ময়নামতির প্রত্ন নিদর্শন
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা থেকে প্রায় ৯৫ কিলোমিটার এবং কুমিল্লা শহর থেকে ৯ কিলোমিটার পশ্চিমে ময়নামতিতে আছে বেশ কিছু মূল্যবান প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন৷ সেখানকার শালবন বিহারসহ অন্যান্য নিদর্শনগুলো দেখুন ছবিঘরে৷
প্রাচীন বৌদ্ধ বিহার
কুমিল্লার ময়নামতিতে লমাই পাহাড়ের মাঝখানে অবস্থিত শালবন বিহার৷ প্রত্নতাত্ত্বিক খননের ফলে এখানে একটি বৌদ্ধবিহারের সন্ধান পাওয়া যায়৷ এ বিহারের আয়তন ১৬৭ বর্গমিটার৷ বিশাল এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এ বিহারে মোট ১৫৫টি কক্ষ রয়েছে৷
শালবন বিহার
ময়নামতিতে খনন করে পাওয়া বিহারটি দেব বংশের চতুর্থ রাজা ভবদেব কর্তৃক আনুমানিক সপ্তম শতাব্দীর শেষে কিংবা অষ্টম শতাব্দীর শুরুর দিকে নির্মিত হয়েছে বলে ধারণা করা হয়৷ এর মূল নাম ভবদেব মহা বিহার৷ একসময়ে এ জায়গাটি শালবন রাজার বাড়ি নামে পরিচিত ছিল বলে খননের পরে এর নাম হয় শালবন বিহার৷
সময়সূচি
শালবন বিহার সপ্তাহের সবদিনই খোলা থাকে৷ শীতকালে (অক্টোবর থেকে মার্চ) এটি সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা৷ আর গ্রীষ্মকালে (এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত পর্যটকদের জন্য উম্মুক্ত৷ দুপুরে এক ঘণ্টার বিরতি থাকে৷
ময়নামতি জাদুঘর
লালমাই ময়নামতি অঞ্চলে বিভিন্ন সময় প্রত্নতাত্ত্বিক খননে প্রাপ্ত বিভিন্ন নিদর্শন সংরক্ষিত আছে এ জাদুঘরে৷ এর সময়সূচি শালবন বিহারের মতোই৷ তবে সপ্তাহের রোববারসহ অন্যান্য সরকারি ছুটির দিনে জাদুঘরটি বন্ধ থাকে৷
ইটাখোলা মুড়া
শালবন বিহারের কাছেই আরেকটি উল্লেখযোগ্য প্রত্নস্থল ইটাখোলা মুড়া৷ স্থানীয় লোকজন বহুদিন পুরনো ইটের ভাণ্ডার হিসেবে ব্যবহার করার কারণে এর এই নামকরণ৷ বেশ কয়েকবার প্রত্নতাত্ত্বিক খননের ফলে এখানে দু’টি বৌদ্ধ বিহারের সন্ধান পাোয়া গেছে৷
ইটাখোলা মুড়ার কিছু তথ্য
খননের সময় এ জায়গা থেকে সোনার তিনটি গুলি, একটি তাম্র লিপি ইত্যাদি পাওয়া যায়৷ ধারণা করা হয়, এ স্থাপনাগুলো সপ্তম কিংবা অষ্টম শতকে নির্মিত৷ এ জায়গাটি অরক্ষিত এবং খোলা বলে দিনের যে কোন সময়েই প্রবেশ করা যায়৷
রূপভান মুড়া
ইটাখোলা মুড়ার সামান্য পশ্চিমে সড়কের উলটোদিকেই দিকেই রূপভান মুড়া৷ প্রত্নতাত্ত্বিক খননের ফলে এখানে একটি বিহার, একটি মন্দির, একটি ছোট ঢিবি ও একটি উচ্চ মঞ্চের স্থাপত্যিক নিদর্শন পাওয়া যায়৷ ময়নামতি এলাকার অন্যান্য বিহারের মতো এখানকার মন্দিরটি ভেতরে না হয়ে বাইরে স্থাপিত৷
রূপভান মুড়ার কিছু তথ্য
এ জায়গাটি খননের ফলে একটি গুপ্তানুকৃতির স্বর্ণ মুদ্রা, খ্রিষ্টীয় সপ্তম শতাব্দীর খড়গরাজা বলভট্টের মিশ্রিত ধাতুর চারটি মুদ্রা, তিনটি রৌপ্য মুদ্রা, গুপ্ত পরবর্তী রীতিতে তৈরি একটি বেলে পাথরের বৃহৎ বৌদ্ধ মূর্তি, প্রচুর পোড়া মাটির ফলক ইত্যাদি আবিষ্কৃত হয়েছে৷ প্রত্নসম্পদ বিচার করে ধারণা করা হয়, রূপভান মুড়া অষ্টম শতাব্দীর আগেই নির্মিত হয়েছে৷ এ জায়গাটিও সবসময়ই ঘুরে দেখা যায়৷