যাদবপুরে পড়ুয়াদের প্রতি ক্ষোভে অনির্দিষ্ট বিক্ষোভে উপাচার্য
১২ অক্টোবর ২০২৩অতীতে যাদবপুর-সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীদের অবস্থান-বিক্ষোভে বসতে দেখা গিয়েছে। অতি সম্প্রতি ব়্যাগিংয়ের জেরে হোস্টেলের এক পড়ুয়ার মৃত্যু ঘিরে উত্তাল হয়েছিল যাদবপুরের ক্যাম্পাস।
সেই চেনা ছবি বদলে দিলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্বর্তী উপাচার্য বুদ্ধদেব সাউ। সহ উপাচার্য, রেজিস্ট্রার, ডিন অফ সায়েন্স সহ অন্যান্য আধিকারিকদের সঙ্গে নিয়ে বুধবার রাত ১১টা থেকে ক্যাম্পাসে, অরবিন্দ ভবনের গাড়ি বারান্দায় ধর্নায় বসেছেন তিনি।
সভা ঘিরে বিতণ্ডা
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে খবর, গত ২৬ সেপ্টেম্বর প্রায় ১২ ঘণ্টা ধরে চলে ইসি বৈঠক। আমীমাংসিত ভাবে শেষ হয় সেই আলোচনা। বুধবার ফের নীতি নির্ধারক সংস্থা ইসি-র বৈঠক ডাকা হয়। বৈঠকের আলোচ্য বিষয় মনঃপুত হয়নি পড়ুয়াদের একাংশের। তুমুল স্লোগান দেন ছাত্ররা।
এই পরিস্থিতিতে সভার কাজ ভেস্তে যায়। বিক্ষোভকারী ছাত্রছাত্রীদের হাতে উপাচার্য-সহ কাউন্সিলের অন্য সদস্যদের ‘হেনস্থা', ‘অপমানিত' হতে হয়েছে বলে অভিযোগ। টানা প্রায় পাঁচ ঘণ্টা ধরে এই পরিস্থিতি চলে।
বুদ্ধদেব বলেছেন, "ইসি বৈঠক ঠিকভাবে করতে দেওয়া হচ্ছে না। এটা এক ধরনের ব়্যাগিং। পড়ুয়ারা কতগুলো দাবি নিয়ে এসেছিল। তাদের বক্তব্য সেই দাবির সমাধান এখনই করতে হবে। আমরা প্রথম তাদের ঢুকতে দিইনি। তারপর তারা একপ্রকার জোর করেই বৈঠকে ঢোকে।"
অবস্থানে রাতভর ছিলেন যাদবপুরের ইংরেজির অধ্যাপক মনোজিৎ মণ্ডল। তিনি বলেন, "এক ছাত্রের দুর্ভাগ্যজনক মৃত্যু হয়েছে। আমরা তার সুবিচার করতে পারছি না নানা বাধায়। উল্টে আমাদের সম্মান ধুলোয় মিশিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এর প্রতিবাদে অবস্থান বিক্ষোভ ছাড়া আর উপায় ছিল না।"
পড়ুয়াদের বক্তব্য
বিক্ষোভকারী ছাত্ররা উপাচার্যের বক্তব্য খারিজ করে দিয়েছেন। তাদের পাল্টা দাবি, ছাত্র সংক্রান্ত কোনো কমিটি হলে সেখানে হোস্টেলের প্রতিনিধি রাখতে হবে। হোস্টেলের ১৫টি ব্লকের প্রতিটি থেকে একজন করে প্রতিনিধি চাই। কর্তৃপক্ষ তা মানতে চাইছেন না।
প্রথম বর্ষের এক পড়ুয়া হোস্টেলের বারান্দা থেকে পড়ে মারা যাওয়ার পর এ নিয়ে তুমুল বিতণ্ডা হয়। ইউজিসি-র নির্দেশ অনুযায়ী কেন প্রথম বর্ষের পড়ুয়াদের আলাদা হোস্টেলে রাখা হয়নি, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
এরই মধ্যে আচার্য তথা রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস অন্তর্বর্তী উপাচার্য নিয়োগ করেন। পড়ুয়াদের অভিযোগ, বুদ্ধদেব সাউ তাদের কথা শোনার সময় দেন না। তিনি ক্যাম্পাসে একাধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে চান।
অনির্দিষ্ট 'সত্যাগ্রহ'
এই টানাপোড়নের মধ্যে আজ, বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত অবস্থান বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছেন উপাচার্য ও কাউন্সিলের সব সদস্য। পড়ুয়ারা ক্ষমা না চাওয়া পর্যন্ত তারা সত্যাগ্রহ চালিয়ে যাবেন। এ দিন সেখানে বসে ফাইলে সই করেন উপাচার্য ও ডিন। কিন্তু পড়ুয়ারা ক্ষমা চাইবেন, এমন কোনো ইঙ্গিত এখনো মেলেনি।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাজে অভিজ্ঞ, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক রেজিস্ট্রার রাজাগোপাল ধর চক্রবর্তী বলেন, "বৈঠকে ঢুকে ছাত্ররা অসম্মানজনক কথা বললে সেটা নিন্দনীয়। কিন্তু এ কাজের জন্য ওই ছাত্রদের শাস্তি দেয়ার কাঠামো বা সাহস কর্তৃপক্ষের নেই। তাই উপাচার্য ধর্নায় বসেছেন, এটা একেবারে হাস্যকর। এতে কোনো বার্তা দেয়া যাবে না।"
এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রী, অধ্যাপিকা মীরাতুন নাহার বলেন, "আমরা যখন পড়েছি, পড়িয়েছি, তখন এ ধরনের ঘটনা কল্পনার অতীত ছিল। এ জন্য শুধু ছাত্রদের দায়ী করলে হবে না। কর্তৃপক্ষ, পড়ুয়া, প্রশাসন সকলকেই দায় নিতে হবে। ধর্নায় বসা কোনো পন্থা নয়। বরং দেখতে হবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কোথায় ত্রুটি আছে। এ সবের মধ্যে রাজনীতি ঢুকে পড়েছে, এটাই দুর্ভাগ্যের।