ম্যার্কেলের শেষ মার্কিন সফরে কি সম্পর্কের বরফ গলবে?
১৫ জুলাই ২০২১বুধবার ওয়াশিংটন পৌঁছলেন জার্মান চ্যান্সেলার ম্যার্কেল। আগামী সেপ্টেম্বরেই শেষ হচ্ছে ম্যার্কেলের কার্যকাল। প্রায় ১৬ বছর ধরে জার্মানি শাসন করার পর তিনি সরে দাঁড়াচ্ছেন। তাই এটাই চ্যান্সেলার হিসাবে সম্ভবত তার শেষ অ্যামেরিকা সফর।
এই সফর আর পাঁচটা সফরের মতো নয়। সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের আমলে অ্যামেরিকার সঙ্গে জার্মানির সম্পর্ক তলানিতে গিয়ে ঠেকেছিল। ন্যাটো নিয়ে ট্রাম্প-ম্যার্কেল উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় এখন ইতিহাস। অতীতে গুয়ান্তানামোর ডিটেনশন শিবির নিয়ে, চরবৃত্তি নিয়ে বার্লিনের সঙ্গে ওয়াশিংটনের বিরোধ সামনে এসেছে। তবে সেই অতীতকে পিছনে সরিয়ে রেখে এখন বাইডেনের শাসনে নতুন করে অ্যামেরিকা ও জার্মানির মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে চান ম্যার্কেল। সে জন্যই তার এই সফর এত গুরুত্বপূর্ণ।
বাইডেনকে ম্যার্কেল দীর্ঘদিন ধরে চেনেন। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নতির ক্ষেত্রে তিনি বাইডেনের মনোভাব জানেন। তাই আশা নিয়েই হোয়াইট হাউসে আলোচনার জন্য ঢুকবেন ম্যার্কেল। তবে কাজটা সহজও নয়। সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো, দুই দেশের মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে আনা।
চ্যান্সেলার হিসাবে ম্যার্কেল ২০ বার অ্যামেরিকা গেছেন। কিন্তু গত তিন বছর তিনি হোয়াইট হাউসে পা রাখেননি। আবার এটাও ঘটনা, ইউরোপের প্রথম নেতা হিসাবে বাইডেন-জামানায় তিনি অ্যামেরিকা গেলেন।
আলোচনায় কোন বিষয় আসতে পারে
একটা স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে বাইডেন ও ম্যার্কেল আলোচনা করতে পারেন। সেটা হলো নর্ড স্ট্রিম ২ পাইপলাইন। রাশিয়া থেকে জার্মানিতে গ্যাস আনার জন্য এই পাইপলাইন প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষের দিকে। অ্যামেরিকা দীর্ঘদিন ধরে এর বিরোধিতা করে এসেছে। তাদের যুক্তি, এর ফলে রাশিয়ার উপর খুব বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়বে জার্মানি। ইউরোপের এনার্জি সিকিউরিটি নিয়ে সমস্যা দেখা দেবে।
বাইডেনও ভাইস প্রেসিডেন্ট থাকার সময় এবং প্রেসিডেন্ট হয়েও এই প্রকল্পের বিরোধিতা করেছেন। তবে এই প্রকল্প রূপায়ণের দায়িত্বে থাকা কোম্পানির উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে তার প্রশাসন।
জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাইকো মাস এখন অ্যামেরিকায়। সেখানে তিনি বলেছেন, অনেক বিষয়েই দুই নেতা একমত হতে পারেন। তবে বাইডেন ও ম্যার্কেল আলোচনার পর পাইপলাইন নিয়ে বিরোধ একেবারে মিটে যাবে কি না, সেটা দেখার বিষয়।
এছাড়া তাদের আলোচনায় চীন আসতে পারে। দুই দেশের চীন-নীতি আলাদা। জার্মানির কিছু জিনিসের উপর অ্যামেরিকা পেনাল্টি মাসুল বসিয়ে রেখেছে, তা নিয়েও আলোচনা হতে পারে। অ্যামেরিকায় পর্যটকদের ঢোকা নিয়ে যে কড়াকড়ি আছে, সেই বিষয়েও কথা হতে পারে। মার্কিন প্রশাসনের সূত্র জানাচ্ছে, পরিবেশ, আন্তর্জাতিক সুরক্ষা, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ মেনে চলার মতো বিষয়গুলি নিয়েও কথা হবে।
ম্যার্কেলের সফরসূচি
বৃহস্পতিবার সকালে ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের সঙ্গে প্রাতঃরাশ বৈঠক করবেন ম্যার্কেল। সেখানে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের নানা দিক নিয়ে কথা হবে।
তারপর চ্যান্সেলার মার্কিন শিল্প-বাণিজ্য ক্ষেত্রের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলবেন। তিনি জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটিতে যাবেন। সেখানে তিনি ভাষণ দেবেন। তাকে সাম্মানিক ডক্টরেটও দেয়া হবে।
সন্ধ্যায় তিনি হোয়াইট হাউসে যাবেন। বাইডেনের সঙ্গে আলোচনা করবেন। বিভিন্ন প্রতিনিধিদলের সঙ্গেও কথা বলবেন। তার সম্মানে ডিনার দিচ্ছেন বাইডেন। এভাবেই একটা ব্যস্ত দিন কাটাবেন ম্যার্কেল।
জিএইচ/এসজি(এপি, এএফপি, ডিপিএ)