মোবাইল এর ভিড়ে হারিয়ে যাচ্ছে চিঠি
৫ নভেম্বর ২০০৯কারণ প্রযুক্তির এই রমরমার যুগে মোবাইল আর ইন্টারনেট খুব সহজেই দখল করে নিয়েছে পত্র লেখকের লেখনীর জায়গাটা৷
বাংলাদেশের সকল সরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেশজুড়ে নেটওয়ার্ক বিস্তার করে আছে যে প্রতিষ্ঠানটি তা হচ্ছে বাংলাদেশ পোস্ট অফিস৷ বাংলাদেশের ৬৪ জেলায় ১৪ কোটি মানুষের জন্য ১০ হাজার পোস্ট অফিস আর ৪০ হাজার পোস্টম্যান কাজ করে থাকেন৷ কিন্তু এখন এই পোস্ট অফিসগুলোর কাজের পরিধি এতোটাই কমে এসেছে যে, ডাকপিয়নের রাত তো দূরের কথা দিনেও তেমন কোন কাজ থাকে না৷
এই যেমন ধরা যাক চুন্নু বিশ্বাসের কথা৷ বাংলাদেশের পশ্চিমের একটি জেলার ছোট্ট একটি গ্রামে তার দুই কামরার টিনের তৈরি পোস্ট অফিস৷ কিন্তু গত চার দিনেও একটি চিঠি আসেনি তার পোস্ট অফিসে যা কিনা তিনি বিলি করতে পারেন৷ এখন তিনি যে টেবিলের উপর অলস সময়ে ঘুমিয়ে থাকেন, সেই টেবিলেই একসময় চিঠির স্তূপ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে উঠতেন চুন্নু বিশ্বাস৷ তার কথায়, গ্রামবাসী এখন আর চিঠি নিতে বা পোস্ট করতে ডাকঘরে আসে না, তারা আসে গল্প করতে৷ কারণ দূর দূরান্তে কথা বলার জন্য গ্রামের ঘরে ঘরে এখন মোবাইল ফোন রয়েছে৷
এটাতো গ্রামের চিত্র৷ যেখানে ইন্টারনেট ব্যবস্থা ততোটা উন্নত নয়৷ তাহলে ভেবেই নেয়া যায় যে, শহরের পোস্ট অফিসগুলোর অবস্থা কতটা ভয়াবহ৷ যেখানে ইন্টারনেট, মোবাইল বা ল্যান্ড ফোন রয়েছে হাতের একেবারে নাগালে৷ পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০০৩ সালে বাংলাদেশের মোবাইল ফোনের সংখ্যা ছিল ১.৫ মিলিয়ন৷ আর গেল মাসে সেই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫০ মিলিয়নে৷ যা কিনা ২০১৫ সাল নাগাদ দ্বিগুণ হবে৷
বাংলাদেশ ডাক দপ্তরের মহাপরিচালক মোবাশ্বের রহমান অনেকটা হতাশ হয়েই বলেন, ১৫০ বছরের পুরনো জনপ্রিয় এই ডাক ব্যাবস্থা যদি এভাবে চলতে থাকে, তবে এটি কিভাবে টিকে থাকবে! হিসাব মতে, গত ১৯৯৯সালে বাংলাদেশ পোস্ট অফিস ২৪০মিলিয়ন চিঠি বিলি করে৷ ২০০৪ সালে ২০০ মিলিয়ন আর গেল বছর তা দাঁড়ায় ১৫০ মিলিয়নে৷ পরিসংখ্যানই বলে দেয় মানুষ ডাক ব্যবস্থা থেকে কতটা দূরে চলে এসেছে৷ মোবাশ্বের রহমান জানান, গেল বছর বাংলাদেশ পোস্ট অফিসের ২২ মিলিয়ন ডলার ক্ষতি হয়েছে৷ আর কর্মীদের ব্যস্ত রাখতে বাংলাদেশ পোস্ট অফিস নতুন কিছু পরিকল্পনা হাতে নেবার কথা চিন্তা করছে৷ যার মধ্যে রয়েছে বাণিজ্যিক অনেক ব্যাংকের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি করা৷ যেসব বাণিজ্যিক ব্যাংকের শাখা প্রত্যন্ত গ্রামে নেই সেইসব এলাকায় পোস্ট অফিসের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে অনেক ব্যাংকই বিদেশ থেকে টাকা পাঠানোর ব্যবস্থা করে থাকে৷
মহাপরিচালক মোবাশ্বের রহমান আরো জানান, ডাক ব্যবস্থাকে জনপ্রিয় করতে তাঁর দপ্তর একটি চিঠি লেখার প্রতিযোগিতার আয়োজন করতে যাচ্ছে৷ এই প্রতিয়োগিতা যারা চিঠি লেখা ভুলে গেছেন এমন বাঙালিদের আবারো হয়তো হাতে কলম নিতে উৎসাহিত করবে৷
প্রতিবেদক: ঝুমুর বারী
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক