যানজট নিয়ে বিপাকে চীন
৭ আগস্ট ২০০৮বেইজিংয়ের রাস্তাতে প্রতিদিন ৩০ লক্ষ গাড়ী চলাচল করে, তার ওপর রয়েছে হাজার হাজার বাস, ট্রাক, মটর সাইকেল ইত্যাদি৷ নিত্যকার এই যানজটকে কিছুতেই যেন আয়ত্তে আনা যাচ্ছে না৷
তবে বেজিং কর্তৃপক্ষ হাত পা গুটিয়ে বসে নেই৷ তারা চেষ্টা করছেন এই বিশাল সমস্যার কিছুটা অন্তত সুরাহা করতে৷ বেইজিংয়ের যান চলাচল কেন্দ্রের একটি সুসজ্জিত কক্ষে বিরাট একটি পর্দায় দেখানো হচ্ছে একটি সরকারী বিজ্ঞাপন চিত্র৷ মনিটরের বিশালত্ব চোখে পড়ার মত৷ দেখানো হচ্ছে কি করে দৈনন্দিন যান বাহনের সীমাহীন বিশৃঙ্খলা আয়ত্তে আনতে হয় কর্মীদের৷ বিশেষ করে অলিম্পিক খেলার সময় অবস্থাটা যখন চরমে উঠবে৷
বেইজিংয়ের প্রধান সড়কটি সব সময় ভিডিও ক্যামেরা দিয়ে নিয়ন্ত্রন করা হচ্ছে৷ দুর্ঘটনা বা অন্য কোনো সমস্যা হলে এলার্ম বেজে ওঠে এবং পুলিশ সাথে সাথে এসে অবস্থা নিয়ন্ত্রনে আনতে পারে৷
তবে সব কিছু সহজ মনে হলেও বাস্তবে কিন্তু অবস্থাটা একেবারে ভিন্ন রকম৷ বেজিংয়ের রাস্তার যানজট ক্রমেই যেন অবনতির দিকে যাচ্ছে৷ ১ কোটি ৭০ লক্ষ মানুষের বাস এই মহানগরীতে এবং প্রতিদিন ১ হাজার গাড়ী রেজিস্ট্রি করা হচ্ছে৷ ফলে অবস্থাটা যে ক্রমেই চরম হয়ে উঠছে সে বিষয়ে অবশ্য ছবিটিতে কোনো উচ্চ বাচ্য করা হয়নি৷
বেইজিং যান চলাচল কেন্দ্রের উপপরিচালক শ্যো ইয়ান বেশ গর্বের সঙ্গে আরো বিশাল একটি পর্দার দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন৷ এই মনিটরটি দৈর্ঘ্যে প্রস্থে একটি দালানের কয়েক তলার সমান হবে৷ এজন্য পুরো ছবিটা একবারে দেখা সম্ভব নয়৷ তাই পর্দাটিকে কয়কটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে৷ এক ভাগে দেখা যায় প্রধান প্রধান সড়কের ছবি অন্য দিকে রাস্তার ম্যাপ এবং প্রচুর ডায়াগ্রাম৷ এই বিশাল মনিটরটির সাহায্যে যান চলাচলের ওপর নজর রাখা হয়৷ ডান পাশের রঙ্গীন ম্যাপটিতে যান চলাচলের গতি পরিমাপ করা হয়৷
এই ম্যাপটিতে দেখা গেল প্রচুর লাল রং৷ এর অর্থ গাড়ীগুলোর গতি ঘন্টায় ০ থেকে ১০ কিলোমিটার৷ যানজটের কারণে এত ধীর গতিতেই চলে গাড়ীগুলো৷ আর এটাই হোল বেজিংয়ের রাস্তার বাস্তবতা৷ যান চলাচল কেন্দ্রের ইলেকট্রোনিক নিয়ন্ত্রন ব্যবস্থাও মূল সমস্যার তেমন কোনো সুরাহা করতে পারেনি৷ কেবল অলিম্পিক খেলার সময়টাতে মানুষের দুর্ভোগ কিছুটা হ্রাস করার চেষ্টা করা হচ্ছে মাত্র৷ গাড়ীর সংখ্যা অর্ধেক করা হবে বলে পরিকল্পনা করা হচ্ছে৷
যে সব গাড়ীর নম্বর জোড় সংখ্যার কখনও সেগুলোকে যেতে দেয়া হবে কখনও বা বেজোড় নম্বর অলা গাড়ীগুলোকে৷ তবে ভবিষ্যতে বেইজিং শহর গণ পরিবহণের দিকেই জোর দেবে বেশী৷ বিশেষ করে পাতাল রেলকে গুরুত্ব দেয়া হবে৷ বর্তমানে মাত্র ৪টি ভূগর্ভস্থ রেল চলাচল করছে৷ অলিম্পিক খেলার আগে আরো দুটী লাইন খোলার আপ্রাণ চেষ্টা করা হচ্ছে যাতে করে দর্শকরা সহজেই খেলার মাঠে পৌঁছাতে পারেন৷
তথাকথিত অলিম্পিক লাইন বলে একটি পাতাল ট্রেনকে চালানো হচ্ছে পরীক্ষামূলকভাবে৷ তাই কোনো যাত্রীকে এখনও দেখা যায়না এতে৷ প্লাটফর্মও জনমানবশুন্য৷ সাইন বোর্ড ঢেকে রাখা হয়েছে৷ এটি নির্মাণ করা হয়েছে ৩ বছর ধরে কিন্তু এখনও উদ্বোধন করা হয়নি লাইনটির৷ এই লাইনটি খোলা হলে অলিম্পিক খেলার বিভিন্ন স্টেডিয়ামে ২ থেকে ৩ লক্ষ দর্শক যাতায়াত করতে পারবেন৷
গণ পরিবহণকে বিস্তৃত করাই এখন চীন সরকারের সদূরপ্রসারী লক্ষ্য৷ তাই গোটা বেজিং শহরে যাতায়াত করার জন্য আগের চেয়ে ভাড়া কমিয়ে ২০ সেন্টের সমমূল্য করা হয়ছে৷ গত বছরের অক্টবর মাসে এই ব্যবস্থা নেয়ার পর থেকে যাত্রী সংখ্যা ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে৷
রাস্তার যানজট কমাতে হলে যে রেল গাড়ীর দিকে ঝুঁকতে হবে, এই বাস্তবতাটা বেশ পরেই বুঝতে পেরেছে চীন সরকার৷ শহরের কেন্দ্রেও বাস, ট্রাম চলাচলের কোনো সুব্যবস্থা নেই৷ সংখ্যাও খুব কম৷ আর একারণেই ব্যক্তিগত গাড়ী, ট্যাক্সি, ট্রাক ইত্যাদির এত সংখ্যাধিক্য৷ নিজস্ব একটা গাড়ী থাকা এখনও সমাজে বিশেষ মর্যাদা বয়ে আনে৷ সেজন্য যানজটের তোয়াক্কা করেননা অনেকেই৷ আসলে সরকারী প্রচেষ্টার সাথে মানুষের চেতনায়ও পরিবর্তন আনতে হবে৷ কেবল তাহলেই যানজটের অপরিমিত ভার থেকে চীনের সড়কগুলো কিছুটা মুক্ত হতে পারবে৷