মমতার অবস্থান বদল নিয়ে জল্পনা
৯ মার্চ ২০১৫নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ৯-১০ মাসের মধ্যে তাঁর মুখোমুখি হননি মমতা, এড়িয়ে গেছেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সব রকমের সৌজন্য সাক্ষাৎ৷ প্রধানমন্ত্রীর ডাকা রাজ্য-মুখ্যমন্ত্রীদের বৈঠকেও যোগ দেননি তিনি৷ শুধু তাই নয়, গত ফেব্রুয়ারি মাসে প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে আয়োজিত ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর ট্রান্সফর্মিং ইন্ডিয়া, সংক্ষেপে নীতি আয়োগ গঠনের বৈঠকে গরহাজির ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ নীতি আয়োগ গঠন যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর পরিপন্থি বলে সমালোচনা করতেও ছাড়েনি তিনি৷ এমনকি সংসদের চলতি অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর ধন্যবাদসূচক প্রস্তাবের ওপর সংশোধনি আনতে তৃণমূলের চিরবৈরি সিপিএম-এর হাত ধরতেও কসুর করেনি তৃণমূল৷ কী এমন ঘটলো যাতে মমতার এই পরিবর্তন? রাজনৈতিক মহলে এই বৈঠক নিয়ে তাই আজ জল্পনার অন্ত নেই৷
মমতা মুখে অবশ্য বললেন, রাজ্যের আর্থিক পরিস্থিতি, উন্নয়ন এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মাথায় ঋণের বোঝা লাঘব করার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করতেই এই বৈঠক৷ তিনি বলেন, গত ৩৪ বছরের পূর্বতন বাম জমানায় সুদে আসলে হিমালয় প্রমাণ ঋণ জমে গেছে রাজ্য সরকারের ঘাড়ে, যা শোধ করা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার৷ তাই কেন্দ্রীয় সরকার যেন রাজ্য সরকারকে তা মেটানোর দায় থেকে সাময়িকভাবে অব্যাহতি দেন৷ এ জন্য মোদীর সহযোগিতা চেয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধায়৷ আর রাজ্যের উন্নয়নের স্বার্থে বিষয়টি ইতিবাচক দৃষ্টিতে বিবেচনা করার আশ্বাস দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী৷
এরপরেও বিশ্লেষকরা এই বৈঠকের পেছনে রাজনৈতিক গন্ধ পাচ্ছেন৷ মমতা-মোদীর একে অপরের প্রতি অবস্থান বদলের নেপথ্য কারণ হিসেবে যেটা দেখা হচ্ছে, তা হলো সারদা চিট ফান্ড কেলেঙ্কারি এবং কেন্দ্রীয় তদন্থ ব্যুরো সিবিআই তদন্তে রাজ্যের শাসকদলের মন্ত্রী থেকে হোমড়া-চোমড়ারা যেভাবে ফেঁসে যাচ্ছেন, তাতে শেষ পর্যন্ত এই জল কোথায় গড়ায় – তা নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রয়েছেন ঘোর অস্বস্তিতে৷
গোদের ওপর বিষফোঁড়ার মতো তৃণমূলের একদা স্তম্ভ মুকুল রায় সিবিআই জেরার মুখে রাজসাক্ষী হবার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন কিনা – তা নিয়েও শঙ্কার শেষ নেই৷ জেরার পর মুকুল রায়ের শরীরী ভাষাকে সেভাবেই অনেকে ব্যাখ্যা করেছেন৷ এখন মুকুল রায় মমতার চক্ষুশূল৷ তাহলে এ পরিস্থিতির সামাল দিতেই কি মমতা মোদীর সহযোগিতা চান? প্রশ্নটা কোটি টাকার৷ মুকুল রায়ের ডানা ছাঁটা চলছে৷ তাই ভবিষ্যতে মুকুল রায়কে যাতে বিজেপি প্রশ্রয় না দেয়, সেই পথ বন্ধ করতে মমতা তাঁর চেষ্টার কার্পণ্য একেবারেই করছেন না, ধারণা এমনটাই৷
অন্যদিকে মোদীরও দরকার মমতাকে৷ বাংলাদেশের সঙ্গে সহযোগিতা ও সদিচ্ছা বাড়াতে মোদী চান ঢাকার সঙ্গে যে দুটি বিষয় এখনো ঝুলে আছে, তার গ্রহণযোগ্য সমাধান করতে৷ এ দুটি বিষয় হলো স্থলসীমা চুক্তি এবং তিস্তার জল বা পানি বণ্টন চুক্তির জট ছাড়ানো৷ বলা বাহুল্য, এই দুটি চুক্তির বাস্তবায়নে পশ্চিমবঙ্গের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের সমর্থন জরুরি৷ কারণ সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভায় মোদী সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকলেও, উচ্চকক্ষ রাজ্যসভাতে বিজেপির নেই৷ সেক্ষেত্রে মমতার তৃণমূলের সমর্থন দরকার৷
উল্লেখ্য, শীঘ্রই বাংলাদেশ সফরে যাচ্ছেন নরেন্দ্র মোদী৷ তার আগে সংসদের শিলমোহর নিয়ে ঢাকাকে মোদী সরকারের দেয়া বড় উপহার হবে ঐ দুটি চুক্তির বাস্তবায়ন৷ এছাড়া জমি অধিগ্রহণ বিলের মতো অন্যান্য বিল পাশ করাতেও তৃণমূলকে পাশে পেতে চান তিনি৷ এক কথায় রাজনীতির সেই ‘গিভ অ্যান্ড টেক পলিসিটা' এবার নিয়েছেন মোদী, যেটা কখনোই একতরফা হয় না৷