মেয়েদের জন্য ‘হটলাইন’
১৭ মার্চ ২০১৩শুধু নারীর জন্য বিশেষ আশ্রয়৷ জার্মানির বন শহরে আছে মেয়েদের জন্য আছে এরকম এক ঠিকানা৷ সেখানে চাইলেই মেয়েরা গিয়ে থাকতে পারেন৷ অনেকে এটাকে তুলনা করেন স্বর্গের সঙ্গে৷ এই স্বর্গে আশ্রয় নেওয়াদের একেক জনের গল্প একেক রকম৷ এদের কেউ হয়ত স্বামীর হাতে নির্যাতনের শিকার হয়ে চিৎকার করেছিলেন৷ সেই চিৎকার শুনে প্রতিবেশী ফোন করেছেন পুলিশকে৷ এরপর পুলিশ তাকে পৌঁছে দিয়েছেন আশ্রয়কেন্দ্রে৷
আবার কেউ হয়ত স্বামীর নির্যাতনের শিকার হয়ে হাসপাতালে গিয়েছিলেন৷ এরপর সেখান থেকে ছাড়া পেয়েছেন৷ কিন্তু স্বামী নামক পুরুষটি যাতে আবারো তাকে হাসপাতালে পাঠাতে না পারেন, এজন্য হাজির হয়েছেন আশ্রয়কেন্দ্রে৷ এমনও ঘটেছে কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষক ফোন করেছেন পুলিশকে, কেননা তিনি শিশুর আতঙ্কগ্রস্ত চেহারা দেখে বুঝেছেন তার বাড়িতে কিছু ঘটেছে৷
নিরাপত্তা এবং পরামর্শ
‘‘তারা এখানে বিভিন্নভাবে এসেছেন'', ডয়চে ভেলেকে বলেন এলসা ব্লেক৷ এই শান্ত নারী ‘ফ্রাউয়েন হেল্ফেন ফ্রাউয়েন' বা ‘নারীর সহায়তায় নারী' নামক সমিতিতে ২৫ বছর ধরে কাজ করছেন৷ এই সমিতি বনে একটি পরামর্শ এবং আশ্রয় কেন্দ্র পরিচালনা করে৷ মূলত বাড়িতে সহিংসতার শিকার নারীদের আশ্রয় এবং পরামর্শ প্রদান করেন ব্লিকরা৷
বনের আশ্রয়কেন্দ্রটিতে ২২টি শয্যা রয়েছে৷ এটির ঠিকানা সবার কাছে প্রকাশ করা হয়না৷ শুধু আশ্রয়কেন্দ্রের কর্মী এবং সেখানে বসবাসরতরা জানেন ঠিকানা৷ সেখানে একজন নারী নিজের সন্তানসহ যতদিন খুশি থাকতে পারেন৷ এই বিষয়ে এলসা ব্লেক বলেন, ‘‘আমাদের এখানে আসতে একজন নারীর চোখের পর উপর নির্যাতনের ক্ষতচিহ্ন থাকার দরকার নেই৷ একজন পুরুষ যদি তাকে মানসিকভাবে আঘাত করেন, তাকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন কিংবা তাকে কোন কাজে বাধা দেন, তাহলেও তিনি আমাদের এখানে আসতে পারেন৷''
হটলাইন
জার্মানির পরিবার কল্যাণমন্ত্রী ক্রিস্টিনা শ্র্যোডার সম্প্রতি একটি নতুন টেলিফোন ‘হটলাইন' সেবা চালু করেছেন৷ বাড়িতে নির্যাতন বা যৌন হয়রানির শিকার নারীরা এই হটলাইনে ফোন করে তাৎক্ষণিক সেবা নিতে পারবেন৷ ২৪ ঘণ্টাই এই নম্বরে চালু রয়েছে৷ শ্র্যোডার একটি জার্মান দৈনিককে এই বিষয়ে বলেন, ‘‘আমরা ঝামেলামুক্তভাবে বিনা পয়সায় এই সেবা দিচ্ছি, যা যেকোন সময়, যেকোন জায়গা থেকেই নেয়া যাবে''৷
