যুক্তরাষ্ট্রে দর্শক ও বোলারদের মহানন্দের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ
যুক্তরাষ্ট্রে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ কেমন হচ্ছে? প্রায় প্রতি ম্যাচে রান কেন এত কম হচ্ছে? যুক্তরাষ্ট্রে কতটা সাড়া জাগিয়েছে এ আসর? সব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের নানা পেশার মানুষেরা৷
অ্যামেরিকানরাও এখন ক্রিকেট নিয়ে কথা বলছে: মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ, স্কুল শিক্ষক, নিউ ইয়র্ক
যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসীদের মধ্যে ক্রিকেট আগে থেকেই জনপ্রিয়৷ প্রতি বছরই দেখি নিউ ইয়র্কে গ্রীষ্মকালে ক্রিকেট টুর্নামেন্ট হয়৷ বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা থেকে আগত যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরা ক্রিকেট খেলে৷ যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্বকাপ হওয়ায় অ্যামেরিকানদের মধ্যেও বেশ আগ্রহ দেখেছি৷
যুক্তরাষ্ট্রের স্টেডিয়ামগুলোতে দর্শকদের ভিড় উপচে পড়েছে: হাবিবুল বাশার
আইপিএলে তো ২৫০ থেকে ২৬০-র বেশি রান দেখেছি৷ কিন্তু বিশ্বকাপে বেশি রান হচ্ছে না৷ তবে রান কম হলেও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হচ্ছে ম্যাচগুলো৷ একপেশে খেলা হচ্ছে না৷ ছোট রানের ম্যাচগুলোতেও উত্তেজনা থাকছে, যেটা দেখে অনেক আনন্দ পাওয়া যায়৷ যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত ম্যাচগুলো বেশি জমজমাট ছিল৷ স্টেডিয়ামগুলোতে দর্শকদের ভিড় উপচে পড়েছে৷ এই বিশ্বকাপের বড় সাফল্য হলো মাঠে দর্শকের উপস্থিতি৷
লো স্কোরিং ম্যাচ হওয়াতে আইসিসির সমালোচনা করছে মানুষ: রিয়াজুল ইসলাম, নিউ ইয়র্ক প্রবাসী বাংলাদেশি
অ্যামেরিকায় ক্রিকেটে নতুন৷ নিউ ইয়র্কে আদর্শ ক্রিকেট স্টেডিয়াম ছিল না৷ অ্যামেরিকান ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন চেষ্টা করেছে দ্রুততম সময়ে একটি স্টেডিয়াম বানাতে এবং বানিয়েছে৷ এই নাসাউ স্টেডিয়ামেই এক বছর পরে ম্যাচ হলে এত স্লো উইকেট থাকবে না৷ লো স্কোরিং ম্যাচ হওয়াতে আইসিসির সমালোচনা করছে মানুষ৷ দলগুলোও সমস্যায় পড়ছে৷ নতুন দেশে একটু আধটু সমস্যা হবেই, সেটা মেনেও নিতে হবে৷
লো স্কোরিং ম্যাচের বিষয়ে আইসিসির কোনো দোষ দেখি না: ফুয়াদ আজাদী, ক্রিকেটার, ফ্লরিডা
নিউ ইয়র্কের স্টেডিয়ামটি অস্থায়ী, এ কারণে ড্রপ ইন উইকেট বানাতে হয়েছে৷ ড্রপ ইন পিচ খুব বিপজ্জনক৷ স্লো, টার্ন এবং আনইভেন বাউন্স থাকে৷ তবে নাসাউ কাউন্ট স্টেডিয়ামের লো স্কোরিং ম্যাচ নিয়ে অনেক সমালোচনা হলেও সেখানে আইসিসির কোনো দোষ দেখি না৷ নতুন উইকেটে একটু সমস্যা হতেই পারে৷ একটা জায়গা থেকে তো শুরু করতে হবে৷
তিন মাস আগেও যুক্তরাষ্ট্রে ক্রিকেট নিয়ে এত ক্রেজ ছিল না: মোহাম্মদ খান, নিউ ইয়র্ক প্রবাসী বাংলাদেশি
