যক্ষ্মা প্রতিরোধে ইঁদুরের সহায়তা
৭ এপ্রিল ২০১৪ক্রিস্টফ কক্স বিশেষ ধরনের সহকর্মীর সঙ্গে কাজ করেন: তাঁর ওয়েবসাইটে এই অতিকায় সহকর্মীদের কাঁধে নিয়ে তোলা ছবি দেখা যায়৷ এগুলো হলো এক জাতীয় ধেড়ে ইঁদুর৷ আফ্রিকায় তাদের আদিবাস৷
বেলজিয়ামের একটি বেসামরিক সংস্থা ‘আপোপো'-র ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টফ কক্স৷ সংস্থাটির পক্ষ থেকে তানজানিয়ার মোরোগোরো-তে একটি গবেষণা প্রকল্প চালাচ্ছেন তিনি৷ গবেষকরা রোগ দমনে ইঁদুরকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছেন৷ এ ক্ষেত্রে সাফল্যও দেখা যাচ্ছে৷
বিশেষ করে তানজানিয়া ও মোজাম্বিকে যক্ষ্মা রোগ নির্ণয়ে এই প্রাণী সাহায্য করতে পারবে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷ এদের ঘ্রাণেন্দ্রিয় অত্যন্ত শক্তিশালী৷ ‘‘ইঁদুররা নিশাচর৷ প্রায় অন্ধ৷ ঘ্রাণশক্তি তাদের একমাত্র ভরসা৷ তারা খাদ্যদ্রব্য মাটির নীচে গর্ত খুঁড়ে জমিয়ে রাখে৷ পরে আবার শুঁকে শুঁকে তা খুঁজে বের করে৷'' বলেন কক্স৷
বহু মানুষ যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর প্রায় নয় মিলিয়ন বা নব্বই লক্ষ মানুষ যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গ্লোবাল টিবি প্রোগ্রামের মারিও রাভিলিয়োনে বলেন, এইডস-এ আক্রান্ত হয়ে প্রতি বছর মারা যায় ১.৬ মিলিয়ন মানুষ৷ আর টিবি রোগে মারা যায় ১.৩ মিলিয়ন লোক৷ তানজানিয়ায় প্রতি বছর ৭৯,০০০ বার যক্ষ্মার সংক্রমণ হয়ে থাকে৷
একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, যা ধারণা করা হয়েছিল, সারা বিশ্বে তার চেয়ে অনেক বেশি সংখ্যক শিশু যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়৷ প্রতি বছর ১৫ বছরের নীচে ৯৯৯,৮০০ শিশু টিবির কবলে পড়ে৷
‘আপোপো'-র টিম ইঁদুরগুলিকে টিবি রোগী ও সুস্থ মানুষের লালা শুঁকতে দেন৷ তারা দ্রুতই দুটির মধ্যে পার্থক্য করতে শেখে৷
যাত্রা শুরু করে
২০০৩ সালে একটি প্রতিযোগিতায় জয়ী হয়ে যাত্রা শুরু করে এই গবেষণা প্রকল্প৷ এরপর তানজানিয়ার সোকোনেই বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মীরা গবেষণা কাজটিকে এগিয়ে নিয়ে যান৷ বছর পাঁচেক পর তাঁরা প্রমাণ করতে সক্ষম হন, যে ইঁদুররা যক্ষ্মারোগ শনাক্ত করতে পারে৷ এই কাজটি তারা মানুষের চেয়ে অনেক দ্রুতগতিতে সম্পন্ন করতে পারে৷ ল্যাবরেটরিতে একজন টেকনিশিয়ানের পক্ষে কাজটি ক্লান্তিকর ও সময়সাপেক্ষ৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, একজনের দিনে ২৫টির বেশি নমুনা পরীক্ষা করা উচিত নয়৷ তবে এই কাজটি সাত মিনিটেই করতে পারে একটি ইঁদুর৷
এছাড়া মানুষের চোখে এই রোগজীবাণু দেখাও সহজ নয়৷ ‘মাইক্রোস্কোপের সাহায্যে প্রচলিত পদ্ধতিতে মাত্র ৫০ শতাংশ জীবাণু ধরা পড়ে৷'' বাকি জীবাণুগুলি চেনার জন্য কাজে লাগতে পারে মূষিকরা৷
আপোপো তানজানিয়ার বৃহত্তম শহর দার এস সালাম-এর ২১টি হাসপাতালের সঙ্গে সহযোগিতামূলক কাজ করছে৷ এই সব হাসপাতাল নিজেরাই টিবি-শনাক্তকরণের পরীক্ষা করে থাকে৷ যেসব নমুনা নেতিবাচক হয়, সেগুলি তারা মোরোগোরোতে পাঠিয়ে দেয়৷
দ্বিতীয় পরীক্ষায় ইঁদুরের সাহায্য
আর দ্বিতীয় পরীক্ষায় মূষিকদের সাহায্য নেওয়া হয়৷ সেখানে ইতিবাচক ফলাফল পাওয়া গেলে রোগীকে খুঁজে বের করার জন্য হাসপাতালগুলিকে জানানো হয়৷ ক্রিস্টফ কক্স বলেন, ‘‘আক্রান্তরা যদি তাঁদের অসুস্থতার কথা না জানেন, তাহলে তারা বাড়িতে ফিরে গিয়ে পরিবারের লোকজন ও বন্ধুবান্ধবকে সংক্রমিত করতে পারেন৷''
যক্ষ্মা রোগটিকে দ্রুত শনাক্ত করা অত্যন্ত জরুরি৷ বলেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রাভিলিয়োনে৷ ‘‘তবে পরীক্ষাটা সহজ হতে হবে৷ এছাড়া স্থানীয় পর্যায়েই এটি করতে হবে৷'' গুরুত্বপূর্ণ হলো গ্রামাঞ্চলের যত বেশি সম্ভব মানুষকে এর আওতায় আনতে হবে৷
তবে ইঁদুর দিয়ে পরীক্ষা করার ব্যাপারে সংশয়ী তিনি৷ এটি এখনও উদ্ভাবনের পর্যায়ে রয়েছে৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘আমার প্রশ্ন এই পরীক্ষা কি সেখানেও করা সম্ভব, যেখানে এর প্রয়োজন খুব বেশি, যেমন প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলিতে!''
দত্তক নেওয়া যেতে পারে
মোরোগোরোতে অবশ্য গবেষকরা তাঁদের এই প্রচেষ্টায় সন্তুষ্ট৷ ‘‘অতিকায় ধেড়ে ইঁদুরগুলি পারিপার্শ্বিকতার সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারে সহজেই, কষ্টসহিষ্ণু ও লালনপালনে খরচ কম৷ সংস্থার ওয়েবসাইটে এইভাবেই প্রচার করা হয়৷ তবে একটি ইঁদুরকে প্রশিক্ষণ দিতে কম পক্ষে নয় মাস লাগে৷ আপোপো তাই ইঁদুরের খরচ চালানোর জন্য অভিনব এক মডেল তৈরি করেছে: এই প্রকল্পকে সহায়তা দিতে হলে প্রতীকী অর্থে একটি ইঁদুর ‘দত্তক' নিতে পারে কেউ৷ পৃষ্ঠপোষক প্রাণীটির প্রশিক্ষণের খরচ বহন করেন৷ সফল হলে তাঁকে জানানো হয়৷