মুসলমানদের আত্মদর্শন দরকার
৫ জুলাই ২০১৬সারা বিশ্বের মুসলমানরা আবার ঈদ উদযাপন করবে৷ পবিত্র রমজান মাসের শেষে উদযাপিত হবে ঈদ৷ মুসলমানদের পবিত্র এই মাস সহনশীলতা, শান্তি, আত্মনিয়ন্ত্রণ, জীবনের প্রতি শ্রদ্ধা এবং দরিদ্রদের পাশে দাঁড়াতে শেখায়৷ কিন্তু অনেক মুসলিমপ্রধান দেশই এখন ইসলামের আদর্শ থেকে অনেক দূরে৷
গত ৩ জুলাই তথাকথিত ইসলামিক স্টেট বা আইএস-এর বোমা হামলায় ইরাকের বাগদাদে মারা গেল ১১৫ জন৷ মুসলিম বিশ্বে জঙ্গিবাদ মাথা চাড়া দিয়ে ওঠার বিষয়টিই মনে করিয়ে দেয় এই ঘটনা৷
এর আগে গত ২৮ জুন তুরস্কের ইস্তানবুলের আতার্তুক বিমান বন্দরে ইসলামিক স্টেট এবং ৩০ জুন তালেবান হামলায় আফগানিস্তানের কাবুলেও ঘটেছে হতাহতের ঘটনা৷ ২ জুলাই বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায়ও এক রেস্তোরাঁয় হামলা চালায় জঙ্গিরা৷ কিছু মানুষ যে সহনশীলতা এবং শান্তির পথে সবাইকে উদ্বুদ্ধ করার ইসলামি মূল্যবোধের সঙ্গে প্রতারণা করছে, এ সব ঘটনা তারই প্রমাণ৷
বিশ্বের প্রায় এক চতুর্থাংশ মানুষই মুসলমান৷ দুঃখজনক ব্যাপার হলো, মুসলমানদের বড় একটা অংশই গরিব৷ তার ওপর মুসলিম বিশ্বে, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে জাতিগত বিরোধও এখন তুঙ্গে৷ আরো দুঃখের বিষয়, বর্তমানে মুসলিম বিশ্বের কথা উঠলেই রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, সন্ত্রাসবাদ, ক্ষুধা, দুর্নীতি, জাতিগত বিরোধ আর সন্ত্রাসের প্রসঙ্গ চলে আসে৷
জাতিসংঘের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদন বলছে, ইরাকের প্রায় ৩৬ লাখ শিশু এখন মৃত্যুবরণ, আহত হওয়া, যৌন সন্ত্রাস, অপহরণ এবং জবরদস্তি সশস্ত্র জঙ্গিগ্রুপে যোগ দিতে বাধ্য হওযার ঝুঁকির মুখে৷ মানবাধিকার সংস্থাগুলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, আগামী কয়েক মাসে দক্ষিণ সুদানের প্রায় ৪৮ লাখের মতো শিশু ভয়াবহ খাদ্যসংকটের মুখোমুখি হবে৷ ওদিকে সিরিয়ায় ১ কোটি ৩০ লাখের মতো মানুষের জরুরি ভিত্তিতে মানবিক সহায়তার দরকার৷ তাছাড়া প্রায় ৫০ লক্ষ মানুষ ইতিমধ্যে সে দেশ ছেড়েছে৷
পাকিস্তান আর বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিও এখন প্রায় একইরকম৷ দক্ষিণ এশিয়ার এই দু'টি দেশেই জঙ্গি তৎপরতা ও জঙ্গিহামলা বেড়েছে৷
এমন পরিস্থিতিতে এক মাসের সিয়াম সাধনার পর ঈদ উদযাপন অনেকটাই অর্থহীন আনুষ্ঠানিকতা হয়ে
দাঁড়িয়েছে৷ সাম্প্রতিক সময়ের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডগুলো তো দেশ দু'টিতে রাজনৈতিক এবং নৈতিক অবক্ষয়েরই সাক্ষর বহন করছে৷
রমজান এবং ঈদে আত্মমূল্যায়ন ও জবাবদিহিতার গুরুত্ব অনেক৷ খুব বেশি দিন আগের কথা নয় যখন মুসলমানরা ছিল সংস্কৃতি, সহনশীলতা এবং বহুত্ববাদের অগ্রপথিক৷ এখন সেই মুসলমানরাই যেন উগ্রবাদ আর জঙ্গিবাদের প্রতিশব্দ৷ এমনকি পবিত্র রমজান মাসও সন্ত্রাসীদের নিরীহ মানুষ হত্যা থেকে বিরত রাখতে পারেনি৷
আশা করি, মুসলমানদের জন্য এবারের ঈদটা স্রেফ ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতার চেয়ে অনেক বড় কিছু হয়ে আসবে৷ আমি আরো আশা করি, ঈদ সবার জন্য সংশোধনের সুযোগ নিয়ে আসবে৷
মুসলমানদের এ মুহূর্তে আত্মদর্শন দরকার বেশি – আপনি কি লেখকের এই চিন্তার সঙ্গে একমত? মন্তব্য করুন নীচের ঘরে৷