1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মোসাদ-এর হাতিয়ার ডিজিটাল ভাইরাস!

১৩ আগস্ট ২০১১

ইরানের সুরক্ষিত পরমাণু প্রকল্প কেন্দ্র নাতানস-এ গত বছর এক বড় বিপত্তি ঘটে৷ ধ্বংস হয় হাজারো সেন্ট্রিফিউজ৷ ফলে এই কেন্দ্রের পরমাণু সমৃদ্ধকরণের ক্ষমতাও কমে যায়৷ একটি ছোট্ট কম্পিউটার ভাইরাস পরমাণু কেন্দ্রের এ ক্ষতিসাধন করে৷

https://p.dw.com/p/12Fo2
সাবধান! ভাইরাস!ছবি: Fotolia/drubig-photo

ভাইরাসের নাম ‘স্টাক্সনেট'৷ ২০১০ সালের জুন মাসে এটিকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়৷ এটিকে এখন পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর কম্পিউটার ভাইরাস হিসেবে গণ্য করা হয়৷ জার্মান সাময়িকী ‘ডেয়ার স্পিগেল' এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ইসরায়েল-এর গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ দীর্ঘ গবেষণা এবং বেশ কয়েক মিলিয়ন ইউরো খরচায় তৈরি করে এই ভাইরাস৷ ইতিমধ্যে বিশ্বের লাখখানেক কম্পিউটারকে আক্রান্ত করেছে ‘স্টাক্সনেট'৷

এই ভাইরাসটি ইন্টারনেটসংযোগবিহীন উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন নিরাপদ কম্পিউটারে আঘাত হানতে সক্ষম৷ আগে মনে করা হতো, ইন্টারনেট সংযোগ নেই এমন কম্পিউটারে বড় ধরণের ভাইরাস আক্রমণ বোধহয় সম্ভব নয়৷ কিন্তু ‘স্টাক্সনেট' সেই ধারণা পুরোটাই বদলে দিয়েছে৷ এই ভাইরাস ইরানের নাতানস পরমাণু কেন্দ্রের কম্পিউটারে আঘাত হানে৷ এসব কম্পিউটার পরমাণু সমৃদ্ধকরণ প্রক্রিয়ার সেন্ট্রিফিউজ নিয়ন্ত্রণ করছিল৷ ভাইরাসটি এসব কম্পিউটারের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় এবং ভুল কমান্ড প্রয়োগের মাধ্যমে সেন্ট্রিফিউজগুলো ধ্বংস করে৷ ২০০৯ সালের শেষ থেকে ২০১০ সালের শুরুর মধ্যে ইরানের পরমাণু কেন্দ্রে এই ক্ষতিসাধন করে ‘স্টাক্সনেট'৷

জার্মান হ্যাকারদের সংগঠন ‘কেওস কম্পিউটার ক্লাব'-এর সদস্য ফ্রাংক রিগার, ‘স্টাক্সনেট'-কে আখ্যা দিয়েছেন, ‘‘ডিজিটাল বাংকার বিস্ফোরক'' হিসেবে৷ তিনি বলেন, এই ভাইরাসটি আধুনিক যুদ্ধের নতুন এক সমরাস্ত্র হিসেবে দেখা দিয়েছে৷ এটি একটি কম্পিউটার ব্যবহার করে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে সামরিক আক্রমণ পরিচালনায় সক্ষম৷

কম্পিউটার নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান সিমেনটেক ইসরায়েল-এর প্রধান স্যাম অ্যাঞ্জল ‘ডেয়ার স্পিগেল'-কে বলেন, ‘স্ট্যাক্সনেট' এখন পর্যন্ত আমাদের দেখা সবচেয়ে অত্যাধুনিক আক্রমণ৷ একটি সুরক্ষিত শিল্প ব্যবস্থায় এরকম আক্রমণ সহজ নয়৷

এই ভাইরাস এখন পর্যন্ত ইরান, ইন্দোনিশিয়া, মালয়েশিয়া, ভারত এবং বেলারুসের বিভিন্ন কম্পিউটার নেটওয়ার্কে হামলা চালিয়েছে৷ মজার ব্যাপার হচ্ছে, বেলারুসের এক গবেষক সার্জেই উলাসেন প্রথম ‘স্টাক্সনেট' শনাক্ত করেন৷ মিনস্ক এর একটি নিরাপত্তা সংস্থার গবেষক সার্জেই, ২০১০ সালের জুন মাসে একটি ই-মেল পেয়েছিলেন৷ একটি ইরানি প্রতিষ্ঠান সেই ই-মেলে আজব এর সমস্যার কথা জানান৷ প্রতিষ্ঠানটির কম্পিউটারগুলো নাকি অদ্ভুত ব্যবহার করছে, নিজের ইচ্ছায় বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, আবার চালুও হচ্ছে৷ সার্জেই এবং তাঁর সহকর্মীরা আক্রান্ত এসব কম্পিউটার সপ্তাহখানেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন৷ সেখানেই প্রথম শনাক্ত হয় ‘স্টাক্সনেট'৷

এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের লাখখানেক কম্পিউটারে ছড়িয়েছে ‘স্টাক্সনেট'৷ ইরানের ৬০,০০০ কম্পিউটারে এই ভাইরাসের দেখা মিলেছে৷ ইন্দোনেশিয়ার ১০,০০০ এবং ভারতের ৫,০০০ কম্পিউটারেও ‘স্টাক্সনেট' ভাইরাস পাওয়া গেছে৷ সাধারণত ইউএসবি ফ্ল্যাশ ড্রাইভের মতো কোন মাধ্যমে করে এই ভাইরাস কম্পিউটারে প্রবেশ করে৷ আক্রান্ত ড্রাইভ কোন কম্পিউটারে যুক্ত করার সঙ্গে সঙ্গেই গোপনে সেই কম্পিউটারে জায়গা করে নেয় ‘স্টাক্সনেট'৷ পরবর্তীতে কোনো রকম চিহ্ন না রেখে কম্পিউটারের অ্যান্টি ভাইরাস অকেজো করে দেয় এটি৷ এরপর উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের যে অংশ ফ্ল্যাশ ড্রাইভ নিয়ন্ত্রণ করে সেখানে ঘাঁটি গাড়ে ‘স্টাক্সনেট'৷

‘স্টাক্সনেট'-এর অন্যতম কাজ হচ্ছে কম্পিউটারে স্টেপ-৭ নামক একটি সফটওয়্যার এর কার্যক্রম খুঁজে বের করা৷ এই সফটওয়্যারটি জার্মান প্রতিষ্ঠান সিমেন্স এর তৈরি৷ ইরানের নাতানস এর পারমাণবিক কেন্দ্রে ব্যবহার করা হয় স্টেপ-৭ সফটওয়্যার৷ এটির সন্ধান পেলেই ধ্বংসলীলা শুরু করে ‘স্টাক্সনেট'৷

ইতিমধ্যে অবশ্য ‘স্টাক্সনেট' বধের ডিজিটাল অস্ত্র তৈরি করে ফেলেছে সিমেন্স৷ তবে, আশঙ্কা করা হচ্ছে এই ভাইরাসের পরবর্তী সংস্করণ হয়ত আরো বড় কোন উদ্দেশ্য নিয়ে প্রকাশ পাবে৷ সেই আশঙ্কা দমনে এখন বিস্তর গবেষণা শুরু করেছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নিরাপত্তা সংস্থাগুলো৷

প্রতিবেদন: আরাফাতুল ইসলাম

সম্পাদনা: দেবারতি গুহ