মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৩জার্মানি সফরে এসে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রী জন কেরিও বলেছেন, মার্কিন সরকার চায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিটা হয়ে যাক, তাতে দু পক্ষ খুব উপকৃত হবে এমন আশাই করছেন তাঁরা৷ যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রী জানান, এ চুক্তি সম্পাদনের ব্যাপারে বারাক ওবামাও খুব আগ্রহী৷ ওবামার আগ্রহের বিষয়টি এমনিতেও কারো অজানা নয়, স্টেট অফ দ্য ইউনিয়নের ভাষণে সে কথা কয়েকদিন আগে স্পষ্ট করেই বলেছেন তিনি৷ বলার কারণও আছে৷ দ্বিতীয় দফা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হবার জন্য নির্বাচনি লড়াইয়ে নেমে কম কটাক্ষ সইতে হয়নি তাঁকে৷
প্রতিপক্ষ দুটি বিষয়ের ওপর বেশি জোর দিয়েছে তখন৷ এক, অর্থনীতি, দুই, পররাষ্ট্র নীতি৷ বিশ্ব মন্দার ধকল সামলাতে অনেকাংশে ব্যর্থ – এই সমালোচনার জবাব দেয়ায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন জোটের দেশগুলোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য চুক্তির মধ্যে উজ্জ্বল আশার আলো দেখছে মার্কিন প্রশাসন৷ বার্লিনে জন কেরিও সম্ভাবনার দিকগুলোই তুলে ধরেছেন সবার সামনে, বলেছেন, ‘‘আমরা মনে করি, এ চুক্তি ইউরোপের অর্থনীতিকে আরো চাঙ্গা করতে পারে, আমাদের অর্থনীতিকে করতে পারে আরো বেশি শক্তিশালী এবং চাকরির সুযোগও বাড়াতে পারে যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি এবং ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলোতে৷'' সঙ্গে আরেকটা কথাও যোগ করেছেন, ‘‘ এ চুক্তির ফলে সবচেয়ে বড় সমন্বিত বাজারের দেখা পাবে বিশ্ব৷''
এত সম্ভাবনা যেখানে তার দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে রাখা কি সম্ভব? অর্থনীতিবিদ, রাজনীতিবিদ, শিল্প উদ্যোক্তা – সবাই তাকিয়ে আছেন এ চুক্তির দিকে৷ কবে চূড়ান্ত রূপ পাবে চুক্তিটি? এখনো সেভাবে দিন-ক্ষণ বলা সম্ভব নয়৷ তবে জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল এবং ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন চুক্তির পক্ষে সরাসরি বক্তব্য রাখায় ধারণা করা যায় শিগগিরই একটা কিছু হবে৷ গত গ্রীষ্মে একটি টাস্কফোর্স চুক্তির সুবিধা এবং সম্ভাবনার দিকগুলো তুলে ধরে একটি প্রতিবেদন পেশ করেছে৷ তাতে পথের কাঁটা কিছু থাকলেও একে একে সব সরে যাওয়ার কথা৷
তবে সম্ভাবনা যতই থাক, আশঙ্কাও যে উঁকি দিচ্ছেনা তা কিন্তু নয়৷ এমনিতেই যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস এবং ইউরোপীয় পার্লামেন্টের অনুমোদন না পেলে চুক্তি কার্যকর করা সম্ভব নয়৷ তার ওপর অবারিত সম্ভাবনার দ্বার খোলার শত শত আশার কথা শুনিয়েও শেষে কিছুই না হওয়ার দৃষ্টান্তও তো আছে৷ বেশি আগের কথা নয়, ২০০৮ সালেই নিষ্ফলা হয়েছিল দোহা ডেভেলপমেন্ট অ্যাজেন্ডা৷ ওয়াশিংটন তাই সময় নষ্ট না করে যত দ্রুত সম্ভব চুক্তি স্বাক্ষরের পক্ষে৷ বিশ্লেষকরা মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র এ চুক্তি নিয়ে দীর্ঘ আলোচনায় কিছুটা ক্লান্ত৷ তাই চুক্তি চূড়ান্ত করে সুফল তুলে নিতেই উদগ্রীব তাঁরা৷ দেখার বিষয়, এত আশা জাগানো যুক্তরাষ্ট্র- ইউরোপীয় ইউনিয়ন মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি শেষ পর্যন্ত আশঙ্কার ক্ষীণ কালো রেখাটিকেও মুছে দিতে পারে কিনা৷
মিশায়েল ক্নিগে/এসিবি/এসবি