1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মূল্যস্ফীতি, মন্দা মোকাবিলার জার্মান ‘মন্ত্র’

ডয়চে ভেলের মাল্টিমিডিয়া সাংবাদিক ফয়সাল শোভন৷
ফয়সাল শোভন
২৮ অক্টোবর ২০২২

ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্বের ধনী দেশগুলোর মধ্যে সবার আগে মন্দায় পড়তে যাচ্ছে জার্মানি ও ইটালি৷ এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে ইউরোপের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ জার্মানি৷

https://p.dw.com/p/4IoJH
কেনাকাটার ঝুড়ি হাতে এক জার্মান
ছবি: Michael Gstettenbauer/IMAGO

একটি দেশের অর্থনীতিতে পরপর দুই প্রান্তিকে ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি দেখা দিলে সেটিকে মন্দা পরিস্থিতি বলে ধরে নেয়া হয়৷ সেই হিসাবে আগামী বছর জার্মানি যে মন্দায় পড়বে তা নিয়ে সন্দেহ নেই৷ দেশটির অর্থনীতিবিদেরা, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল-আইএমএফ, এমনকি কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থমন্ত্রীও সেই পূর্বাভাস দিয়ে রেখেছেন৷ তবে জার্মানির রাজনৈতিক অঙ্গন, কিংবা সাধারণ মানুষের কাছে এই খবর বড় ধাক্কা হয়ে এসেছে তেমনটা নয়৷ প্রকৃতপক্ষে ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকেই জার্মানি নানা চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে৷

গত ফেব্রুয়ারির পর থেকে জার্মানিতে বিভিন্ন পণ্যের দাম ব্যাপক বেড়েছে৷ উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যেই ভোজ্যতেল একসময় দুই ইউরোরও কমে মিলতো তা পাঁচ ইউরোতে পৌঁছায়৷ এখন দাম কমে তিন-চার ইউরোতে নেমেছে৷ একইভাবে নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্যের দামে ফেব্রুয়ারি পরবর্তী যে ধাক্কা লেগেছিল তার লাগাম কিছুটা টানা গেছে৷ কিন্তু বড় সমস্যা রয়ে গেছে জ্বালানিতে৷ রাশিয়ার সরবরাহ বন্ধ থাকায় তেল ও গ্যাসের দাম আকাশচুম্বী৷ শীতকালে ঘর উষ্ণ রাখার মতো গ্যাসের মজুত সরকার নিশ্চিত করলেও এর মূল্য মাথা ব্যাথার কারণ হয়ে উঠেছে৷ সেই সঙ্গে বিদ্যুতের বিলও মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের জন্য অসহনীয় পর্যায়ে ঠেকেছে৷ তাতে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েই চলেছে৷ পরিসংখ্যানেও রয়েছে তার প্রতিফলন৷ ১৯৫১ সালের পর গত মাসে প্রথমবারের মতো মূল্যস্ফীতি দুই অঙ্কের (১০.৯%) রেকর্ড গড়েছে৷

জীবনযাত্রার ব্যয় সহনীয় রাখতে মে থেকে আগস্ট পর্যন্ত টানা তিন মাস নয় ইউরো বা প্রায় ৯০০ টাকার টিকেটে গণপরিবহণে গোটা জার্মানি ভ্রমনের সুযোগ দেয় সরকার৷ যেখানে স্বাভাবিক সময়ে নির্দিষ্ট কোনো অঞ্চলের জন্যই এমন টিকেটের মূল্য প্রায় ১০০ ইউরো বা তারও বেশি থাকে৷ মূল্যবৃদ্ধি ঠেকাতে জ্বালানির উপর কর ছাড় দেয়া হয়েছে৷ সেপ্টেম্বরে চাকরিজীবীদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে এককালীন ৩০০ ইউরো বা প্রায় ৩০ হাজার টাকা পাঠিয়েছে সরকার৷

মূল্যস্ফীতিকে বাগে আনতে না পেরে সেপ্টেম্বরের শেষে ২০ হাজারো কোটি ইউরোর নতুন জ্বালানি ভর্তুকির পরিকল্পনা ঘোষণা করেন চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস ও তার অর্থমন্ত্রী৷ বাসা-বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গ্যাসের মূল্য নাগালে রাখা এবং ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র, মাঝারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে সহায়তা দিতে আগামী বছরের এপ্রিল পর্যন্ত এই বাড়তি ব্যয় করবে সরকার৷ পাশাপাশি জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধিতে হিমশিম খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য করছাড়সহ আরো নানা সুবিধাও থাকছে৷

ফয়সাল শোভন, ডয়চে ভেলে
ফয়সাল শোভন, ডয়চে ভেলেছবি: Masum Billah

জার্মানির অর্থনীতির বড় দুই শক্তির একটি তার উচ্চদক্ষ বিশেষায়িত শিল্প, যা দেশটির রপ্তানি আয়ের প্রধান উৎস৷ দ্বিতীয়ত, দেশটির অনন্য ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাত, জার্মান ভাষায় যাকে বলে ‘মিট্টেলস্টান্ড’৷ দেশটির ৯৯ শতাংশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানই এর আওতায় পড়ে, যা জার্মানির দক্ষ কর্মসংস্থানের বড় উৎস এবং জার্মান সমাজের প্রাণশক্তি মধ্যবিত্ত শ্রেণীরও আঁতুড়ঘর৷

সরাসরি বাজারে হস্তক্ষেপ না করে যেকোন অর্থনৈতিক সংকটে জনগণের ক্রয়ক্ষমতাকে ধরে রাখতে চেষ্টা করে জার্মানি৷ এজন্য প্রণোদনার মাধ্যমে মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্তকে সহায়তা দেয়ার পাশাপাশি মিট্টেলস্টান্ড খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোকে টিকিয়ে রাখতে মনযোগী হয় সরকার৷ যাতে সেগুলোর কর্মসংস্থানে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে মানুষের আয় না কমে৷ করোনাকালে কিংবা তার আগের বৈশ্বিক মন্দা পরিস্থিতি এই উপায়ে মোকাবিলা করেছিল জার্মানি৷ কোম্পানি আর নাগরিকদের অর্থ প্রদান, করছাড়সহ বিভিন্ন প্রণোদনা দিয়ে পাল্টা ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে এবারও মন্দাকে যতটা সম্ভব স্বল্পমেয়াদী করার কৌশল খুঁজছে সরকার৷ তবে এই দফায় শিল্পে জ্বালানি সরবরাহ অব্যাহত রাখা বিশ্বের চতুর্থ বৃহৎ এই অর্থনীতির মন্দা উত্তরণের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হতে যাচ্ছে৷