মোদীর বৈঠকে কথা বলার সুযোগ নেই মমতার
১৬ জুন ২০২০করোনা এবং লকডাউন নিয়ে পরবর্তী পরিকল্পনা করতে আজ মঙ্গলবার এবং বুধবার মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে ফের বৈঠক শুরু করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু সেই বৈঠক নিয়ে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে। অভিযোগ, অ-বিজেপি রাজ্যগুলিকে কার্যত কথা বলার সুযোগই দিচ্ছে না কেন্দ্র। সুযোগ পাচ্ছেন না পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। রেল, জলপথ, লকডাউন এবং আমফানের কারণে কেন্দ্রীয় সাহায্য সহ বেশ কয়েকটি বিষয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে কথা বলতে চাইছিল রাজ্য। কিন্তু বৈঠকে নরেন্দ্র মোদী সেই সুযোগ না দেওয়ায় দৃশ্যত ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মমতা।
লকডাউন চলাকালীন রাজ্যগুলির পরিস্থিতি জানতে বেশ কয়েকবার মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স করেছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রতিবার সব রাজ্য কথা বলার সুযোগ পায়নি। যা নিয়ে ক্ষোভ এবং উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল বিভিন্ন রাজ্য। শেষ পর্যন্ত এপ্রিল মাসের শেষ বৈঠকে প্রতিটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে কথা বলার সুযোগ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। রাত সাড়ে দশটা পর্যন্ত চলেছিল বৈঠক।
সেই বৈঠকে কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্কের বিষয়ে বিস্তর কথা বলেছিলেন মমতা। মোদীকে বলেছিলেন, 'আমি কারও কেনা গোলাম নই'। মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে আলোচনানা করে কেন্দ্র যে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারে না, সে বিষয়েও কড়া মন্তব্য করেছিলেন মমতা। শুধু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীই নন, অ-বিজেপি রাজ্যের আরও বেশ কয়েকজন মুখ্যমন্ত্রীও একই কথা বলেছিলেন। কিন্তু তারপরেও যে বিজেপি তার লাইন থেকে সরছে না, এ দিনের বৈঠকই তার প্রমাণ।
বিজেপি অবশ্য পাল্টা যুক্তি সাজানোর চেষ্টা করেছে। তাদের বক্তব্য, যে রাজ্যগুলি এই মুহূর্তে করোনা নিয়ে সব চেয়ে বেশি সমস্যায়, সেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদেরই কথা বলার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বিরোধীদের প্রশ্ন, গোটা দেশেই করোনা বাড়ছে। অথচ অ-বিজেপি রাজ্য হিসেবে শুধুমাত্র পাঞ্জাব আর মহারাষ্ট্র সুযোগ পেল কেন? কেন কংগ্রেস-শাসিত রাজস্থান সুযোগ পেল না? সেখানে কি করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ নয়? কেন কেরালাকে সুযোগ দেওয়া হবে না করোনা মোকাবিলার মডেল তৈরি করে দেওয়ার জন্য?
এখানেই শেষ নয়। কেন্দ্রীয় সরকার গত ৮ জুন থেকে আনলক-১ চালু করে দিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ সহ বিভিন্ন রাজ্যে অফিস, শপিং মল খুলে গিয়েছে। শহরের অফিস, মলে যাঁরা কাজ করতে আসেন, তাঁদের একটা বড় অংশ গ্রাম বা মফস্বলে থাকেন। লোকাল ট্রেনের উপরেই তাঁদের ভরসা করতে হয়। কিন্তু রেল কেন্দ্রের হাতে। এখনও পর্যন্ত রেল মন্ত্রক শহরতলির ট্রেন চালানো শুরু করেনি। ফলে সাধারণ মানুষ অফিস খুলে যাওয়া সত্ত্বেও কাজে যেতে পারছেন না। পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যে এটা একটা বড় সমস্যা। এই বিষয়গুলি বৈঠকে তোলার পরিকল্পনা ছিল রাজ্যের। কিন্তু সে সুযোগই হচ্ছে না।
পশ্চিমবঙ্গের প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্ভবত বুধবারের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী যোগ দেবেন না। এতটাই ক্ষুব্ধ তিনি। প্রোটোকল মেনে অন্য কোনও মন্ত্রী বা আমলাকে বৈঠকে পাঠানো হবে।
বস্তুত, এ বিষয়ে মমতার পাশে দাঁড়িয়েছেন রাজ্যের বিরোধীপক্ষও। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী জানিয়েছেন, ''এটা রাজ্যকে অপমান করা এবং তাচ্ছিল্য করা। কেন্দ্র এই দ্বিচারিতা করতে পারে না।'' প্রদেশ কংগ্রেসও একই কথা বলেছে। তাদের বক্তব্য, বিজেপি ভুলে যাচ্ছে, ভারত যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় চলে। সেখানে প্রত্যেক রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেই কেন্দ্রের লকডাউন সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। প্রধানমন্ত্রী একা এই সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। এটা নীতিবিরুদ্ধ।