1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মেডিকেল টেকনোলজিস্টের স্বল্পতা

৩০ এপ্রিল ২০২০

করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বেশি বেশি পরীক্ষার উপর জোর দিলেও এ কাজে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকা মেডিকেল টেকনোলজিস্ট প্রয়োজনের তুলনায় কম থাকায় নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা করা নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে বাংলাদেশ৷

https://p.dw.com/p/3bb2S
ছবি: bdnews24

বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাস যেখানে উন্নত দেশেগুলোর স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকেও প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে৷ সেখানে বাংলাদেশের মত নাজুক স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই এখন তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে৷

এই সংকট মোকাবেলায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের চাহিদাপত্র পেয়ে এরই মধ্যে দুই হাজার চিকিৎসক ও পাঁচ হাজারের বেশি নার্স নিয়োগ দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে সরকারি কর্ম কমিশন-পিএসসি৷ কিন্তু সেই চাহিদাপত্রে নেই মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের কথা৷

অথচ, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ছাড়া করোনা ভাইরাস মোকাবেলার গুরুত্বপূর্ণ ধাপ নমুনা সংগ্রহ ও তা পরীক্ষার মাধ্যমে আক্রান্তদের শনাক্তের কাজটিই করা যাবে না

বাংলাদেশে ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের কাছে এভাবেই নিজের মত প্রকাশ করেন আইইডিসিআরের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মুশতাক হোসেন৷

তিনি বলেন, ‘‘সরকার চিকিৎসক-নার্সের সংখ্যা বাড়াচ্ছে ভালো কথা৷ কিন্তু মেডিকেল টেকনোলজিস্টও নিয়োগ দিতে হবে৷ আমরা টেস্টের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য চাপ দিচ্ছি, কিন্তু মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ছাড়া স্যাম্পল কালেকশন কে করবে? এটা তো অপেশাদার লোকদের কাজ না৷’’

বাংলাদেশ এখনও কোভিড-১৯ রোগের নমুনা পরীক্ষায় প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে পিছিয়ে আছে৷

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মান অনুযায়ী, একজন চিকিৎসকের বিপরীতে তিনজন নার্স এবং পাঁচজন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট থাকার কথা৷ কিন্তু বাংলাদেশের চিত্রটি পুরো উল্টো৷ গত ২১ মার্চের হিসাব অনুযায়ী, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অধীনে বর্তমানে ২৫ হাজার ৬১৫ জন চিকিৎসক কাজ করছেন৷ ডব্লিউএইচওর মানদণ্ড অনুযায়ী, এক্ষেত্রে মেডিকেল টেকনোলজিস্টের পদের সংখ্যা হওয়ার কথা ছিল এক লাখ ২৮ হাজার ৭৫টি৷ কিন্তু স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে মেডিকেল টেকনোলজিস্টের পদই আছে সাত হাজার ৯২০টি৷ এর বিপরীতে কর্মরত আছেন আরও কম, পাঁচ হাজার ১৮৪ জন৷ প্রতি ১০ হাজার মানুষের জন্য শূন্য দশমিক ৩২ জন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট কাজ করছেন৷

আর ল্যাব টেকনোলজিস্টের দুই হাজার ১৮২টি পদের মধ্যে এক হাজার ৪১৭ জন কর্মরত আছেন৷ নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজটি করেন ল্যাব টেকনোলজিস্টরাই৷

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর বিভিন্ন জেলা থেকে মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের প্রেষণে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে আনা হয়৷ ফলে জেলাগুলোয় নমুনা সংগ্রহ করতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে৷

বিভিন্ন জেলা এমনকি নারায়ণগঞ্জেও অনেকে অভিযোগ করেছেন, নমুনা সংগ্রহের জন্য হটলাইনে ফোনের পর ফোন করেও সাড়া পাওয়া যায় না৷ ঢাকা, নারায়ণগঞ্জের পর সবচেয়ে আক্রান্তের এলাকা গাজীপুরে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট আছেন ১৭ জন৷ এর মধ্যে শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ মেডিকেল কলেজে চারজন এবং হাসপাতালে সাতজন৷ প্রত্যেকটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একজন করে এবং টঙ্গীতে ২৫০ শয্যা হাসপাতালে একজন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট৷

