1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
প্যানোরামাজার্মানি

মৃত্যু পথযাত্রীর শেষ কথা লেখা যার পেশা

৪ নভেম্বর ২০২৪

কোনো মত্যু পথযাত্রীর শেষ দিনগুলি কল্পনা করা কঠিন৷ তাঁদের মধ্যে অনেকে শেষ বারের মতো ফেলে আসা দিলগুলোর দিকে ফিরে তাকাতে চান৷

https://p.dw.com/p/4mYNs
প্রতীকী ছবি
মৃত্যু পথযাত্রীদের ফিরে দেখা জীবনের স্মৃতিচারণ লিপিবদ্ধ করে তার স্বজনদের কাছে তুলে ধরেন জার্মানির এক নারীছবি: Imago Images/Panthermedia/keport

জার্মানির এক নারী তাঁদের সেই কথাগুলো লিখে আত্মীয়স্বজনদের মাঝে বিলি করেন৷

ইহকাল ও পরকালের মধ্যে বিচরণ করেন সাব্রিনা গ্যোরলিৎস৷ ৪৩ বছরের এই নারী মৃত্যু পথযাত্রীদের সঙ্গে দেখা করে তাঁদের শেষ বারের মতো ফিরে দেখার সুযোগ দেন৷ এমনই এক কাজের আগে  সাব্রিনা বলেন, ‘‘আমি এবার মিসেস গিলভাল্ডের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছি৷ তাঁর অনেক বয়স হয়েছে৷ অর্থাৎ আমি ৮৭ বছরের সুন্দর জীবনকাহিনি পাবো৷ এক ঘণ্টার মধ্যে তাঁকে দিয়ে সব গুছিয়ে বলানোই হলো আসল চ্যালেঞ্জ৷''

হামবুর্গে হসপিস বা মৃত্যু পথযাত্রীদের এক আবাসনে দুই নারীর দেখা হওয়ার কথা৷ গিসেলা গিলভাল্ডের টার্মিনাল লাং ক্যানসার হয়েছে৷ মৃত্যুর ঠিক আগে তিনি আরও একবার তাঁর ফেলে আসা জীবনের দিকে ফিরে তাকাতে চান৷

গ্রীষ্মের এক গরম দিনে তিনি হাসপাতাল থেকে তাঁর সদ্যোজাত ছেলেকে মোটা কম্বলে মুড়ে কীভাবে বাসায় এনেছিলেন, সে কথা তাঁর বিশেষভাবে মনে আছে৷ গিসেলা বলেন, ‘‘আমার স্বামী হাসপাতালে ফোন করে প্রশ্ন করেছিলেন, বাসায় ফিরেও আমাদের সন্তান সব সময়ে কাঁদছে৷ আমরা কী করবো? অন্য প্রান্তে নার্স প্রশ্ন করেছিলেন, শিশুর গায়ে কী আছে৷ কম্বলের কথা শুনে তিনি খুলে নিতে বলেছিলেন৷''

মৃত্যুপথযাত্রীর জীবনগাঁথা

দেড় ঘণ্টার মধ্যে তিনি নিজের জীবনকাহিনি শোনালেন৷ সাব্রিনার ফোনে সেই জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়েছে৷ তারপর গিসেলা তাঁর স্বামীর মৃত্যুর কাহিনি বলতে শুরু করেন৷ তিনি বলেন, ‘‘কখনো আমি তাঁর সঙ্গে কথা বলি৷ আমার পুত্রবধু বলে, আমাদের সবার মধ্যে সংযোগ রয়েছে৷ বলে, কোনো এক সময়ে আমাদের সবার আবার দেখা হবে৷ শুনে মনটা শান্ত হয়৷''

সব শোনার পরে সাব্রিনা কাহিনি লিখে ফেলেন৷ এর জন্য তিনি সাধারণত ছোট অংকের পারিশ্রমিক পান৷ প্রায় ১৫ পাতার ছোট পুস্তিকায় সব গুছিয়ে লিখে আত্মীয়স্বজনদের কাছে বিলি করা হয়৷ হসপিসের ম্যানেজার সেই প্রকল্পে মদত দেন৷ হসপিসের ম্যানেজার কাটিয়া ফিশার বলেন, ‘‘এমন বুকলেট সৃষ্টি করতে হলে সেই মানুষটির সঙ্গে জড়িত সবাইকে কঠিন পরিস্থিতি মেনে নিতে হয়৷ অনেকের জন্য শুরুতে সেটা বেদনাদায়ক অভিজ্ঞতা, কারণ এর অর্থ জীবনের সমাপ্তির দিকে নজর দেওয়া৷ কিন্তু অন্যদিকে সেটা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সে বিষয়ে কথা বলার সুযোগও বটে৷''

দুই দিন পরে পুত্রবধু ভেরেনা ভারস্টাট হসপিসে এলেন৷ গিসেলার বয়ান সাব্রিনা তাঁকে পড়ে শোনাবেন৷ সাব্রিনা বয়ান পড়ে শোনাতে গিয়ে বলেন, ‘‘দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে ১৯৩৬ সালে ক্যোনিগসব্যার্গে আমার জন্ম হয়েছিল৷ সেখানে এবং পরে পূর্ব প্রাশিয়ায় শৈশবের প্রথম বছরগুলি খুবই সুন্দর ছিল৷''

একটি ঘটনা দুই নারীকে আজ পর্যন্ত জুড়ে রেখেছে৷ ভেরেনার স্বামী ও গিসেলার ছেলে মাল্টের মৃত্যু দুজনকেই গভীরভাবে নাড়া দিয়েছে৷ সাব্রিনা গ্যোরলিৎস বলেন, ‘‘নিজের সন্তান মারা গেলে যে অনুভূতি হয়, তা বর্ণনার ভাষা কি আমার আছে! আমার মতে, কেন সন্তান মারা গেল, তার উপর অনেক কিছু নির্ভর করে৷ যেমন পথ দুর্ঘটনা বা কঠিন রোগ৷ মাদকে আসক্তিও এক গুরুতর ব্যাধি৷ কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে আমি তার জন্য প্রস্তুত ছিলাম৷ সে সব সেবন করতে করতে কোনো এক সময়ে শরীর অত্যন্ত দুর্বল হয়ে যায়, আর সহ্য করার ক্ষমতা থাকেনা৷''

গিসেলা গিলভাল্ড তাঁর জীবনের সুন্দর ও কঠিন মুহূর্তগুলি আবার নতুন করে তুলে ধরার সুযোগ পেয়েছেন৷ তিনি স্বর্গে গিয়ে আবার স্বামী ও পুত্রের সঙ্গে সাক্ষাতের আশা করছেন৷

টেসা ভাল্টার/এসবি