মৃত্যুর আগে হত্যাকারীদের নাম বলেছেন সাংবাদিক সুবর্ণা
২৯ আগস্ট ২০১৮বাকিরা পলাতক৷ বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ‘আনন্দ টিভি'র পাবনা প্রতিনিধি ছিলেন সুবর্ণা৷ তিনি দৈনিক জাগ্রতবাংলা নামের একটি পত্রিকার পাবনা প্রতিনিধি হিসেবেও কাজ করতেন৷ মঙ্গলবার রাতে তাঁর বাসার সামনেই দুর্বৃত্তরা তাঁকে কুপিয়ে আহত করে৷ হাসপাতালে নেয়ার পর তিনি মারা যান৷
বুধবার থানায় দায়ের করা হত্যা মামলায় নদীর মা মর্জিনা বেগম নিহত সুবর্ণার সাবেক স্বামী রাজিব হোসেন, শ্বশুর আবুল হোসেন ও রাজিবের সহকারী মিলনসহ আরো ৬-৭ জনকে আসামি করেছেন৷
মর্জিনা বেগম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘কুপিয়ে আহত করার পর সুবর্ণার কিছুক্ষণ জ্ঞাণ ছিল৷ তখন সে আমাকে বলে, ‘রাজিব ও তার সহকারী মিলনসহ কায়েকজন আমাকে কুপিয়েছে৷' এরপরই সে অজ্ঞান হয়ে যায়৷ হাসপাতালে নেয়ার পর সে মারা যায়৷''
তিনি অভিযোগ করেন, ‘‘রাজিব ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে যৌতুকের মামলা করায় তারা আমার মেয়েকে হত্যা করেছে৷ আমি হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই৷''
যৌতুকের মামলায় মঙ্গলবার আদালতে সুবর্ণার বড় বোন চম্পার স্বাক্ষ্য ছিল৷ চম্পা এবং সুবর্ণা দু'জনই আদালতে যান৷ মর্জিনা বেগম জানান, ‘‘আদালতে রাজিবের বিরুদ্ধে স্বাক্ষ্য দেয়ায় রাজিব সেখানেই তাদের হুমকি দেয়৷ এ নিয়ে বাক-বিতন্ডা হয় এবং হামলারও চেষ্টা করে৷ আদালত থেকে বের হওয়ার পরও রাজিব ও তার সগযোগীরা তাদের অনুসরণ করে৷ তারা তখন সুবর্ণার অফিসেও যায়৷ তবে সেখানে সাংবাদিকরা থাকায় তারা সেখান থেকে চলে যায়৷''
তিনি বলেন, ‘‘রাত পৌনে ১০টার দিকে সুবর্ণা বাসার গেট পর্যন্ত আসার পরই তার ওপর হামলা করে৷ আমরা কলিংবেলেরও শব্দ পাই৷ ওই সময় রাস্তায় কোনো বিদ্যুৎ ছিল না৷ গেট খুলে বাড়ির আলোতে রক্তাক্ত সুবর্ণাকে পড়ে থাকতে দেখি৷ এরপর হাসপাতালে নিয়ে যাই৷''
সুবর্ণার মরদেহের ময়নাতদন্ত হয়েছে পাবনা সদর হাসপাতালে৷ ময়নাতদন্তে তাঁর শরীরে ধারালো অস্ত্রের ৬টি আঘাত পাওয়া গেছে৷ আঘাতে তাঁর মাথা, পেট ও হাতে গভীর ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে৷ একটি আঙুলও কেটে গেছে৷ ধারণা করা হচ্ছে, সুবর্ণা হাত দিয়ে নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলেন৷
পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওবায়দুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘মামলার এজাহারে হত্যাকাণ্ডের কারণ বলা হয়েছে৷ আমরা এরইমধ্যে সুবর্ণার সাবেক শ্বশুর আবুল হোসেনকে গ্রেপ্তার করেছি৷ বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছি৷''
তিনি বলেন, ‘‘কোনো আসামিকেই ছাড় দেয়া হবে না৷ সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে৷ এজাহারে যৌতুকের মামলাকে হত্যার কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে৷ সেটা ধরেই তদন্ত করছি৷ তবে আরো কোনো কারণ আছে কিনা তা-ও তদন্ত করে দেখছি৷''
সুবর্ণার সহকর্মীরা জানান, আদালত থেকে ফেরার পর রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত সুবর্ণা তার হামিদ রোডের অফিসেই কাজ করেন৷ প্রেসক্লাবও তাঁর অফিসের কাছে৷ সেখান থেকে তাঁদের রাধানগর মহল্লার বাসায় হেঁটে যেতে ৮-১০ মিনিট লাগে৷ তিনি হেঁটে বাসায় যাওয়ার সময় প্রেসক্লাব গলিতে তাঁর সহকর্মীদের সঙ্গেও দেখা হয়৷
পাবনা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আঁখিনুর রহমান রেমন্ড ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সুবর্ণাকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়৷ আমরা প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ করে অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে বিচারের দাবি জানিয়েছি৷ তিন দিনের আল্টিমেটাম দিয়েছি৷ এর মধ্যে সব আসামি গ্রেপ্তার না হলে আমরা বৃহত্তর কর্মসূচি দেব৷''
সুবর্ণার সঙ্গে গতবছর পাবনার শিল্পপতি আবুল হোসেনের ছেলে রাজিব হোসেনের বিয়ে হয়৷ ওই বছরই সেই বিয়ে ভেঙ্গে যায়৷ সুবর্ণার আগের ঘরে সাত বছরের একটি কন্যা সন্তান আছে৷ সুবর্ণারা দুই বোন৷
এ বিষয়ে আপনার মতামত লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে৷