তিন মাস আগেও ক্রিকেট নিয়ে এত ক্রেজ ছিল না অ্যামেরিকায়৷ এখন যে কোনো রেঁস্তোরায় গেলে দেখতে পাবেন ক্রিকেট নিয়ে আলোচনা হচ্ছে৷ বিশ্বকাপ দিয়ে ক্রিকেট একটা জায়গা করে নিয়েছে৷ নেটিভ অ্যামেরিকানরাও এখন ক্রিকেট নিয়ে কথা বলে৷ সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো যুক্তরাষ্ট্র ভালো খেলছে৷ পাকিস্তান ও ক্যানাডাকে হারিয়েছে৷
যুক্তরাষ্ট্র দল সফল হলে ক্রিকেট জনপ্রিয় হবে: অ্যান্থনি রে-ক্লাডস, যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক
ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা আছে৷ আমাদের এখানে বিশ্বকাপ ক্রিকেট হওয়াতে ভালো হয়েছে৷ বেইস বলের সঙ্গে ক্রিকেটের মিল আছে৷ অন্য খেলার মতো ক্রিকেটেও ভালো করবে অ্যামেরিকা৷ অ্যামেরিকায় ক্রিকেট সাফল্য পেলে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়বে, কারণ, অ্যামেরিকার বড় বাজার আছে৷
আমেরিকানদের কাছে ক্রিকেট বোরিং: ফারহানা আহমেদ, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশি
যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ ক্রিকেট কম বোঝে৷ ওয়ানডে ক্রিকেট লম্বা সময় ধরে হওয়ায় ‘বোরিং’ বলে৷ টি২০ বিশ্বকাপ হওয়াতে কিছুটা আগ্রহ দেখছি৷ নিউ ইয়র্ক, টেক্সাস, ফ্লোরিডার মতো বড় শহরগুলোতে বিশ্বকাপ হওয়াতে ইতিবাচক প্রভাব পাড়বে৷ যুক্তরাষ্ট্র ক্রিকেটে ভালো করলে খেলাটিতে বড় পরিবর্তন আসবে৷ এখানে ক্রিকেটের প্রসার ঘটলে বিশ্বের লাভ৷ তবে নাসাউ ভেন্যুতে খুব লো স্কোরিং ম্যাচ হচ্ছে৷
অ্যামেরিকানরা জানতে পারছে বাংলাদেশ ভালো ক্রিকেট খেলে: শামিহা জামান, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী, ফ্লরিডা
আমি ফ্লরিডা থেকে ক্রিকেট ম্যাচ দেখতে এসেছি৷ কারণ, উত্তর অ্যামেরিকায় খুব একটা ক্রিকেট টুর্নামেন্ট হয় না৷ বিশ্বকাপ হওয়াতে আমাদের জন্য খুব ভালো হয়েছে৷ সাধারণ অ্যামেরিকানরা জানতে পারছে বাংলাদেশ ভালো ক্রিকেট খেলে৷ বিশ্বকাপে কাজ করছে অনেক অ্যামেরিকান৷ ক্রিকেটের পরিচিতি বাড়বে৷
আইসিসি বিশ্বকাপের মধ্যদিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ক্রিকেটের ব্র্যান্ডিং করলো: বর্ষণ কবির, সাংবাদিক
বিশ্বকাপ যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসীদের মধ্যে, বিশেষ করে ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তান থেকে আগত অ্যামেরিকানদের মধ্যে সাড়া ফেলেছে৷ বাংলাদেশ থেকে অনেক ক্রিকেটার যুক্তরাষ্টে বসবাস শুরু করেছেন৷ তারা মাইনর লিগে খেলছেন, কোচিং করাচ্ছেন৷ আইসিসি বিশ্বকাপের মধ্যদিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ক্রিকেটের ব্র্যান্ডিং করলো৷
বিশেষজ্ঞরা বলছেন নাসাউ কাউন্টি স্টেডিয়াম টি-টোয়েন্টির উপযোগী না: রানা আব্বাস, সাংবাদিক
উইকেট নিয়ে অনেক সমালোচনা হয়েছে৷ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নাসাউ কাউন্টি স্টেডিয়াম টি-টোয়েন্টির উপযোগী না৷ আসলে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট একপেশে ব্যাটারদের গেম হয়ে গিয়েছিল৷ এই বিশ্বকাপ সেখানে বোলারদের মুখে হাসি ফুটিয়েছে স্লো উইকেট বানিয়ে৷ বোলারদের মুখে হাসিটা তো দেখতে পেলাম৷ অনেক নেতিবাচককের মধ্যে আমার কাছে এটা ইতিবাচক৷