ভেন এমান বলেন, ‘‘আমরা আসলে অতিরিক্ত সমৃদ্ধির যুগে বসবাস করছি৷ সব কিছুই মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণে রয়েছে৷ ফলে তখন বিপরীত প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে৷ ছোট জায়গায় নিজেকে আবদ্ধ করলে দারুণ মুক্তির স্বাদ আসে৷''
এই সব খুদে বাড়ি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ‘পোর্টেবল' হয়৷ অস্ট্রিয়ার এই বাড়িটি আসলে স্পেনে তৈরি, ট্রাকে করে সেটিকে আনা হয়েছে৷ যে কোনো সময় সেটিকে সহজেই স্থানান্তরিত করা যায়৷ ফলে বাড়ির মালিকের পিছুটানের কারণ নেই৷ মার্টিনা ফাব্রিৎসিউস বলেন, ‘‘ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তার কারণে আমাদের জন্য এটা জরুরি ছিল৷ জানি না, দুই, তিন বা পাঁচ বছর পর আমরা কোথায় থাকবো৷ যে কোনো সময়ে বাড়িটিকে সঙ্গে নিয়ে যাবার উপায় রয়েছে৷
স্ভেন এমান এই সব ‘মোবাইল' মানুষদের ‘নতুন যাযাবর' আখ্যা দিয়েছেন৷ তাঁর ধারণা, কাজের জগতে আমূল পরিবর্তন আসছে৷ চাকুরিসূত্রে মানুষ জায়গা বদল করবে এবং নিজেদের বাড়ি সঙ্গে নিয়ে যাবে৷ নামকরা স্থপতিরা এখন থেকেই এই পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন৷ ইটালির রেনজো পিয়ানো ‘ডিয়োগেনে' নামের মাইক্রো-হাউস ডিজাইন করেছেন৷ জার্মানির ভ্যারনার আইসলিঙার ‘লফট কিউব' তৈরি করেছেন৷ স্ভেন এমান বলেন, ‘‘আমার ধারণা, কিছুটা অস্থিরতা মানুষের মৌলিক চরিত্রের অংশ৷ তাই পাকাপাকি বাসা গড়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবার প্রয়োজন নেই৷ জীবনের অন্যান্য অনেক ক্ষেত্রের মতো এটিও সাময়িক হতে পারে৷''
এই আইডিয়া ক্যারাভ্যান-নির্মাতাদেরও উৎসাহ যোগাচ্ছে৷ কমপক্ষে বেড়ানোর সময় যাযাবরের মতো জীবনের আকর্ষণ যে বাড়ছে, সিল্যান্ডার-এর মতো মিনিয়েচার মডেলই তার প্রমাণ৷ এই মিনি ক্যারাভ্যান মাত্র ৪ মিটার লম্বা হওয়া সত্ত্বেও তার মধ্যে চারজনের জন্য যথেষ্ট জায়গা রয়েছে৷ সিল্যান্ডার কোম্পানির প্রধান আন্দ্রেয়ার ক্নর বলেন, ‘‘এর মাধ্যমে কিছুটা স্বাধীনতা উপভোগ করা যায়৷ ডিজাইনের প্রতি আকর্ষণ থাকলে বিশেষ এক ডিজাইনের মাধ্যমে নিজস্ব আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করা যায়৷ স্বতঃস্ফূর্ত ও নমনীয় হওয়া যায়৷''
জলে নামলে তবেই সিল্যান্ডার-এর পূর্ণ সম্ভাবনা টের পাওয়া যায়৷ ছোট্ট ক্যারভান তখন মোটরবোট হয়ে ওঠে৷ ইলেকট্রিক ইঞ্জিনের শক্তি ৬ পিএস৷ বেশিরভাগ দেশে এর জন্য নৌকা চালানোর লাইসেন্সও লাগে না৷ শিল্পক্ষেত্রে এক ডিজাইনার তাঁর মাস্টার থিসিসের জন্য এমন ভাসমান ক্যারাভ্যানের আইডিয়া তুলে ধরেন৷ আর এখন বড় আকারে এমন উভচর তৈরি হচ্ছে৷