সচেতন হচ্ছে মেয়েরা
২৮ আগস্ট ২০১৪রংপুরের সায়মা আক্তারকে (১৬) তার বাবা ১১ বছর বয়সে স্কুল থেকে ছাড়িয়ে নেয়৷ নিরাপত্তার নামে তাকে এক বৃদ্ধের সঙ্গে তখন বিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করেন তার বাবা৷ এর আগেও সায়মার বয়স যখন পাঁচ বছর ছিল, তখন থেকেই তাকে পর্দা প্রথায় অভ্যস্ত করা হয়, পরিয়ে দেয়া হয় বোরকা৷ কিছুটা ভীত আর দ্বিধান্বিত সায়মা শেষ পর্যন্ত প্রতিরোধ করেছে৷
ইউনিসেফের অর্থায়নে ‘কিশোর অভিযান' নামের একটি সংগঠন ঐ এলাকায় কিশোর-কিশোরীদের লিঙ্গবৈষম্য, জেন্ডার, বাল্যবিবাহ, প্রজনন স্বাস্থ্য ও শিশু শ্রমসহ আরো কিছু বিষয়ের উপর শিক্ষা কর্মসূচি চালু করেছে৷ তাই সায়মা এখন জানে তার অধিকার সম্পর্কে৷ জেন্ডার নিয়ে সমাজের প্রচলিত ধ্যান ধারণা পরিবর্তন করে দিতে চায় সে৷
কিশোর অভিযান সংস্থাটি ‘ইন্টারএ্যাকটিভ পপুলার থিয়েটার' পদ্ধতিতে নারীদের অধিকার সচেতন করার কাজ করছে৷ জনপ্রিয় লোককথা, ঐতিহ্যবাহী গান, নাচ আর নাটকের মাধ্যমে তারা স্থানীয় পর্যায়ের নানা বিষয় সেখানকার মানুষের কাছে তুলে ধরছে৷ এছাড়া সমাজের নীতি নির্ধারক এবং প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সামনেও তা তুলে ধরা হচ্ছে৷
রংপুরের ‘সেন্টার ফর ম্যাস এডুকেশন ইন সায়েন্স' অভিনয়ের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের সামনে যৌতুক প্রথার বিরুদ্ধে প্রচারণা চালায়৷ তারা নারীদের কাজে অংশগ্রহণের প্রয়োজনীয়তাও তুলে ধরে৷
বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা পরিষদের হিসাব অনুযায়ী ২০১১ সালে বাংলাদেশে যৌতুক সংক্রান্ত নির্যাতনে ৩৩০ জন নারী নিহত হয়েছেন৷ তার আগের বছর নিহত হয়েছেন ১৩৭ জন৷ আর ২০১৩ সালে এধরনের ঘটনা ঘটেছে ৪৩৯টি৷
সেন্টার ফর ম্যাস এডুকেশন ইন সায়েন্স-এর মোহাম্মদ রাশেদ মনে করেন সবার অংশগ্রহণে ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতিতে এই প্রচার প্রচারণা বেশ কাজে আসছে৷ এর মাধ্যমে অনেক দু:খজনক ঘটনা এড়ানো সম্ভব হচ্ছে৷
ইউনিসেফ মনে করে এর ইতিবাচক ফল এরইমধ্যে পাওয়া যাচ্ছে৷ দেশের ৬ লাখ অল্পবয়েসি, যাদের মধ্যে ৬০ ভাগই কিশোরী, এখন বিয়ের সঠিক বয়স, শিক্ষা ও পরিবার পরিকল্পনার গুরুত্ব সম্পর্কে সরাসরি জানতে পেরেছে৷
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘উন্নয়ন অন্বেষণ' তাদের সাক্ষাৎকার ভিত্তিক জরিপে দেখতে পেয়েছে, ২০১০ সাল থেকে বাংলাদেশে যৌতুক প্রথা কমে আসছে৷
আর নারী শিক্ষার হার বাড়ানোর নীতি-কৌশলের কারণেও মেয়েদের স্কুলে যাওয়ার হার বেড়েছে৷ তবে শহরে আর গ্রামে এখনো নারী শিক্ষায় বৈষম্য আছে৷ ৯৭ ভাগ মেয়ে এখন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যাচ্ছে, যা উন্নয়নশীল বিশ্বে সর্বোচ্চ৷
প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়ক শিক্ষায়ও অগ্রগতি লক্ষ্যণীয়৷ এখন গ্রামে ২৩ ভাগ মা সন্তান প্রসব করেন প্রশিক্ষিত ধাত্রীর উপস্থিতিতে৷ নব্বইয়ের দশকে যা ছিল মাত্র শতকরা পাঁচ ভাগ৷ ১৯৭৫ সালে মাত্র ৮ ভাগ নারী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করতেন৷ ২০১১ সালে এই হার দাঁড়ায় শতকরা ৬২ ভাগে৷
এই উন্নয়নের পরও বাংলাদেশের নারীরা এখনো পুরুষের তুলনায় পিছিয়ে আছে৷ ছেলে শিশুর চেয়ে কন্যাশিশুর মৃত্যুর হার এখনো বেশি৷ উন্নয়ন অন্বেষণ এর ২০১০ সালের হিসাব অনুযায়ী ১,০০০ নবজাতকের মধ্যে কন্যা শিশু মারা যায় ২০টি৷ আর ছেলে শিশু ১৬টি৷