সব থেকে ঝামেলায় আছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মীরা৷ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একজন টেকনোলজিস্ট বলেন, তাঁকে দৈনিক ২৫ থেকে ৩৫টি নমুনা সংগ্রহ করতে হয়৷ এজন্য দুজন সহযোগী নিয়েছেন তিনি৷ তারা রোগীর নাম ঠিকানা লিখে দেওয়া থেকে প্রাথমিক কিছু কাজ করে দেয়৷

‘‘নমুনা সংগ্রহের কাজটা আমিই করি৷ কিন্তু প্রতিদিন এতগুলো নমুনা সংগ্রহ করতে জান বাইর হয়ে যায়৷ গাজীপুর জেলায় তো অনেক রোগী, সবার স্যাম্পল নেওয়া সম্ভব হয় না৷’’

নরসিংদীর পলাশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট দিলীপ কুমার দাস জানান, উপজলায় কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছে৷ ফলে কন্টাক্ট ট্রেসিংসহ নানা কাজে তাকে নমুনা সংগ্রহ করতে হয়৷ এখানে দুজন মেডিকেল টেকনোলজিস্টের একজনকে ঢাকার একটি হাসপাতালে প্রেষণে নিয়ে যাওয়া হয়েছে৷

‘‘আমিই বাড়ি বাড়ি গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করি৷ আবার আমাকেই দৌড়াতে হয় হাসপাতালে৷ বিষয়টি নিয়ে আমাকে হিমশিম খেতে হচ্ছে৷’’

একই অবস্থা নরসিংদীর বাকী উপজেলাগুলোতেও৷

ঢাকার একটি গবেষণাগারে করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষায় নিয়োজিত একজন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট নতুন চিকিৎসক ও নার্স নিয়োগকে স্বাগত জানালেও মেডিকেল টেকনোলজিস্টরা উপেক্ষিত থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন৷

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই স্বাস্থ্যকর্মী বলেন, ‘‘ডব্লিউএইচওর গাইডলাইন অনুযায়ী ২ হাজার চিকিৎসকের বিপরীতে ১০ হাজার মেডিকেল টেকনোলজিস্ট নিয়োগ পাওয়ার কথা৷ কিন্তু দুঃখজনক হল তারা আলোচনাতেই নেই৷’’

বাংলাদেশ মেডিকেল টেকনোলজিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের হিসাবে দেশে ৩০ হাজার ৬৭ জন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট রয়েছেন৷

সংগঠনের সভাপতি আলমাস আলী খান জানান, বর্তমান পরিস্থিতিতে মেডিকেল টেকনোলজিস্টরা ঝুঁকি নিয়ে অমানুষিক পরিশ্রম করছেন৷ কয়েকটি হাসপাতালে সংক্রমণের পর চিকিৎসক-নার্সরা কোয়ারান্টিনে গেলেও মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের পাঠানো হচ্ছে না৷

‘‘কারণ টেকনোলজিস্টরা কোয়ারেন্টিনে গেলে সেখানে কাজ করার কেউ থাকে না৷’’

তিনি বলেন, সাময়িকভাবে কিছু মেডিকেল টেকনোলজিস্ট নিয়োগ দিলেও এই পরিস্থিতিতে কাজ করা কিছুটা সহজ হবে৷

পরিস্থিতি বিবেচনায় ১২০০ মেডিকেল টেকনোলজিস্ট নিয়োগের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) মো. বেলাল হোসেন৷

কিন্তু অচিরেই এই নিয়োগ হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. হাবিবুর রহমান খান৷

তিনি বলেন, ‘‘সরকারের পে-রোলে কাউকে আনতে হলে সিস্টেমের মধ্যে আনতে হয়৷ টাকা পয়সারও ব্যাপার আছে৷ ওটা (টেকনোলজিস্ট নিয়োগ) এখনও চিন্তাভাবনার মধ্যে আছে৷ এখনও প্রসেস শুরু হয়নি৷’’

বর্তমানে স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি আরো বলেন, ‘‘অনেক জায়গায় চিকিৎসকেরাও নমুনা সংগ্রহ করছেন৷ স্বাস্থ্যকর্মীরাও প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করে শুধু নমুনা সংগ্রহ করছেন৷ নমুনা সংগ্রহ কাজে খুব একটা সমস্যা হচ্ছে না৷’’

এসএনএল/কেএম (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)