মেট্রো হামলায় স্তব্ধ মস্কো, সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ের অঙ্গীকার
২৯ মার্চ ২০১০গত ছয় বছরের মধ্যে রুশ রাজধানীতে এটাই সবচেয়ে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা৷ সোমবার সকালের ওই দু’টি আলাদা বিস্ফোরণে নিহত হয় অন্ততপক্ষে ৩৮ জন৷ আহতের সংখ্যা প্রায় ৪০ জনের মতো৷ এদিকে, এই হামলার পর রাশিয়ার সব আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ সারা দেশের গুরুত্বপূর্ণ সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে৷ আরও হামলার আশঙ্কায় কড়া সতর্কতা নেওয়া হয়েছে বিশেষ বিশেষ রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থানে৷
রাশিয়ার জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সেভেৎলানা চুমিকোভা এক বিবৃতি জানিয়েছেন, স্থানীয় সময় সকাল সাতটা ৫৭ মিনিটে প্রথম বিস্ফোরণটি ঘটে লুবিয়াঙ্কা মেট্রো স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা একটি ট্রেনের দ্বিতীয় বগিতে৷ এতে ২৪ জন নিহত এবং ২০ জন আহত হয়৷ এর প্রায় ৪৪ মিনিট পরে দ্বিতীয় বিস্ফোরণটি ঘটে পার্ক কুলতুরি মেট্রো স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা আরেকটি ট্রেনের দ্বিতীয় বগিতে৷ এই বিস্ফোরণে ১৪ জন নিহত এবং ১৫ জন আহত হয়৷ লুবিয়াঙ্কা স্টেশনটি রাশিয়ার অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সার্ভিস এফএসবি’র সদর দপ্তরের কাছে অবস্থিত৷
ওদিকে, মস্কোর মেয়র ইউরি লুঝকভ বলেছেন, দুই নারী ওই আত্মঘাতী হামলা দু’টি চালিয়েছে বলে ধারণা করছেন নিরাপত্তা কর্মকর্তারা৷ স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমও রাশিয়ার অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা গোয়েন্দা সার্ভিস (এফএসবি)-কে উদ্ধৃত করে এমনটাই জানিয়েছে৷ তবে, বোমা দু’টি মোবাইল ফোন বা এমন কোনো যন্ত্রের সাহায্য দূর থেকে ফাটানো হয়েছে কি না তা এখনও খতিয়ে দেখছে নিরাপত্তা বাহিনী৷
রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা নভোস্তি জানিয়েছে, পার্ক কুলতুরি স্টেশনের ঘটনাস্থল থেকে অবিস্ফোরিত অবস্থায় আরেকটি বোমা পাওয়া গেছে৷ এছাড়া আত্মঘাতী হামলাকারী বলে সন্দেহ করা হচ্ছে এমন যে নারীর ছিন্নভিন্ন মাথা এবং অঙ্গপ্রত্যঙ্গ উদ্ধার করা হয়েছে তার বয়স ১৮ থেকে ২০ বছরের মধ্যে বলে জানিয়েছে তদন্তকারীরা৷
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ট্রেনটি ছাড়ার কিছুক্ষণ আগে লুবিয়াঙ্কা স্টেশনে ওই বিস্ফোরণ ঘটে৷ বিস্ফোরণের প্রচণ্ড শব্দে মানুষ স্তম্ভিত হয়ে যায় এবং প্রাণভয়ে ছুটে পালানোর চেষ্টা করে৷ যাত্রীরা ট্রেন থেকে নেমে আসে৷ কিন্তু আগুন আর কালো ধোঁয়ার কারণে বাইরে বেরিয়ে আসতে সমস্যায় পড়ে আতঙ্কিত যাত্রীরা৷ মেট্রো স্টেশনের ‘সিসিটিভি' ফুটেজে দেখা গেছে অনেক নিথর দেহ প্ল্যাটফর্মে পড়ে আছে৷ উদ্ধারকর্মীরা রক্তাক্ত এসব দেহ সরিয়ে নেওয়ার নিচ্ছে৷
এর আগে, ২০০৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে মস্কোর একটি মেট্রো ট্রেনে আত্মঘাতী হামলায় অন্তত ৪১ জন নিহত হয়েছিল৷ সেসময়ে চেচেন বিচ্ছিন্নতাবাদীদেরকে ওই হামলার জন্য দায়ী করা হয়েছিল৷
এখন পর্যন্ত কেউই সোমবারের এই হামলার দায়িত্ব স্বীকার না করলেও উত্তর ককেশাসের বিদ্রোহীরা এ হামলা চালিয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা করছেন রুশ নিরাপত্তা কর্মকর্তারা৷ অঞ্চলটির মুসলিম বিচ্ছিন্নতাবাদী জঙ্গি গোষ্ঠী দীর্ঘদিন ধরেই লড়াই চালিয়ে আসছে রাশিয়ার নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে৷
প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ সোমবার বিকেলে জনসাধারণের উদ্দেশ্যে এক জরুরি ভাষণ দিতে পারেন বলে জানিয়েছে কর্মকর্তারা৷ একইসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ভ্লাদিমির পুটিনকেও পরিস্থিতির সর্বশেষ খোঁজখবর সম্পর্কে অবহিত করা হচ্ছে বলেও জানান নিরাপত্তা কর্মকর্তারা৷ প্রেসিডেন্ট মেদভেদেভ ইতোমধ্যেই এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘‘সন্ত্রাসবাদীদের দমনে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে এবং কোনো প্রকার দ্বিধা ছাড়াই শেষ পর্যন্ত তা চলতে থাকবে৷’’
ইউরোপীয় পার্লামেন্ট এবং ন্যাটোসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ ইতোমধ্যেই এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে৷
প্রতিবেদন : মুনীর উদ্দিন আহমেদ
সম্পাদনা : দেবারতি গুহ