মোদী থেকে আদানি: ভারতে হাসিনার একগুচ্ছ বৈঠক
৫ সেপ্টেম্বর ২০২২সোমবার বেলা বারোটা নাগাদ দিল্লির পালাম বিমানবন্দরে নামে শেখ হাসিনার বিমান। প্রথমদিনে শেখ হাসিনার দুইটি সৌজন্য-সাক্ষাৎ আছে। প্রথমটি ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে। বিকেল চারটের সময় এই সাক্ষাৎ হবে। তারপর সাড়ে সাতটার সময় গৌতম আদানির সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।
গৌতম আদানির সঙ্গে তার এই সৌজন্য সাক্ষাৎ ঘিরে প্রবল ঔৎসুক্য রয়েছে। সম্প্রতি গৌতম আদানি বিশ্বের তিন নম্বর ধনীর স্বীকৃতি পেয়েছেন। আগেই তিনি সম্পদের নিরিখে মুকেশ আম্বানিকে ছাড়িয়ে গিয়েছেন।
যোজনা কমিশনের সাবেক উচ্চপদস্থ আমলা অমিতাভ রায় ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''বাংলাদেশে বিভিন্ন ক্ষেত্রে আদানির বিনিয়োগ রয়েছে। সেদিক থেকে এই সাক্ষাৎ নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ।''
এআইআর নিউজ জানাচ্ছে, গত এপ্রিলে বাংলাদেশ ইকনমিক জোনস অথরিটির সঙ্গে আদানি পোর্ট ও এসইজেড লিমিটেডের চুক্তি হয়েছে। চট্টগ্রামের মীরসরাইতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগরে ভারতীয় ইকনমিক জোন তৈরি করবে আদানিরা। ২০১৫ সালে আদানির সঙ্গে বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভলাপমেন্ট বোর্ডের চুক্তি হয়। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে আদানি গোষ্ঠাী ২৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করার কথা জানিয়েছে লাইভমিন্ট। এছাড়া বাংলাদেশের বন্দরেও আদানির বিনিয়োগ আছে।
মোদাীর সঙ্গে বৈঠক
প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হাসিনার বৈঠক হবে মঙ্গলবার। চলবে বেলা ১১টা ৩০ মিনিট থেকে দপুর দ২টো ৩৫ মিনিট পর্যন্ত। এই সময়ের মধ্যে ছবি তোলার সংক্ষিপ্ত পর্ব বাদ দিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠক ও একান্ত বৈঠক হবে। শেখ হাসিনার সফরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পর্ব এটাই বলে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মনে করছে। এই আলোচনাতেই দুই দেশের একাধিক বিতর্কিত বিষয় উঠে আসবে। ভোটের আগে ভারত বাংলাদেশকে কী দিতে পারবে এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর চাহিদা নরেন্দ্র মোদী মেটাতে পারবেন কি না, সেটাও স্পষ্ট হয়ে যাবে।
মঙ্গলবার সকালে রাষ্ট্রপতি ভবনে শেখ হাসিনাকে আনুষ্ঠানিক অভ্যর্থনা দেয়া হবে, সেখানেও মোদী থাকবেন। বুধবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করেছেন মোদী।
দ্বিপাক্ষিক বৈঠক
ভারতও বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হবে বুধবার। সেদিনই দুই দেশের মধ্যে একাধিক চুক্তি হবে। সংবাদসংস্থা এএনআইয়ের মতে, অন্ততপক্ষে সাতটি চুক্তি হবে। জলবন্টন, রেল, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, জলবন্টন নিয়ে চুক্তি ও সমঝোতা হতে পারে। চুক্তির সংখ্যা আরো বাড়তে পারে।
তবে তিস্তা নিয়ে কোনো চুক্তি হবে কি না, সে বিষয়ে কোনো দেশই কিছু বলেনি। তিস্তার বিষয়টি আলোচনায় আছে। এএনআই-কে দেয়া সাক্ষাৎকারে হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ ভাটিতে আছে। ভারত থেকে সেখানে জল যাচ্ছে। তাই ভারতের আরো উদারতা দেখানো দরকার। তার ফলে দুইটি দেশই লাভবান হবে। হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ শুধু গঙ্গার জলের ভাগ পায়। আরো ৫৪টি নদী আছে, যা ভারত ও বংলাদেশের মধ্যে দিয়ে বইছে। সেগুলিরও জলের ভাগ বাংলাদেশের পাওয়া উচিত।
প্রবীণ সাংবাদিক আশিস গুপ্ত ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, তিস্তা চুক্তি ভারতের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। হাসিনা তো মমতার সঙ্গেও কথা বলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু মমতা দিল্লি আসছেন না বা তাকে ডাকা হয়নি। তৃণমূল নেত্রীও তিস্তা চুক্তি নিয়ে তার বিরোধিতা থেকে সরে আসেননি। ফলে পরিস্থিতি আগের মতোই আছে।
যে সাতটি বিষয়ে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে চুক্তি ও সমঝোতা হওয়ার কথা, তার মধ্যে তিস্তা নেই। কুশিয়ারা নদীর জলবন্টনের বিষয়টি আছে।
এছাড়া শেখ হাসিনা রাষ্ট্রপতি দ্রোপদী মুর্মু এবং উপরাষ্ট্রপতি ধনকড়ের সঙ্গেও দেখা করবেন।
বৃহস্পতিবার ভারত-বাংলাদেশ ব্যবসায়িক ফোরামের বৈঠকে অংশ নেবেন তিনি।
নিজামুদ্দিন ও আজমেরে
সোমবারই সন্ধ্যায় শেখ হাসিনা নিজামুদ্দিন দরগায় যাবেন। বেশ কিছুক্ষক্ষণ থাকবেন। বৃহস্পতিবার তিনি যাবেন আজমের দরগায়। তারপর তিনি বাংলাদেশ ফিরবেন।