ক্যাথলিন নারী কল্যাণ সেবা ইন্টারনেটে ‘গেভাল্টলোস.ডিই' নামক একটি ফোরাম পরিচালনা করে৷ এই ফোরামও নির্যাতনের শিকার নারীদের বিভিন্ন রকম পরামর্শ প্রদান করে থাকে৷ সুবিধা হচ্ছে, এখানে পরিচয় গোপন রেখেও যে কোনো নারী পরামর্শ চাইতে পারেন৷ এরপর চ্যাটের মাধ্যমে চাইলে সরাসরি একজন পরামর্শকের সঙ্গেও কথা বলতে পারেন আক্রান্ত নারী৷
গেভাল্টলোস.ডিই-র সহ-প্রতিষ্ঠাতা আঙ্গেলিকা ভিডেনাউ এই বিষয়ে বলেন, অনেক তরুণীর পক্ষে নির্যাতনের শিকার হওয়ার অভিজ্ঞতা মুখে বলা কষ্টকর৷ কিন্তু চ্যাটরুমে তারা সহজে সে সব কথা লিখতে পারেন৷
যথেষ্ট নয়
পরামর্শক এলসা ব্লেক মনে করেন, নারীর নিরাপত্তায় হটলাইন এবং চ্যাটরুম ছাড়াও আরো অনেক কিছু করার আছে৷ তিনি বলেন, ‘‘নির্যাতনের শিকার মেয়েদের সঙ্গে ব্যক্তিগত যোগাযোগ গড়ে তুলতে হবে এবং তাদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে৷ টেলিফোনে পরামর্শ প্রদান ‘নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রের' বিকল্প হতে পারে না৷ আশ্রয় কেন্দ্রে একজন নারী নিরাপদে ঘুমাতে পারেন, প্রয়োজনে তাঁর সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে থাকতে পারেন৷''
নিজের ২৫ বছরের কর্মজীবনের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে বলতে গিয়ে ব্লেক স্মরণ করেন তিন নারীর কথা, যারা আশ্রয়কেন্দ্রে আসার পরও তাদের স্বামীর হাতে খুন হয়েছেন৷ এই বিষয়ে তিনি বলেন, ‘‘আমি এখানে কাজ শুরুর পর এখন পর্যন্ত আশ্রয়কেন্দ্রের তিন নারী খুন হন৷ তবে তারা যখন আক্রমণের শিকার হয়েছেন, তখন তারা কেন্দ্রের বাইরে ছিলেন৷ ফলে আমাদের পক্ষের তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি৷''
নতুন জীবনের সূচনা
আশ্রয়কেন্দ্রের এই তিক্ত অভিজ্ঞতা পেছনে ফেলে এগিয়ে চলেছেন ব্লিক৷ তিনি বলেন, ‘‘নারীদের আশ্রয় কেন্দ্রে কাজ করতে গিয়ে ইতিবাচক অনেক অভিজ্ঞতা তাঁর হয়েছে৷ বিশেষ করে এখানে অবস্থানের পর শিশুরা আর নিজেদের অনিরাপদ ভাবেনা৷'' ব্লিক বলেন, ‘‘শিশুরা আশ্রয়কেন্দ্রে কয়েক মাস থাকার পর বুঝতে পারে, তাদের আর ভয় পাওয়ার কিছু নেই৷ কেউ আর দরজা খুলে তাদেরকে ভয় দেখাবে না৷ এই আশ্রয়কেন্দ্রে শিশুদের উন্নতি দেখে আমি আনন্দ পাই৷''
বয়স্ক নারীদের ক্ষেত্রেও একথা প্রযোজ্য৷ ব্লিকের কথায়, ‘‘এখানে যারা আসেন, তাদের জীবনে অনেক ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা থাকে৷ কিন্তু আমাদের সঙ্গে অবস্থানের পর তারা বুঝতে পারেন জীবন ভিন্নও হতে পারে৷''