মুসলমানদের শান্তি শোভাযাত্রা শেষ হলো ‘শান্তিতেই’
১৭ জুন ২০১৭তবে জার্মানিতে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় সংগঠন তুর্কি-ইসলামিক ইউনিয়ন ফর রিলিজিয়াস অ্যাফেয়ার্স (ডিটিব) এই সমাবেশে যোগ না দেয়ার ঘোষণা দেয়ায় সমাবেশ শান্তিপূর্ণ হবে কিনা, সেটা নিয়ে কারো কারো মধ্যে কিছুটা উদ্বেগ ছিল৷ সব উদ্বেগ ছাপিয়ে শেষ পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবেই সমাবেশ শেষ হয়েছে৷
মূলত দু'জন সাধারণ মানুষ এই সমাবেশের আহ্বান জানালেও দ্রুতই তাতে সাড়া দেন জার্মানির মূলধারার কয়েকজন রাজনীতিবিদ এবং মুসলমানদের ছোট ছোট কয়েকটি সংগঠন৷ সমাবেশের আয়োজকদের যুক্তি হচ্ছে, যেহেতু সন্ত্রাসী হামলায় জড়িতরা নিজেদের মুসলিম পরিচয়কে বড় করে দেখায়, তাই মুসলিমদেরও এসব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের শক্ত প্রতিবাদ জানানো উচিত৷
আর এমন সমাবেশের বিরোধিতকারী তুর্কি সংগঠনটির যুক্তি হচ্ছে, এ ধরণের সমাবেশ আয়োজন করলে প্রথমে মুসলমানদেরকে দায় দেয়া হয়৷ এরপর প্রতিবাদ জানানো হয়৷ এটা করা উচিত না৷ কেননা সন্ত্রাসীদের কোনো ধর্ম নেই৷ পাশাপাশি রোজার সময় মুসলমানদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা রোদের মধ্যে এধরনের সমাবেশ করা উচিত নয় বলেও মনে করে জার্মানিতে মুসলামানদের সবচেয়ে বড় এই সংগঠনটি৷
কোলনের হয়মার্কটের সমাবেশে অংশ নেয়া মুসলমানরা মনে করেন, রোজার মাসে আমাদের স্বাভাবিক জীবনতো থেমে থাকে না৷ চাকুরি করি, ব্যবসা বাণিজ্য করি, সব কাজ করি, প্রতিবাদ জানাতে আসলেই সমস্যা? সে যাইহোক, সমাবেশ উপলক্ষ্যে আশপাশে ব্যাপক পুলিশের উপস্থিতি চোখে পড়েছে৷
জার্মান পুলিশ সম্পর্কে একটা কথা বলা হয়, তারা সহজে নিজেদের উপস্থিতি দেখাতে চায় না৷ কিন্তু এই সমাবেশে ব্যতিক্রম দেখা গেছে৷ বিপুল পরিমাণ পুলিশ বেশ আগে থেকেই সমাবেশস্থলে হাজির ছিলো৷ সমাবেশের মাঝে শোভাযাত্রাও বের হয়৷ যা কোলন শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে ফিরে আসে৷ এ সময়ও শোভাযাত্রার সামনে পেছনে পুলিশের ব্যাপক উপস্থিতি ছিল৷
মুসলিম শান্তি শোভাযাত্রা ও সমাবেশে মুসলমানরা যেমন এসেছেন, তেমননি ভিন্ন ধর্মের মানুষও এসেছেন৷ অংশগ্রহণকারী মুসলমানদেরও সমাবেশে অংশগ্রহণের কারণে বৈচিত্র্য রয়েছে৷ আবার অংশগ্রহণকারীদের অনেকের মধ্যে দু'টো জায়গায় মিলও রয়েছে৷ তারা সবাই বলতে চান, ইসলাম শান্তির ধর্ম৷ সন্ত্রাসবাদীদের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই৷ অভিজ্ঞতার ফলে নেওয়া সিদ্ধান্তই তাদের সমাবেশে আসার কারণ হিসাবে মুখ্য ভূমিকা রেখেছে বলে অনেকে জানিয়েছেন৷
ফ্রাঙ্কফুট থেকে আসা ইমানের অভিজ্ঞতা হচ্ছে, প্রাকটিসিং মুসলিম দেখলেই আশপাশের অনেক মানুষ তাদেরকে এখন ‘‘সন্ত্রাসী'' মনে করে৷ তিনি এই ধারণার প্রতিবাদ জানাতে চান৷ এই ধারণা যে সত্য না, সেই বার্তা সবাইকে দিতে চান৷ তাই তিনি এই সমাবেশ এসেছেন৷
জার্মানি প্রবাসী বাংলাদেশি মো. বেলাল হোসেন তাঁর ১০-১২ বছরের ইউরোপের জীবনে কখনো মুসলমান হিসেবে বৈষম্যের শিকার হননি বলে জানিয়েছেন৷ তবে তাঁর ধারণা, মুসলমানদের নামে সন্ত্রাসী হামলা হলে তাদের ইমেজ খারাপ হয়ে যায়৷ এটা আর বাড়তে দেয়া যায় না৷ এর বিরুদ্ধে মুসলমানদের প্রতিবাদ অব্যাহত থাকলে সন্ত্রাসীদের মত দুর্বল হবে৷ এটা তাদের শক্তিকেও আঘাত করবে৷
‘‘নেটওয়ার্ক ফর উইমেন'' নামের একটি সংগঠনের অ্যাকটিভিস্ট হেইদা বন থেকে এসে সমাবেশে যোগ দিয়েছেন৷ তাঁর পরিচিতদের অনেকে মুসলমান৷ কিন্তু তাদের মাঝে তিনি কোনো অস্বাভাবিক দৃষ্টিভঙ্গি দেখেননি৷ এরপরও যখন মুসলমানদের সমষ্টিগতভাবে দোষ চাপানো হয়, তখন তিনি ব্যাথা পান৷ এ কারণে তিনি এ ধরনের একটা সমাবেশের জন্য অপেক্ষায় ছিলেন৷ সন্ধান পাওয়া মাত্রই ছুটে এসেছেন৷
তুর্কি মুসলমানদের সবচেয়ে বড় সংগঠন এই সমাবেশের বিরোধিতা করলেও তুর্কি বংশদ্ভূত জার্মানদেরও সমাবেশে দেখা গেছে৷ ইউদানুর কারাকাস নামে একজন জানিয়েছেন, ব্যক্তিগত জীবনে মুসলিম হিসাবে বিড়ম্বনায় পড়েছেন তিনি৷ এ কারণে তিনি এখানে প্রতিবাদ জানাতে এসেছেন৷ কে আসলো, না আসলো-সেটা তাঁর বিষয় নয়৷
শান্তির এই সমাবেশে যোগ দিয়েছেন আহমদিয়া মুসলিম জামাতের বেশ কিছু মানুষও৷ আয়োজকরা তাদেরকে আমন্ত্রণ জানানোয় তুর্কিদের সংগঠন ডিটিব এই শোভাযাত্রায় অনাগ্রহ দেখিয়েছে বলে কেউ কেউ মনে করেন৷ তবে আনুষ্ঠানিকভাবে কেউ এ বিষয়ে মন্তব্য করেনি৷
আয়োজকরা এই সমাবেশে ১০ হাজার মানুষকে সমবেত করার ঘোষণা দিলেও শেষ পর্যন্ত উপস্থিতি দুই হাজার ছাড়ায়নি বলেই মনে হয়েছে৷ ডিটিব যোগ না দেয়ার কারণে জনসমাগম কম হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