ম্যার্কেলের শিবিরের পতনের পূর্বাভাষ
২৫ আগস্ট ২০২১জার্মানিতে সাধারণ নির্বাচনের আর প্রায় এক মাস বাকি৷ জনমত সমীক্ষায় এই প্রথম বাকিদের পেছনে ফেলে এগিয়ে গেল সামাজিক গণতন্ত্রী এসপিডি দল৷ জনপ্রিয়তার বিচারে প্রায় ১৫ বছর ধরে খারাপ ফল করার পর আবার মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে এই শক্তি৷ এই সাফল্যের পেছনে মূল কারণ অবশ্যই দলের চ্যান্সেলর পদপ্রার্থী ওলাফ শলৎস৷ তবে একাধিক কারণে তাঁর দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর নাজেহাল অবস্থাও ভোটারদের মনে তার ও তার দলের প্রতি অপ্রত্যাশিত সমর্থন জাগিয়ে তুলছে৷ নির্বাচন পর্যন্ত এমন জনসমর্থন ধরে রাখতে পারলে চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের প্রায় ১৬ বছরের ক্ষমতাকালের পর শলৎস তার উত্তরসূরী হতে পারেন৷
মঙ্গলবার প্রকাশিত জনমত সমীক্ষা অনুযায়ী ২৩ শতাংশ মানুষ এসপিডি দলের প্রতি সমর্থন প্রকাশ করেছে৷ ২২ শতাংশ সমর্থন নিয়ে ম্যার্কেলের ইউনিয়ন শিবির দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে৷ সবুজ দল ১৮ শতাংশ সমর্থন পেয়ে তৃতীয় স্থান দখল করেছে৷ ফর্সা নামের সংস্থার সমীক্ষার ইতিহাসে ইউনিয়ন শিবির কখনো এত খারাপ ফল করে নি৷ সর্বশেষ এই সমীক্ষা অনুযায়ী দুই বড় রাজনৈতিক শক্তি যথেষ্ট আসন না পাওয়ার কারণে নির্বাচনের পর দুটির বদলে তিনটি দলের জোট সরকার গঠন করতে হবে৷ সে ক্ষেত্রে আগামী জোট সরকারে এসপিডি দলের নেতৃত্বের সম্ভাবনা তিন-চতুর্থাংশ৷ সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশ মত বদলের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়ায় সামাজিক গণতন্ত্রীদের অবস্থান যথেষ্ট মজবুত বলে মনে হচ্ছে৷
ইউনিয়ন শিবিরের চ্যান্সেলর পদপ্রার্থী আরমিন লাশেট আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে নিজের যাবতীয় দুর্বলতা কাটিয়ে দলের সদস্য, কর্মী, সমর্থক ও ভোটারদের আস্থা অর্জন করতে না পারলে সিডিইউ ও সিএসইউ দলকে শেষ পর্যন্ত বিরোধী আসনে বসতে হবে বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন৷ সবুজ দলের চ্যান্সেলর পদপ্রার্থী আনালেনা বেয়ারবক প্রাথমিক সাফল্যের পর সমর্থনের বিচারে তৃতীয় স্থানে নেমে গেছেন৷ এই অবস্থায় বর্তমান ভাইস চ্যান্সেলর ও অর্থমন্ত্রী ওলাফ শলৎস দেশের কাণ্ডারী হিসেবে ভোটারদের কাছে সবচেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠছেন৷ সংসদীয় গণতন্ত্রে শীর্ষ প্রার্থীদের জনপ্রিয়তা তেমন গুরুত্বপূর্ণ না হলেও দলীয় সমর্থনের বিচারেও একই মনোভাব দেখা যাচ্ছে৷
ধারাবাহিকতা বজায় রাখার স্বার্থে ম্যার্কেলের উত্তরসূরি হিসেবে শলৎস অনেক মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠছেন৷ ম্যার্কেলের মতো ধীর-স্থির ও শান্ত স্বভাবের এই মানুষটি আবেগের বদলে যুক্তিকেই প্রাধান্য দেন৷ দুই নেতার মধ্যে প্রায় প্রতিদিন এসএমএস বার্তা চালাচালি হয়৷ শলৎস বেশ সচেতনভাবেই ম্যার্কেলের ‘স্টাইল' অনেকটা রপ্ত করেছেন বলে মনে করা হচ্ছে৷ এমনকি গত সপ্তাহে এক সংবাদপত্রের সঙ্গে সাক্ষাৎকারের সময় তোলা ছবিতে শলৎসের হাত রাখার ভঙ্গিও ম্যার্কেলের কথা মনে করিয়ে দেয়৷ মোটকথা জার্মানির মানুষের দীর্ঘকালের পরিচিত ও আস্থান উৎস হিসেবে পরিচিত ‘ম্যার্কেল ব্র্যান্ড' তার হাতেই সুরক্ষিত থাকবে, এমনই একটা ধারণা সৃষ্টি করছেন এসপিডি নেতা শলৎস৷ নিজের দল বামপন্থি ভাবধারা আঁকড়ে ধরলেও তিনি অনেক বাস্তববাদী অবস্থান নিয়ে এসেছেন৷ ফলে শিল্প-বাণিজ্য জগতের কাছেও তিনি বেশ গ্রহণযোগ্য৷ চ্যান্সেলরের আসনে বসলে ম্যার্কেলের তুলনায় আরও সাহস দেখিয়ে তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে এক ফিসকাল ইউনিয়ন গড়ে তোলার উদ্যোগ নিতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে৷
এসবি/কেএম (ডিপিএ, রয়টার্স)