যক্ষ্মা রোগ নির্ণয়ে ‘ইলেক্ট্রোনিক নোজ'
৮ নভেম্বর ২০১১‘মাইকোব্যাক্টেরিয়াম টিউবারকিউলোসিস' নামের এক জীবাণুঘটিত রোগ যক্ষ্মা৷ বিশেষজ্ঞরা জানান, আলো-বাতাসহীন অস্বাস্থ্যকর বদ্ধ পরিবেশে এই ‘মাইকোব্যাক্টেরিয়াম' দীর্ঘ সময় বেঁচে থাকে৷ তাই যতো তাড়াতাড়ি এই রোগ নির্ণয় করা যায় – ততোই মঙ্গল৷ আর ঠিক সেই কাজটা করতেই এবার এগিয়ে এসেছেন ভারতের বিজ্ঞানীরা৷
শোনা যাচ্ছে, খুব শীঘ্রই একটি ‘ইলেক্ট্রোনিক নোজ' বা ‘ই-নোজ' তৈরি করতে সক্ষম হবেন তাঁরা৷ এই ‘ই-নোজ' বা ‘ইলেকট্রনিক নাক'-এর কাজ হবে নিশ্বাস থেকে যক্ষ্মার লক্ষণ দেখে রোগনির্ণয় করা৷ বলাই বাহুল্য, এ কাজ করতে পারলে বিশ্বের হাজার হাজার মানুষ রক্ষা পাবে এই মারণব্যাধির হাত থেকে৷
এতোদিন পর্যন্ত যক্ষ্মা রোগ নির্ণয়ের অন্যতম পদ্ধতি ছিলো কফ পরীক্ষা এবং বুকের এক্স-রে করা৷ এছাড়া, দীর্ঘদিন ধরে কাশি, কাশির সঙ্গে থুতুতে রক্ত, জ্বর, ওজন কমে যাওয়া, বুকে ব্যথা, দুর্বলতা এবং খিদে না পাওয়াকে এ রোগের প্রধান লক্ষণ বলে ধরা হতো৷ কিন্তু এবার, এই ‘ই-নোজ'-এর মাধ্যমে রোগটি ছড়িয়ে পড়ার অনেক আগেই সনাক্ত করা সম্ভব হবে৷ সম্ভব হবে সময় থাকতে তার চিকিৎসা করা৷
‘ই-নোজ' তৈরি করতে ভারতের ‘ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এবং বাওটেকনোলজি'-র সঙ্গে হাত মিলিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যের ‘নেক্সট জেনারেশন টেকনোলজি' নামের প্রতিষ্ঠান৷ নতুন দিল্লির গবেষক রঞ্জন নন্দার কথায়, ‘‘আশা করছি, ২০১৩ সালের মধ্যেই আমরা ‘ই-নোজ'-এর কাজ শেষ করতে পারবো৷'' তিনি জানান, ‘‘এই যন্ত্র উদ্ভাবন করাই শুধু আমাদের উদ্দেশ্য নয়, ‘ই-নোজ'-কে দেশের প্রতিটি কোণে পৌঁছে দিতে চাই আমরা৷ যাতে হতদরিদ্ররাও এর সুফল পেতে পারে৷''
এছাড়া, ভারতের বিদ্যুৎ সমস্যার কথা চিন্তা করে এই ‘ইলেকট্রনিক নাক'কে ব্যাটারি দিয়ে চালানোর ব্যবস্থা করে হচ্ছে৷ এটা ব্যাবহার করার নিয়মও হবে খুব সহজ৷ আর দাম পড়বে ২০ থেকে ৩০ মার্কিন ডলারের মতো৷
দুঃখের বিষয়, যথেষ্ট চেষ্টা সত্ত্বেও যক্ষ্মা রোগ এখনো পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেব অনুযায়ী, এখনও প্রতিবছর বিশ্বের প্রায় ১.৭ মিলিয়ন মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছে৷ মৃত্যুবরণ করছে অন্তত চার লক্ষ মানুষ৷ উপমহাদেশে মূলত দরিদ্র জনসাধারণই এ রোগে বেশি আক্রান্ত৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে বিশ্বে টিবি রোগের সংক্রমণ ভারতেই সবচেয়ে বেশি৷
প্রসঙ্গত, যক্ষ্মা সাধারণত ফুসফুসে দেখা গেলেও, এ রোগ মানবদেহের অন্যান্য অঙ্গেও হতে পারে (ব্যতিক্রম হল হৃৎপিণ্ড, অগ্নাশয়, থাইরয়ড গ্রন্থি)৷ তাই দ্রুত রোগ নির্ণয় স্বস্তির নিশ্বাস বয়ে আনতে পারে অনেকের জীবনেই৷
প্রতিবেদন: দেবারতি গুহ
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক