ইউরোপে চাকরি
৪ মে ২০১২ইউরোপীয় ইউনিয়ন ২০০৯ সালেই একটি নিয়মাবলী সৃষ্টি করে, যার উদ্দেশ্য ছিল ইইউ বহির্ভূত দেশগুলি থেকে আগত বিশেষ যোগ্যতা সম্পন্ন কর্মীদের ইইউ দেশগুলির নাগরিকদের মতোই কাজ ও বসবাস করার সুযোগ দেওয়া – অথবা এক কথায়, সহজে ভিসা দেওয়া৷ ২০১১ সালের জুন মাসের মধ্যে জার্মানিতে সেই নিয়মাবলী চালু হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু অভিবাসনের মতো কণ্টকিত বিষয়ে জার্মান সরকার তাড়াহুড়ো করতে চাননি৷ কাজেই গত শুক্রবার, অর্থাৎ ২০১২ সালের ২৭শে এপ্রিল জার্মান সংসদে সেই ‘‘ব্লু কার্ড ইইউ'' আইন পাশ হল৷ তবে তার আগে সরকার জোট ও বিরোধীপক্ষের মধ্যে জোর বিতর্ক চলে৷
সরকার চাইছে, অভিবাসন যা'তে জার্মান শ্রম বাজারের কাজে লাগে, সে'ভাবে তা' নিয়ন্ত্রণ করতে৷ ভবিষ্যতে কলেজের ডিগ্রি থাকলে, কিংবা তার তুলনাযোগ্য পাঁচ বছরের পেশাগত অভিজ্ঞতা থাকলে ব্লু কার্ড পাওয়া যাবে৷ নতুন ভিসার দ্বিতীয় শর্ত হল, আবেদনকারীকে দেখাতে হবে যে, তার হাতে একটি নির্দিষ্ট পর্যায়ের বেতন সহ চাকুরির প্রস্তাব আছে৷ জার্মান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হান্স-পিটার ফ্রিডরিশ সংসদীয় বিতর্কে বলেন, ‘‘কেউ যদি বছরে ৪৫ হাজার ইউরো বেতনের প্রস্তাব পায়, তাহলে এ'টা স্পষ্ট যে, নিয়োগকারী সংস্থার তাকে প্রয়োজন; দ্বিতীয়ত, তার কাজ করবার দক্ষতা আছে, নয়তো তাকে এই চাকুরির প্রস্তাব দেওয়া হতো না৷''
যে সব পেশায় দক্ষ শ্রমিক-কর্মচারীর বিশেষ অভাব, সেখানে বছরে ৩৫ হাজার ইউরো মাইনে দেখাতে পারলেই চলবে৷ তার অর্থ কিন্তু এই নয় যে, এই ন্যূনতম মাইনেতেই ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ারদের জার্মানিতে আনার পথ খুলে দেওয়া হচ্ছে - বললেন ফ্রিডরিশ৷ বরং এ'টা হল সর্বনিম্ন বেতন৷ অপরদিকে বিরোধীরা এই নতুন নিয়মে সস্তায় বিদেশ থেকে দক্ষ শ্রমিক-কর্মচারী ভাড়া করার পন্থাই দেখছে৷ তাদের মতে ঐ পর্যায়ের কর্মীদের জন্য সর্বনিম্ন বেতন ৬৩ হাজার ইউরো হওয়া উচিত৷
নতুন ব্লু কার্ড প্রাপ্তির আর একটি শর্ত নিয়ে বিরোধীরা আরো বেশি উত্তেজিত৷ প্রথমত এই ভিসাও একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য, অর্থাৎ সীমিত৷ জার্মানিতে এসে কাজ খোঁজার জন্য ছ'মাস অবধি ভিসা দেওয়া হবে৷ পর্যাপ্ত মাইনের চাকুরি খুঁজে পেলে প্রাথমিকভাবে তিন বছরের ভিসা দেওয়া হবে৷ তার পরেও চাকুরি বজায় থাকলে স্থায়ীভাবে বসবাসের ভিসা পাওয়া যাবে৷ তবে স্বল্পসময়ের মধ্যে ভালোভাবে জার্মান শিখতে পারলে দু'বছর পরেই স্থায়ী ভিসা পাওয়া যাবে৷ সিডিইউ রাজনীতিক রাইনহার্ড গ্রিন্ডেল'এর মতে, ভাষা শেখার অর্থ, ‘‘যে আমাদের দেশের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব দেখাবে, যে নিজেই সমাজের অংশ হয়ে ওঠার জন্য সচেষ্ট হবে, সে আরো তাড়াতাড়ি স্থায়ী বসবাসের ভিসা পাবে - এ'টাই হল বিদেশি-বহিরাগতদের সমাজে অন্তর্ভুক্ত করার সুচতুর পন্থা৷''
বিরোধীদের বক্তব্য: তথ্য-প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের কাছে ইংরিজি হল তাদের কাজের ভাষা৷ জার্মান ভাষা জানে না বলে সে'ধরণের কর্মীদের বাদ দেওয়ার কোনো মানে হয় না৷ তাছাড়া এই নতুন নিয়মাবলী পাশ হবার আগে জার্মানিতে যে নিয়ম চালু ছিল, তা' অনুযায়ী উচ্চশিক্ষিত, দক্ষ কর্মীরা সরাসরি ভিসা পেতেন৷ এখন সকলকেই এই গোলকধাঁধায় পড়তে হবে, বলছেন বিরোধীরা৷ এবং নিজের ও পরিবারের জন্য অনিশ্চয়তার ঝুঁকি নিয়ে কেউ জার্মানিতে আসতে চাইবে কি?
একটা শেষ প্রশ্ন থেকে যায়৷ জার্মানিতে বিদেশি-বহিরাগতদের সাদর অভ্যর্থনার সংস্কৃতিটা এখনও গড়ে ওঠেনি৷ তাই সামাজিক গণতন্ত্রী সাংসদ ডানিয়েলা কলবে বলেছেন, ‘‘বহিরাগতদের এ'টা জানতে হবে, এবং এ'দেশে তাদের বাস্তব অভিজ্ঞতাও এই হতে হবে যে, জার্মান শিল্পসংস্থায়, সরকারি কার্যালয়ে কিংবা পথে-ঘাটে, সর্বত্রই তারা বাঞ্ছিত, স্বাগত ও আদরণীয়৷ জার্মানিতে সে মনোভাব সৃষ্টি হতে এখনও অনেক বাকি৷''
সংসদে দেড় ঘণ্টা বিতর্কের পর সরকার জোটের সাংসদদের ভোটে ব্লু কার্ড নিয়মাবলী পাশ হয়৷ সামাজিক গণতন্ত্রী ও সবুজরা ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকে৷ বামদল প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দেয়৷ অতঃপর সরকারের বক্তব্য হল, সরকারের কাজ ছিল বিদেশ থেকে সুশিক্ষিত কর্মীদের জার্মানিতে আসার, থাকার ও কাজ করার আইনগত কাঠামো তৈরি করে দেওয়া৷ সরকার তা করেছে৷ এবার জার্মান শিল্পসংস্থাদেরই সক্রিয় হতে হবে৷
প্রতিবেদন: সাবিনে কিনকার্জ/অরুণ শঙ্কর চৌধুরী
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন