থিতিয়ে আসছে মোদী উচ্ছ্বাস!
১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪মোট নয়টি রাজ্যের ৩৩টি বিধানসভা আসন এবং তিনটি সংসদীয় আসনের উপ-নির্বাচনের ফলাফল বিজেপির পক্ষে এক অশনিসঙ্কেত বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল৷ হিন্দুত্ববাদী সংঘ পরিবারের ‘মেরুকরণের রাজনীতি' প্রত্যাখান করেছে মানুষ৷ ঘোষিত হয়েছে ধর্মনিরপেক্ষতার জয়৷ মোদী সরকারের ১০০ দিনের মাথায় প্রতিষ্ঠান বিরোধী হাওয়া বইতে শুরু করেছে৷ ক্ষমতায় আসার পর মোদী শাসনের এটা দ্বিতীয় পরীক্ষা৷ দুটি পরীক্ষাতেই সসম্মানে উত্তীর্ণ হতে পারেনি সরকার৷ উত্তর প্রদেশে ১১টি বিধানসভা আসনের উপ-নির্বাচনে শাসক দল সমাজবাদি পার্টি আটটি আসনে এবং মেইনপুরি সংসদীয় আসনে জিতে আবার তার হারানো জমি ফিরে পেয়েছে৷ যেখানে বিগত সংসদীয় নির্বাচনে ৮০টি আসনের মধ্যে ৭২টি আসন একাই দখল করেছিল বিজেপি৷
এই মাস তিনেকের মধ্যে কী এমন ঘটল যে রাজ্যের মানুষ বিজেপি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিল? পর্যবেক্ষকদের মতে, বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ, সাংসদ যোগী আদিত্যনাথ এবং সাক্ষী মহারাজের মত বিজেপি নেতারা বড্ড তাড়াহুড়ো করে ‘সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের রাজনীতি' শুরু করেছিল জোরেসোরে৷ ‘লাভ-জিহাদ', মাদ্রাসাগুলিতে শিক্ষার নামে সন্ত্রাসবাদে মগজ ধোলাই করা হয়, স্বাধীনতা দিবসে এবং প্রজাতন্ত্র দিবসে মাদ্রাসাগুলিতে জাতীয় পতাকা না তোলা ইত্যাদি অভিযোগ নিয়ে সংঘ পরিবারের অপপ্রচার ভোট বাক্সে ছাপ ফেলেনি৷ বরং প্রধানমন্ত্রীর নীরবতা প্রমাণ করে দিয়েছে তিনি জনমানসের ইচ্ছা অনিচ্ছার কথা পড়তে পারেননি৷ তিনি পড়তে পারেননি যে, ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি, স্মার্ট সিটি, বুলেট ট্রেন, পরিচ্ছন্ন টয়লেট, চীন জাপানের সঙ্গে দোস্তির চেয়ে সাধারণ মানুষ আগে চায় শান্তি, সম্প্রীতি ও নিরাপদে থাকতে৷ উপ-নির্বাচনের ফলাফল আরেকটা বার্তা দিয়েছে, ‘ডিভাইড অ্যান্ড রুলের' দিন শেষ৷ বিজেপি নেতৃত্ব অবশ্য মনে করেন যে, এই ফলাফল বিচার করতে হবে স্থানীয় দৃষ্টিতে৷
পাশাপাশি, এত তাড়াতাড়ি এটা মনে করারও সময় এখনো আসেনি যে প্রধানমন্ত্রী মোদী তাঁর প্রতিশ্রুতি পালনে ব্যর্থ হয়েছেন৷ তবে উপ-নির্বাচনের ফলাফলকে অ্যালার্ম বেল মনে করে মোদীকে নতুন করে ঘুঁটি সাজাতে হবে আগামী ১৫ই অক্টোবরের হরিয়ানা ও মহারাষ্ট্র বিধানসভা ভোটের বড় পরীক্ষায়৷ মহারাষ্ট এবং হরিয়ানা অনেক বছর ধরে কংগ্রেস পার্টির শাসনে৷
রাজস্থানে চারটি আসনের মধ্যে কংগ্রেস ছিনিয়ে নিয়েছে তিনটি, বিজেপি পেয়েছে একটি৷ মোদীর স্বরাজ্য গুজরাটে নয়টি আসনের মধ্যে বিজেপি ধরে রাখতে পেরেছে মাত্র ছয়টি আসন৷ তবে মোদীর ছেড়ে যাওয়া বদোদরা সংসদীয় আসনটি বিজেপির দখলেই আছে৷ পশ্চিমবঙ্গের দুটি বিধানসভা আসনের মধ্যে চৌরঙ্গি আসন পেয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস আর বিজেপি ছিনিয়ে নিয়েছে বসিরহাট দক্ষিণ আসনটি৷ এই প্রথম বিজেপি পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় প্রবেশের ছাড়পত্র পেল৷ আসামে পাঁচটি আসনের মধ্যে শিলচর আসনটি এসেছে এবার বিজেপির ঝুলিতে৷ কংগ্রেস পেয়েছে দু'টি এবং নিখিল ভারত সংযুক্ত গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট একটি৷ রাজ্যবিত্তিক এই ফলের ওপরে ভিত্তি করেই মোদী ঝড়ের বর্তমান গতি মাপতে চেষ্টা করছেন জাতীয় রাজনীতির বোদ্ধারা৷