ম্যালেরিয়া মোকাবিলায় অভিনব উদ্যোগ
১০ জুলাই ২০১৫পোকার মাধ্যমেই ডেঙ্গু বা ম্যালেরিয়ার মতো বিপজ্জনক সংক্রামক রোগ সবচেয়ে বেশি ছড়িয়ে পড়ে৷ প্রতি বছর প্রায় ১০০ কোটি মানুষ এমন পোকাবাহিত রোগে সংক্রমিত হন৷ ফলে লক্ষ লক্ষ মানুষের মৃত্যু ঘটে৷
জার্মানির বন ও লাইপসিশ শহরের বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা ক্ষতিকারক পোকাদের মোকাবিলা করতে এক সম্পূর্ণ নতুন সম্ভাবনা খুঁজে পেয়েছেন৷ লাইপসিশ বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. মাটিয়াস বেয়ার বলেন, ‘‘আগে মানুষ কীটনাশক ব্যবহার করে ঢালাওভাবে সব পোকা ধ্বংস করতো৷ প্রয়োজনীয় পোকাও মরে যেত৷ নতুন পদ্ধতিতে নির্দিষ্ট পরজীবী পোকা ধ্বংস করা সম্ভব হবে, যারা গাছের ফল নষ্ট করে বা রোগ বহন করে৷
গবেষকরা এই লক্ষ্যে পোকার চারিপাশের কাইটিন বর্মে রদবদল ঘটাচ্ছেন৷ কাইটিন খোলস পোকার আকার নির্ধারণ করে এবং ধাক্কা, বিষাক্ত পদার্থ বা জীবাণু থেকে তাদের রক্ষা করে৷ এই বর্ম ত্বকের কোষ দিয়ে তৈরি, যা এক পদার্থের নিঃসরণ ঘটায়৷ কাইটিন স্তরের গঠনে তথাকথিত প্রতিরোধী প্রোটিনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে৷ প্রয়োজনীয় উপকরণ দিয়ে বাইরে এক অক্ষত খোলস তৈরি করে সেটি৷ এই প্রোটিনের অভাব ঘটলে কাইটিন স্তরে ফাটল দেখা যায়৷ ড. মাটিয়াস বেয়ার বলেন, ‘‘প্রোটিন না থাকলে বিভিন্ন কাইটিন স্তরগুলির মধ্যে আর বাঁধন থাকে না৷ কিউটিকুলাও তৈরি হয় না৷ সেটা ভেঙে পড়লে সুরক্ষাও লোপ পায়৷
প্রাপ্তবয়স্ক পোকা এবং লার্ভা বা শূককীট – দুইয়ের ক্ষেত্রেই এটি প্রযোজ্য৷ কারণ লার্ভারও কাইটিন স্তর থাকে৷ কাইটিন স্তর তৈরির কাজে লার্ভার প্রতিরোধী প্রোটিন না থাকলে সেই পোকা ছোটই থেকে যায়৷ বিজ্ঞানীরা তাদের ‘মিউট্যান্ট' বলছেন৷ তাদের সেই জিনের অভাব রয়েছে, যা সাধারণত প্রতিরোধী প্রোটিন তৈরির নির্দেশিকা স্থির করে৷ বন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইয়ানিনা ইয়াসমিন পেশ বলেন, ‘‘সবুজ আলোর অভাব দেখে মিউট্যান্টদের চেনা যায়৷ যেমন এটি একটি মিউট্যান্ট৷ দেখা যাচ্ছে, এটি বিশেষ নড়াচড়াও করছে না৷ একই বয়স হওয়া সত্ত্বেও অন্য লার্ভাগুলি উজ্জ্বল সবুজ, সেগুলি খুবই দ্রুত এবং আকারেও অনেক বড়৷ ফলে মিউট্যান্টদের বিকাশে ত্রুটি বোঝা যায়৷''
এই লার্ভা ছুঁলেই ভেঙে যায়৷ তখন তাদের ত্রুটি চেনা যায়৷ কারণ সুরক্ষার স্তর আর কাজ করে না৷ প্রকৃতির মধ্যে পোকার এই লার্ভা উড়তে অথবা মশা হিসেবে বেড়ে উঠতে পারবে না৷
মাইক্রোস্কোপের নীচে কোনো সুস্থ লার্ভার বাইরের কাইটিন স্তর বা কিউটিকুলা মসৃণ ও অক্ষত দেখায়৷ কিন্তু বিজ্ঞানীরা বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করেছেন যে, অসুস্থ মিউট্যান্টের কাইটিন স্তর বিকৃত ও তার বেশ কয়েকটি ভাঁজ রয়েছে৷ এর পরিণতির গুরুত্ব রয়েছে৷ ড. মাটিয়াস বেয়ার বলেন, ‘‘এই কিউটিকুলা ধ্বংস হলে তাদের শরীরের তরল বেরিয়ে আসে৷ সেটি লার্ভা ফাটিয়ে দেয়৷ অথবা মাইক্রো অরগ্যানিজম ঢুকে পড়ে তাকে সংক্রমিত করতে পারে৷ তখন তার মৃত্যু হয়৷
বন শহরে বিজ্ঞানীরা ‘ফ্রুট ফ্লাই' নিয়ে গবেষণা করছেন৷ তাদের অজ্ঞান করে প্রজননের স্বার্থে পুরুষ ও নারীদের আলাদা করা হয়৷ এই মাছি বাকি পোকাদের মতোই তাদের কাইটিন বর্ম গড়ে তোলে৷ ফলে তাদের ক্ষেত্রে চালানো পরীক্ষার ফলাফল মশা বা অন্যান্য ক্ষতিকারক পোকার উপরও প্রয়োগ করা সম্ভব৷ ড. বেয়ার বলেন, ‘‘এই পদ্ধতির মূলমন্ত্র হলো, আমরা প্রাপ্তবয়স্ক পোকাদের ধ্বংস করছি না, যারা চারিদিকে উড়ে বেড়ায় ও ক্ষতি করে৷ আমরা লার্ভা নির্মূল করছি, যাতে তারা বেড়ে না উঠতে পারে৷ ফলে পরবর্তী প্রজন্ম গড়ে উঠতে পারবে না৷''
গবেষকরা এবার এমন অ্যাক্টিভ এজেন্ট খুঁজছেন, যা প্রতিরোধী প্রোটিন নির্মূল করে দেবে৷ প্রত্যেক প্রজাতির পোকার প্রোটিন আলাদা হওয়ায় সুনির্দিষ্টভাবে একটি প্রজাতির মোকাবিলা করা সম্ভব৷ যেমন ম্যালেরিয়া ও ডেঙ্গুবাহী মশা৷